• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

চেতনার একুশ আমার অহংকার: আল-আমিন

admin
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২১
চেতনার একুশ আমার অহংকার: আল-আমিন

‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, তোমার ভাষা আমার ভাষা, বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা।’ ভাষা আন্দোলনের এই মন্ত্রটির ওপর ভিত্তি করে সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউলরা বায়ান্নোর ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ বাঙালির চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন। এই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ অমর বাণীর মাধ্যমে বাংলার অন্তিম সূর্য অর্জিত হওয়ার ইতিহাস ঘটেছে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যেমে সূত্রপাত শুরু হয় স্বাধীনতার যুদ্ধের। একুশে ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের বিজয় এবং অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রেরণার একুশ আমাদের বাঙালি জাতীয় স্বত্তার পরিচয় সমৃদ্ধ করেছে ধারাবাহিক জয়ের মাধ্যমে। একুশ চিরঞ্জীব হয়ে আমাদের পথচলায় আমাদের জীবনে চেতনা বহন করেছে। বাঙালির জাতিসত্তার জাগরণের প্রণোদনা দিয়েছে। বাঙালি জাতির বিপ্লবী এই চেতনায় একাত্তরে পরিণত হওয়া মুক্তিযুদ্ধ অর্জিত হওয়া আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতা। বাংলাদেশকে দুনিয়ার ব্যাপি বিকশিত করেছে বিপ্লবী হিসেবে। এজন্য আমার গর্ব হয়, আমি অহংকার করি।

একুশে ফেব্রুয়ারি এবং আমাদের বাংলা ভাষাকে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। একুশের প্রেরণায় বাঙালি জাতির পিতা স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো ‘মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ ঘোষণা করে বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছে। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে। নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু শেষ হওয়ার পথে। বছরের পহেলা দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকদের ক্রিকেট খেলায় বিরাট অর্জন বাংলাদেশের নাম বিশ্বের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে রাখাইন মুসলিম রোহিঙ্গা গোত্র যখন নিজ দেশের সরকার কর্তৃক নিপীড়ন হয়ে বিতাড়িত হয়েছে তখন খাদ্যে স্বয়ংস্বম্পূর্ণ বাংলাদেশ তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে এবং তাদের ভরণ-পোষন ও চিকিৎসা দিয়ে চলেছে।

আমরা স্বপ্ন দেখি, তরুনদের বিচক্ষণতায় বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নয়নশীল দেশকে উদীয়মান অর্থনীতির দেশে উন্নত হবে। দেশে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতায় আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, জলবায়ুর পরিবর্তন, স্বাস্থ্য সেবা, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকবেলাসহ রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রেই শতভাগ সফলতা আসবে। দেশকে উন্নতির শিখরে তুলে নেওয়ার জন্য নতুন নতুন উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে চলমান রেখে দেশের জনগণের অবস্থা শতভাগ উন্নত এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি জনগণের আস্থাশীলতা বৃদ্ধি করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে উন্নত বিশ্বের কাতারে এবং উন্নয়ন পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বিশ্বের কাছে রোল মডেল হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে আগামীর বাংলাদেশকে দেখার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ, গনতন্ত্রের বাংলাদেশ, স্বাধীনতার বাংলাদেশ, মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদ মুক্ত বাংলাদেশ এবং তারুন্যের চোখে আগামীর উন্নয়নের বাংলাদেশকে আমরা দেখতে চাই।

এবারের একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের নিকট অধিকতর তাৎপর্যবহন করছে। একুশের উনসত্তর বছরের মাথায় এদেশের মানুষ স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ বা জন্মশতবার্ষিকী পালন করছে এবং আসছে বছর বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তী পালন করবে। এজন্য এবারের একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

