একুশেনিউজ ডেস্ক:: চা শ্রমিকদের ১২০ টাকা মজুরি চুক্তি প্রত্যাখান বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে কালো পতাকা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার (১৯ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় আম্বরখানাস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার সামনে গিয়ে শেষ হয়। চা শ্রমিক ফেডারেশন নেতা রত্না বসাকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ সমন্বয়ক আবু জাফর, শ্রমিক ফ্রন্ট সাধারণ সম্পাদক শাহজান আহমদ, চা শ্রমিক ফেডারেশনে নিপা মোদি, স্বপন দাশ, প্রজাপতি, জগদীশ,বিজয় মোদি প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশিও চা সংসদ এবং বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে স্বাক্ষরিত মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এম.ও.ইউ) প্রত্যাখান করেছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, নিম্নতম মজুরি বোর্ডে মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অন্যান্য শিল্প শ্রমিকের মজুরি সাথে তুলনামূলক আলোচনা, দৈনিক জীবনযাপন ব্যায়, মুদ্রাস্ফীতী প্রভৃতি বিবেচনায় নিয়ে নির্দিষ্ট মানদন্ডের ভিত্তিতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের প্রশ্ন থেকে চা বাগান মালিকদের রক্ষা করতে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সুবিধাবাদি নেতৃত্ব ১২০ টাকা মজুরির এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, চা শ্রমিক ইউনিয়ন কখোনই দ্বি-পাক্ষিক চুক্তিতে চা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেনি। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন ২০০৬ সাল থেকে চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নির্ধারণের জন্য মজুরি বোর্ড গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে চা শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের জন্য মজুরি বোর্ড গঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (অদ্যবধি সংশোধিত) এর ১৩৯ (৬) ধারা অনুসারে প্রতি পাঁচ বছর পর পর সরকার গঠিত জাতীয় নিম্নতম মজুরি বোর্ড কর্তৃক জীবনযাত্রার ব্যায়- মূদ্রাস্ফীতি- জীবন মান বিবেচনায় শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি পুণঃনির্ধারণ করার বিধান থাকলেও বিগত ১১ বছর চা শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে কোন মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়নি। আর দ্বিপাক্ষিক দরকষাকষিতে নিজেদের অদক্ষতা স্বত্ত্বেও কোন অদৃশ্য কারনে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সুবিধাবাদি নেতৃত্ব নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে মজুরি নির্ধারণের দাবি তোলেনি।
এই অবস্থায় বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন সাধারণ চা শ্রমিকদের সংগঠিত করে মজুরি বোর্ড গঠন করা ও দৈনিক নগদ মজুরি ৫০০ টাকা ঘোষণার করার দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচী পালন করেছে।
চা শ্রমিক ফেডারেশনের দাবি ও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রায় ১১ বছর পর চা শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। কিন্তু চা শ্রমিক ইউনিয়ন, সাধারণ চা শ্রমিক ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃত্বকে যুক্ত করে মজুরি বোর্ডে মালিক পক্ষের উপর চাপ তৈরীর মাধ্যমে ন্যায্য মজুরি আদায়ের চেষ্টা না করে মজুরি বোর্ডের কার্যক্রম চলা অবস্থায় বাংলাদেশিও চা সংসদের সাথে মাত্র ১২০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে আর একবার চা শ্রমিকদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাদের অধিকারের পিঠে ছুড়িকাঘাত করল।
নেতৃবৃন্দ, সুবিধাবাদি নেতৃত্বের শিখড় উপরে ফেলতে চা শ্রমিকদের বাগান ভিত্তিক আদর্শিক নেতৃত্ব ও সংগঠন গড়ে তুলার আহবান জানিয়ে বলেন, মজুরি বোর্ড কে এই দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি বিবেচনায় নিয়ে নয়, নাগরিক জীবন যাত্রার মানদন্ডের বিবেচনায় চা শ্রমিকদের ন্যূণতম মজুরি ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন ন্যায্য মজুরির দাবি আদায়ে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকবে।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ,খুলনায় অবস্হান কর্মসুচি চলাকালে গ্রেফতারকৃত শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় নেতা জনার্দন দত্ত নান্টুর মুক্তি দাবি করেন।
একুশেনেট/শামীম