• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

৪৩-এ পা বিএনপির, চলছে টিকে থাকার লড়াই

admin
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১, ২০২০
৪৩-এ পা বিএনপির, চলছে টিকে থাকার লড়াই

ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৭৮ সালের এই দিনে দলটির যাত্রা শুরু হয়। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতেগড়া দলটি এখন সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের মুক্তি পেয়েছেন। তার মুক্তির ৫ মাস গত হয়েছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই নতুন নির্বাচনের দাবি আদায় আর দল গোছানোর কঠিন চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে পথ হাঁটছে দলটি। একই সঙ্গে বিগত নির্বাচনের আগে গড়া নির্বাচনী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির পুরনো মিত্র ২০ দলের সঙ্গে রাজনৈতিক সমন্বয় অক্ষুণ্ন রেখে সামনে চলাকেও বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অঙ্গীকারের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মানবজমিনকে বলেন, এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য গণতন্ত্র উদ্ধার করা এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।

আর বর্তমান যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা, এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা হচ্ছে একটা এক নায়কতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী, ফ্যাসিবাদি রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এখানে যেহেতু জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বা গণতান্ত্রিক অধিকার নেই, সেই কারণেই এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগটা অনেক সীমিত হয়ে গেছে। সেজন্যই জনগণকে এখন আমাদের উদ্বুদ্ধ করে কাজের মধ্যে যেতে হবে।

দলের কাউন্সিল করার কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই মুহূর্তে কিছু ভাবছি না। এই করোনা পরিস্থিতি যাক তার পরে আমরা ভাববো।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমাদের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশকে বাঁচাতে হবে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। দেশের গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। আর এসব করার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, যিনি গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী তার পূর্ণ মুক্তির মাধ্যমে এই দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। এই সিনিয়র নেতা বলেন, গত নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে যে, আমরা আগে যেমন জনপ্রিয় ছিলাম তার চেয়ে এখন আরো বেশি জনপ্রিয়। যদি আমরা জনপ্রিয় দল না হই, যদি আওয়ামী লীগের কাছে আমাদের জনপ্রিয়তার খবর না যেতে থাকে, যদি মানুষ ভোট দেয়ার সুযোগ পায় তাহলে বিএনপি বিপুলভাবে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পাবে, এটা যদি তারা জেনে না থাকে তাহলে ভোটের আগের দিন রাতে ভোট ডাকাতি করলো কেন? তাই আমি বলি, আমরা কোনো জনপ্রিয়তা হারাইনি এবং আমাদের দলে কোনো সংকটও নেই।

করোনা মহামারির কারণে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রায় সকল কর্মসূচি ভার্চ্যুয়ালি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ৬টায় বিএনপি’র নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ১১টায় বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর মাজারে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সকাল সাড়ে এগারোটায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। দুপুর ১২টায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। বিএনপি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা বিকাল সাড়ে তিনটায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীগণ অংশগ্রহণ করবেন বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশের ইউনিটগুলোকে নিজ নিজ সুবিধানুযায়ী পহেলা সেপ্টেম্বর দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন এবং নিজেদের সুবিধাজনক সময় অনুযায়ী ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে কেন্দ্র থেকে।

১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় রাজধানীর রমনা রেস্তরাঁয় দলের প্রতিষ্ঠাতা সে সময়ের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ ছাড়াও প্রায় ২ ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যের নাম এবং ১৯শে সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর বিশ্বাস, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র (অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায় বিচারের অর্থে) এই ৪ মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটির লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্রায়ন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের মধ্যে স্বনির্ভরতার উত্থান ঘটানো। এগুলোর ভিত্তিতে জিয়াউর রহমান তার ১৯ দফা ঘোষণা করেন।

বিএনপি গঠন করার আগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে আরেকটি দল সে সময়ের উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠিত হয়েছিল। ২৮শে আগস্ট ১৯৭৮ সালে বিএনপি গঠন করার লক্ষ্যে জাগদলের বর্ধিত সভায় ওই জাগদল বিলুপ্ত ঘোষণা এবং এর অঙ্গ সংগঠনের সব সদস্য জিয়াউর রহমান ঘোষিত বিএনপিতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। গঠনের সময় থেকেই বিএনপি রাষ্ট্রপতি শাসন পদ্ধতির সরকার সমর্থন করে আসছিল। ১৯৮১ সালের ৩০মে চট্টগ্রামে বিদ্রোহী সেনাদের হাতে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিহত হলে সে সময়ের উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি অসুস্থ হলে ১৯৮৪ সালের ১০ই মে দলের চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী বেগম খালেদা জিয়া। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ৩৬ বছর ধরে তিনি দলটির হাল ধরে আছেন। প্রতিষ্ঠার পর দলটি ৪ দফা ক্ষমতায় ছিল। ২ দফা ছিল জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল।

উৎসঃ মানবজমিন