একুশ কেবল আমাদের মুখের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি, দিয়েছে দেশপ্রেমের মহান আবেগ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, বাঙালির জাতীয়তাবাদী শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জীবনবোধ। দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে এগিয়ে চলার প্রাণশক্তি। আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে চেতনার বিকাশে একুশে ফেব্রুয়ারি প্রেরণা যুগিয়েছে হাজার দিনের। প্রাপ্তি ও প্রত্যাশায় শোক ও বেদনার একুশ এখন আমাদের জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। সৃজনশীলতায় পরিণত হয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতীয় জীবনে অসামান্য অবদান রেখেছে। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের সাহিত্যাঙ্গনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে মাসব্যাপী অমর একুশে বই মেলা হয় (শুধু এবছর কোভিড-১৯ এর জন্য অমর একুশে বই মেলা হয় নি), লেখক সাহিত্যিকগণ কাব্য রচনা করেন, কবি তার কবিতায় ফুটিয়ে তুলেন একুশের মর্ম কথা। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক দেওয়া হয় এই একুশকে ঘিরে। একুশ আমাদের রক্তে রন্দ্রে মিশে যাওয়া প্রাণের স্পন্দন। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’ এগান আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশে উদ্ভুদ্ধ মন্ত্রের মতো প্রেরণাময়। এ গান আজ আমাদের কাছে এক প্রতিকী তাৎপর্যে উজ্জ্বল স্লোগান। লাল কৃঞ্চচূড়ার ফাল্গুনের দিনে একুশ পালন করার জন্য শহিদ স্মরণে নগ্ন পায়ে প্রভাতফেরি আর শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি আমাদের চেতনার এক দীপ্ত মশাল। এই মশালের আলোতেই আমরা আলোকিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পরিণত হয়েছি।

একুশের চেতনা বাংলা কবিতার অঙ্গনে জন্ম দিয়েছে সমাজ সচেতনতায়। বাংলা সাহিত্যে বছরে বছরে প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারিতে ফাল্গুন কৃঞ্চচূড়া আর একুশের কথা। ফুটিয়ে তুলেন বায়ান্নোর শোষণ ও বঞ্চনার কথা। ভাবিয়ে তুলেন সমাজ ও মানুষকে, স্বদেশ ও বিশ্বকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন মানব-মুক্তির। তাঁদের কবিতায় ফুটে উঠে স্বদেশের রক্তাক্ত ছবি। কবিতা হয়ে উঠে সংগ্রামের অন্যতম হাতিয়ার।

আমরা তরুণ। আমরা এবারের একুশে প্রত্যাশা করি, দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী আগামী দিনের পথচলার শক্তি। আমরা তরুণরা চাই, নিকট ভবিষ্যতে দেশের গৃহহীন মানুষগুলো অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানসহ অন্যান্য মৌলিক নাগরিক সুবিধা প্রাপ্ত হোক। একেকটি গ্রাম হোক উন্নত শহরে রুপান্তর। আমরা চাই বাংলাদেশের জন্য এমন সরকার, যে সরকার দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বাংলাদেশকে বহুবিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে সম্মান অজর্ন করে দিবে। নগর থেকে গ্রামে রাস্তাঘাট ব্রীজ কালবাট করে দিবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিবে। বছরের পহেলা দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে। অর্থনৈতিক অগ্রগতি, অবকাঠামো নির্মাণ, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমন ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে। বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে উন্নয়নের মডেল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে নতুন মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছে। জনগণের আকঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশানুযায়ী এ দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করেছেন। তাঁর নেতৃত্বের সাফল্যে বাংলাদেশ আজ গৌরবজনক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি প্রতিষ্ঠায় এদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের জনগণের জীবনমান শতভাগ সমৃদ্ধ হবে।

ভাষা-আন্দোলনের রক্তঝরা সংগ্রামী ইতিহাস একাত্তরের সংগ্রামী ইতিহাসের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কবিদের সত্ত্বায় প্রবহমান একুশের চেতনার প্রতিফলন। একুশে ফেব্রুয়ারি চেতনায় উদ্বুদ্ধ নতুন প্রজন্মের একুশের পটভূমিতে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ এই একুশের চেতনা অসামান্য প্রভাব ফেলে এই প্রজন্মের হৃদয়ে। একুশের অনির্বাণ চেতনা ও অপরিমেয় আত্মত্যাগের কাহিনী আমাদেরকে শিখিয়েছে- ‘মাগো তোমার বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি।’ সকল ভাষা শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখকঃ কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক।