নির্বাচনের আগে আতঙ্কে বাসাবাড়িছাড়া বিএনপি-জামায়াতের অনেকে এখনও ফেরেননি
সারওয়ার জাহান সুমন:: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় সিলেট বিভাগে ৩০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ২ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগর পুলিশের (এসএমপি) ৫টি থানায়ই ১৫টি, সিলেট জেলায় ১০টি, হবিগঞ্জে ৪টি ও মৌলভীবাজারে একটি মামলা হয়েছে।
জানা যায়, অধিকাংশ মামলার বাদী পুলিশ। কয়েকটি মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত নৌকার সমর্থকরা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আসামিদের মধ্যে সমর্থক থেকে শুরু করে হবিগঞ্জ-৩ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিকে গউছসহ সিনিয়র নেতারাও রয়েছেন। ফলে নির্বাচনের আগে মামলা-হামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে বাসাবাড়িছাড়া নেতাকর্মীরা এখনও রয়েছেন আত্মগোপনে। অনেকেই আবার জামিন নিতে উচ্চ আদালতে দৌড়াচ্ছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন বলেন, ভোটের দিন কোন এলাকায় কী ঘটেছিল, তা জানতে সিলেট বিভাগসহ সারা দেশের সব প্রার্থীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরপর কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনর্র্নিবাচনের দাবি বিএনপির।
তবে সিলেট রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি মো. কামরুল আহসান বলেন, আইনগতভাবেই প্রত্যেকটি মামলা হয়েছে, হয়রানির উদ্দেশ্যে নয়। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন সিলেট-১ আসনের বিভিন্ন কেন্দ্রে সহিংস ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে যেসব কেন্দ্রে পুলিশকে গুলি ছুড়তে হয়েছে এবং জানমালের ক্ষতি হয়েছে- এমন কেন্দ্র চিহ্নিত করে মামলা করা হয়েছে। মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় ৬টি মামলা করা হয়েছে। প্রত্যেক মামলায় গড়ে ৪০-৫০ জন করে আসামি করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা থানায় ৫টি মামলার প্রত্যেকটিতে ২৫-৩০ জন করে আসামি। নির্বাচনী সহিংসতায় এয়ারপোর্ট থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এতে শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। শাহপরান (র.) থানায় নির্বাচনের দিন পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মাত্র মামলা করেছে। এতে অর্ধশতাধিক বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানায় ১টি মামলায় ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। সবমিলিয়ে এসএমপির ৫টি থানায় প্রায় ১৫টি মামলা করা হয়েছে। এতে বিএনপি-জামায়াতের এক হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী ও সমর্থককে আসামি করা হয়েছে।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, নির্বাচনকে উপলক্ষ করে সিলেটের অনেক নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সে আতঙ্ক এখনও কাটেনি। শুধু যে রাজনীতি করেন এমন নয়, অনেক নেতাকর্মীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। কয়েকদিন ধরে তারা তাদের প্রতিষ্ঠানে আসতে পারছেন না। গ্রামের একেবারেই নিরীহ ধানের শীষের সমর্থকদেরও মামলার আসামি করে হয়রানি করা হচ্ছে। অনেক পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিকে আসামি করায় কষ্টে দিনাতিপাত করছেন অনেকে। তিনি এই হয়রানির তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানায় ১টি মামলায় ৪০ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। জকিগঞ্জ থানায় ২টি মামলায় ২৫ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। গোয়াইনঘাট থানায় কয়েকশ’ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ও সমর্থকের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা করা হয়েছে। জৈন্তাপুর থানায় ৬ জনের নামোল্লেখসহ অন্তত ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
হবিগঞ্জে ৪টি মামলায় প্রার্থীসহ ৭ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া এবং ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগে বিএনপির ৬ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পৃথক ২টি মামলা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে একটি মামলায় ইতিমধ্যে ২ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ কর্মী দাবি করে আরও দুই ব্যক্তি পৃথক দুটি মামলা করেন। উভয় মামলায় হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিকে গউছকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার তেতৈয়া গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বার তৈয়ব আলী বাদী হয়ে ১০৪ জনের বিরুদ্ধে এবং শহরের শায়েস্তানগর এলাকার মো. আশরাফ আহমেদ হারুন বাদী হয়ে ভোট কেন্দে সহিংসতার অভিযোগে ২২ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন। নির্বাচনী কাজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাধা প্রদান ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলায় জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি কোহিনুর আলমসহ বিএনপির ৫৩ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত প্রায় ২শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে আরও একটি মামলা করা হয়েছে। এতে ইউপি মেম্বার বাছিত মিয়াসহ ৯৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও প্রায় ৩শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সুনাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফলাফল ঘোষণার সময় রাজনগর থানার ওসি শ্যামল বণিকসহ পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সেলিম আহমদ বাদী হয়ে ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে রাজনগর থানায় এ মামলা করেন। মামলায় ৭-৮শ’ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।