একুশে নিউজ ডেস্ক: সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পারাবত-১১ লঞ্চের কেবিনের যাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস লাবণীর হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিকেশন (পিবিআই)।
গ্রেফতার মনিরুজ্জামান চৌধুরী (৩৪) গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকার আব্দুস শহীদের ছেলে।
তিনি ঢাকার মীরপুর-১ এর দারুস সালাম প্রিন্সিপাল আবুল কালাম রোডের সরকারি কোয়ার্টার এলাকায় বসবাস করতেন।
তাকে সেখান থেকে বরিশাল জেলা পিবিআই সদস্যরা ঢাকা মেট্রো (উত্তর) পিবিআই সদস্যদের সহায়তায় গতরাতে গ্রেফতার করে।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশাল নগরের রুপাতলীস্থ উকিলবাড়ি সড়কের পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির।
তিনি জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা থেকে বরিশাল নদী বন্দরে আসা পারাবত-১১ লঞ্চের তৃতীয় তলার ৩৯১ নম্বর সিঙ্গেল কেবিন থেকে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লঞ্চের কেবিনবয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে ওই কেবিনে গিয়ে দরজা খোলা অবস্থায় অজ্ঞাত নারীর মরদেহ খাটের ওপর পড়ে থাকতে দেখতে পায়। তাৎক্ষণিক নৌ পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।
তারা মরদেহ উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
সুরতহাল ও অন্য আলামতের ভিত্তিতে বিষয়টি হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়ার পর তদন্তে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট।
পিবিআই তদন্তের প্রথমভাগেই অজ্ঞাত ওই নারীর পরিচয় জানতে পারে। জান্নাতুল ফেরদৌস লাবণী নামে ওই নারীর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙা থানার আদমপুর এলাকায়। তবে তিনি ঢাকার মিরপুরের পল্লবীতে বসবাস করতেন।
এদিকে, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা ওই নারীর সঙ্গে লঞ্চে আসা ব্যক্তির সন্ধানে নামে পিবিআই। এক পর্যায়ে শনাক্ত ব্যক্তিকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার ব্যক্তির সঙ্গে লঞ্চের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের ছবি মিলিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অপরদিকে, গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে লাবণীর ব্যবহৃত ওড়না, মোবাইলসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি মনিরুজ্জামানকে লঞ্চে যে শার্টটি পরা অবস্থায় দেখা গেছে, সেটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানান, তারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। লঞ্চযোগে রাতে বরিশাল যাওয়ার পথে কেবিনে তাদের ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে লাবণীকে হত্যা করেন মনিরুজ্জামান। পরে লঞ্চটি বরিশালে পৌঁছালে তিনি কৌশলে পালিয়ে বাসে করে ঢাকা চলে যান।
এদিকে, পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার মরিরুজ্জামান রাইড শেয়ারের চালক ছিলেন। এটি তার তৃতীয় বিয়ে। আর লাবণীরও আগে বিয়ে হয়েছিল।
তবে বিয়ে না পরকিয়া, তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনে আরও সময় লাগবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল সদর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এ ঘটনায় নৌ পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেফতার মনিরুজ্জামানকে তাদের হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্তের স্বার্থে রিমান্ডের আবেদনও করা হতে পারে।