• ১৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বিএনপি ছাড়লেন রাজপথ কাপানো নেতা অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান

admin
প্রকাশিত আগস্ট ১৯, ২০২১
বিএনপি ছাড়লেন রাজপথ কাপানো নেতা অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক::
নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে কমিটি দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে দল ছাড়লেন সিলেটে রাজপথ কাঁপানো বিএনপি নেতা কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান।

বুধবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবরে পদত্যাগপত্র পাঠানোর পর রাতেই সিলেট নগরের মিরাবাজারে একটি হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

এ সময় তার সঙ্গে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
তবে বিএনপির সব পদ-পদবী থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন না তিনি। বরং রাজনীতির বাইরে থেকে দেশের জন্য কাজ করে যাবেন, বলে ঘোষণা দেন।

১৯৮৫ সালে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান। বিগত দিনে বিএনপির সব আন্দোলন সংগ্রামে সোচ্ছার ছিলেন তিনি। খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে সিলেটের রাজপথ কাঁপিয়েছেন।

পদত্যাগকালে তিনি বলেন, দলে কোনো দিন পদ-পদবির আশা করিনি। কিন্তু নেতাকর্মীর যারা রাজপথে জীবন বাজি রেখেছে। দলের কমিটিতে তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি।

তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের ওপর যে অন্যায় করা হয়েছে। আগে যুবদলের ওপর অন্যায় করা হয়েছিল। আমরা পদত্যাগ করেছিলাম। আমাদের আশ্বাস দিয়ে ৭ দিনের মধ্যে ফয়সালা দেওয়ার কথা বলেছিলেন মহাসচিব। আজ বছর চলে গেছে। উনার কথা শূন্যে মিলিয়ে গেছে। কিন্তু এখন স্বেচ্ছাসেবক দলের যেসব নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে, যাদেরকে অপমানিত করা হয়েছে, লাঞ্ছিত করা হয়েছে পদ-পদবি না দিয়ে, তারপর আমি যদি স্বপদে থাকি, এটা অন্যায় এবং জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার স্বার্থের রাজনীতির পরিপন্থি হবে।

সামসুজ্জামান বলেন, ‘নেতাকর্মীর স্বার্থে আমি বিএনপি ছেড়ে দিলাম। বিএনপির কোনো দায়বদ্ধতা আমার ওপর রইলো না। তবে ব্যক্তিগত কোনো কারণে বিএনপি ছাড়িনি। দলের নেতাদের ইনসাফ বহির্ভূত কাজ দেখে স্বেচ্ছায়-স্বজ্ঞানে পদত্যাগ করছি। সারা বাংলাদেশে তৃণমূল নেতাকর্মীর পক্ষে কোনো না কোনো স্থান থেকে আওয়াজ উঠতে হবে। সেটা শাহজালালের পূণ্যভূমি থেকে শুরু হলো।

বাংলাদেশের প্রত্যেকটা জায়গায় যারা আমাদের মতো ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের বেছে বেছে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা কিসের আলামত? প্রশ্ন রেখে সামসুজ্জামান বলেন, আমরা দলের আদর্শের জন্য রাজপথে ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করেছিলাম।

তিনি বলেন, একদল লোক খালেদা জিয়ার মৃত্যুর অপেক্ষা করছে। আমরা রাস্তা থেকে উঠে আসিনি। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেও শুধুমাত্র ভালোবেসে রাজনীতি করেছি। হালুয়া-রুটি খাওয়ার জন্য এখানে আসিনি। অথচ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাবস্থায়ও ৪ বার জেল খেটেছি। আর আওয়ামী লীগের সময়তো বললামইনা।

তৃণমূল নেতাকর্মীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যদি দলকে বাঁচাতে চান, সত্যিকার অর্থে শহীদ জিয়ার সৈনিক হয়ে থাকেন, খালেদা জিয়াকে মা সম্বোধন করে ভালোবেসে থাকেন। তাহলে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা না বলে, আপনারা ভুল জায়গায় রাজনীতি করছেন। আর যেসব ট্রেইলার বা ব্যবসায়ী রাজনীতি করবে, তারা আপনাদের কিনে নেবে, নেতাকর্মীদের কিনে নিয়ে রাজনীতির নামে ব্যবসা করবে।

তিনি বলেন, আমি যা করেছি। আমার কর্মীদের স্বার্থে করেছি। যারা মূল্যায়ন পায়নি, তাদের জন্য যদি ভূমিকা না রাখি, তাহলে হিপক্রেসি হিসেবে আখ্যায়িত হবো। আজকে সহযোদ্ধাদের প্রতি যে অন্যায় আচরণ প্রদর্শন করা হয়েছে অবশ্যই ‘প্রকৃতি’র প্রতিবিধান করবে। তাই যারা রাজনীতি ছাড়তে চায়, তাদের ছাড়তে দেবেন। বিএনপির নেতাদের আকাম-কুকাম করবেন সেটা মানতে পারবো না।

অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান বলেন, তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে যারা স্যুট-টাই, নতুন জামা পরে ঘুরেছেন। আপনাদের লজ্জিত হওয়া উচিত। আমি কথা বলছি, আমাকে শোকজ করে দেওয়া হবে। অথচ আমরা বার বার অপশক্তির মোকাবিলা করেছি। কারো রক্তচক্ষুর ভয় করিনি, করবো না।

তিনি বলেন, যারা বিএনপি করে টাকা বানিয়েছিলেন, তারা চাইলে করোনার এই সময়ে মানুষের জীবন রক্ষায় একশত অক্সিজেন সিলিন্ডার দিতে পারতেন। কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে দিতে পারতেন। সরকার না নিলে সেটাতো দেখার বিষয় ছিল।

অ্যাডভোকেট জামান ব্যথিত চিত্তে দলের মহাসচিবের কাছে প্রশ্ন রাখেন, দলে নেতৃত্ব পেতে হলে যোগ্যতার মাপকাঠি কী? ত্যাগ শিকার করে যারা যারা দলকে ভালবেসে তিল তিল করে বিনির্মাণ করেছেন তারাই আজ সেই দলে অনাহুত। বরং লবিং-তদবির অথবা বিশেষ ব্যবস্থায় সবকিছু হাসিল কারিদেরই দলে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়।

১৯৮৫ সালে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির দুর্দিনে এদলকে প্রতিষ্ঠা করতে জীবনের সোনালি সময়, অর্থবিত্ত ব্যয় করেছি। সীমাহীন প্রতিকূলতার মধ্যেও দলকে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করেছি। কিন্তু কখনও হালুয়া রুটির কিংবা অনৈতিক কোনো সুবিধা নেইনি। উল্টো বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে চারবার কারাবরণ করতে হয়েছে আমাকে।

তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের ৩৬ বছর দলের জন্য সাদকা হিসেবে দান করে দিয়েছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি এখন থেকে বিএনপির সঙ্গে তার আর কোনো সম্পৃক্ততা রইল না বলেও উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট জামানের অনুসারী শতাধিক নেতাকর্মী বক্তব্যের সঙ্গে স্লোগান দিয়ে একাত্ব পোষণ করেন। যদিও অ্যাডভোকেট জামান তার বক্তব্যে বলেন, এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে কেউ একমত হতে পারেন, আবার নাও হতে পারেন। কোনো ভয় থেকে নয়, বরং নিজ ইচ্ছাতেই দল থেকে পদত্যাগ করেছেন তিনি।