একুশে নিউজ ডেস্ক:: বাংলাদেশ আনসার গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ১৯৪৮ সালে ১২ই ফেব্রæয়ারি যাত্রা শুরু করে। এবং তৎকালীন পূর্ববাংলা আইন পরিষদে আনসার এ্যাক্ট অনুমোদিত হলে ১৭ জুন ১৯৪৮ সালে কার্যকর হয়। তখন থেকে এ বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে ঢাকার শাহবাগে অনুষ্ঠিত হতো। তাহার ধারাবিকতায় এবার ১১ই ফেব্রæয়ারী দিবসটি পালন করা হবে। এ বাহিনী দেশের দু:সময়ে জীবন বাজি রেখে শত্রæ দমন প্রতিরোধ করে যাচ্ছে। দেশের দুর্যোগে ও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা আন্তরিকভাবে সহযোগীতা প্রেরনা দিয়ে আসছে দেশ মাটি ও মানুষকে। আনসার গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী জন্মলগ্ন থেকে এই পর্যন্ত দেশ ও জাতীয় উন্নয়নে নিয়োজিত আছে। এ বাহিনী ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনে বাংলা ভাষার জন্য ময়মনসিংহ জেলার আনসার প্লাটুন কমান্ডার আব্দুল জব্বার শহীদ হন। ১৯৬৫ সালে প্রাক ভারত যুদ্ধ চলাকালীন সময় দেশের সীমান্ত ফাঁড়িগুলোতে ইষ্ট পাকিস্তান রেজিমেন্ট সাথে প্রতিরক্ষা দায়িত্বে আনসার বাহিনীকে সংযুক্ত করা হয়। ১৯৭০ ঘ‚র্ণিঝড়ে দেশের বৃদ্ধ যুবক যুবতী শিশু মানুষ যখন দিশেহারা ঘ‚র্ণিঝড়ের আঘাতে বাড়ী ঘর লন্ডভন্ড তখন আনসার বাহিনী ত্রাণ ও প‚র্ণবাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। আইন অনুসারে সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী আনসার বাহিনী একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী।
চল চল চল!
ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল
নি¤েœ উতলা ধরণি তল,
তরুণ প্রাতের তরুণ দল
চল রে চল রে চল
চল চল চল।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমদকে ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে সোমবার কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মুজিবনগর সরকারকে আনসার প্লাটুন কমান্ডার ইয়াদ আলী নেতৃত্বে ১২ জনের দল নিয়ে প্রথম গার্ড অফ অনার প্রদান করেন। ঐ দিন অগনিত বুদ্ধিজীবী রাজনৈতিক, শিল্প, সাহিত্যিক ক্রীড়াবিদ দেশী বিদেশী অসংখ্য সাংবাদিক উপস্থিতিতে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হয়। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধুর কথায় সারা দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের মুল অবস্থায় শক্তি দিয়েছিল এই বাহিনী। পাকিস্তারে হানাদার বাহিনীরা যখন বাঙালিদের উপর ঝাড়িয়ে পড়েছিল দিশেহারা বাঙ্গলী জাতী যখন ৪০ হাজার থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল দিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল আনসার বাহিনী। মহান মুক্তিযুদ্ধের অংশ নিয়ে বাংলাদেশ আনসার গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ৯ জন কর্মকর্তা ৩ জন কর্মচারী সহ ৬৫৮ জন বাহিনীর সদস্য যুদ্ধের সময় শহীদ হন। দেশ ও মাটির জন্য এই বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ অবদানের ভুষিত হন। বাহিনীর একজন বীর বিক্রম দুই জন বীর প্রতিক ১৯৭৬ সালে ৫ই জানুয়ারী ভিডিপি প্রতিষ্ঠা লাভস করে। পূর্ণাঙ্গন নাম করা হয় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষের সেবায় নিয়েজিত থাকেন। এই বাহিনী স্বাধীনতার পরবর্তীতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নে দীর্ঘদিন প্রশংসিত অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৮ সালে ১০ মার্চ জাতীয় পতাকা প্রদান করে। এই বাহিনী ২০০৪ সালে জাতীয় ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় স্বাধীনতা পদক প্রদান করে সরকার। এই বাহিনী নির্বাচন জাতীয় সংসদ সিটি, পৌরসভা, উপজেলা, ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রে অভ্যন্তরে শান্তি শৃঙ্খলা সদস্যরা নিয়েজিত থাকে যেমন তেমনী দেশের রেলপথ, মহাসড়ক, বিমানবন্দর মানুষের জানমাল মেডিকেল, ব্যাংক পার্বত এলাকায় ইত্যাদি শান্তি শৃঙ্খলা অপরাধী দমনে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
এছাড়া হলি আর্টিজানসহ বিভিন্ন সময় সন্ত্রাস জঙ্গিদমন অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার সম্মুখ যুদ্ধ নাসকতায় ঘটনায় প্রায় অর্ধশত সদস্য গুরুতর আহত হন। ২৫০জন খেলোয়ার নিয়ে আনসার ভিডিপির এর যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালে মহিলা দল গঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে পুরুষ দল গঠিত হয়। গঠনের পর থেকে এই পর্যন্ত দেশ বিদেশে অনেক সুনাম এনেছে দেশের জন্য। ১৯৯২, ১৯৯৬, ২০০২ ও ২০১৩ চারবার বাংলাদেশ গেমসে চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জনের মাধ্যমে দেশ মাটি ও মানুষের সুনাম অর্জনের সক্ষম হয়। এই বাহিনী সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও বিনোদনে পথের এক ইতিহাস ১৯৮৩ সালে ১০০জন সদস্য নিয়ে দল গঠন হয়। আনসার ভিডিপি সাংস্কৃতিক দল দেশ বিদেশে সম্মানিত রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিদের সাংস্কৃতির মাধ্যমে প্রশংসা লাভ করে বাহিনী। বাংলাদেশের শহর গ্রামে প্রতিটি ইউনিয়ন ওয়ার্ড ৩২ জন মহিলা ও ৩২ পুরুষ নিয়ে এক প্লাটুন গঠন করা হয়। তাদের তথ্য আদান প্রদান দলনেতা দলনেত্রী ইউনিয়ন কমান্ডার এর মাধ্যমে সদস্যদের মৌলিক প্রশিক্ষন, পেশা ভিত্তিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইত্যাদি এই বাহিনী সদস্যরা বাংলাদেশ সরকারে বিভিন্ন দপ্তরে ১০% কোটা পায় এই বাহিনী সদস্যরা। অসুস্থ হলে চিকিৎসা অনুদান দেওয়া হয় এবং মেধাবী সদস্যদের শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া হয়।
বিশ^ যখন মহামারী করোনা আক্রান্ত তখন বাংলাদেশ আনসার গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর দায়িত্ব কর্তব্য প্রশংসা কুড়ায়। করোনা সংক্রমনের সময় কৃষকের ধান কাটেন। বাংলাদেশের ধানের অঞ্চল সুনামগঞ্জে সিলেট বিভাগের রেঞ্জ পরিচালক মো: রফিকুল ইসলাম ও সিলেট জেলা কমান্ড্যান্ট এনামুল খানের অনুপ্রেরনায় কৃষকের দু:সময়ে বন্ধু হয়ে ধান কেটে কৃষকের বাড়ি পৌছে দিয়েছিল আনসার ভিডিপি’র সদস্যরা।
বর্তমানে সারা বংলাদেশে ভিডিপির ৬৩ লক্ষ সদস্য রয়েছে। আনসার বাহিনী ডিউটি কালীন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন অনেক সদস্য। এই বাহিনী সিলেট জেলায় স্বেচ্ছাসেবী ভিডিপির সদস্য কর্মহীন হওয়া কোভিড-১৯ এর সময় ত্রাণ উপহার পায়। করোনাকালে ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করেপোরেশন সরকারী ত্রাণ বিতরণে ভ‚মিকা পালন করে আনসার সদস্যরা।
মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষ্যে সকল আনসার গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের জানাই বিন¤্র শ্রদ্ধা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আনসার গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর আজীবন লড়ে যাবে।
লেখক:
ইমতিয়াজ রহমান ইনু
আনসার প্লাটুন কমান্ডার