শুকনো মৌসুম আসি আসি করছে। এ অবস্থায় এখনই ধুলায় ধুসর সিলেট মহানগরী। ঘর থেকে বের হলে কালো চুল সাদা হয়ে যাচ্ছে। ধুলার আস্তরণ পড়ছে প্রায় সর্বত্র। ধুসর হয়ে যাচ্ছে দোকান কোটার শাটার থেকে শুরু করে গাছের সবুজ পাতাও। বৃষ্টিহীনতার পাশাপাশি এই ধুলার রাজত্বকে উস্কে দিচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্প। গ্যাস ও পানির লাইন মেরামতের কাজ চলছে কোথাও। কোথাওবা ড্রেণ পরিস্কার ও উন্নতকরণ। এ অবস্থায় এই মুহুর্তে যখন রাস্তাগুলোয় পানি ছিটানো জরুরী বলে মনে করছেন সচেতন মহল, তখন সিসিক কর্তারা বলছেন সপ্তাহখানেক পর তারা এই কাজ শুরু করবেন। তবে এ ব্যাপারে আদৌ তারা প্রস্তুত কি না, দায়িত্বশীল সূত্রের কথায় সেই সন্দেহও থেকে যায়।
প্রায় প্রতিবছর এ নভেম্বরের শুরুতে সিলেট মহানগরীতে ধুলার রাজত্ব শুরু হয়। তবে গত প্রায় দুই বছর থেকে এই যন্ত্রণা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কারণ, সিলেট সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন। বর্তমানে নগরীর ছড়া ও নালাগুলো পরিস্কারের কাজ চলছে। ময়লা আবর্জনার কিছু কিছু থেকে যাচ্ছে ড্রেনের পাশে।
পাশাপাশি আম্বরখানা- শাহি ঈদগাহ, টিলাগড়-নাইওরপুল, লামাবাজার-জিন্দাবাজারসহ নগরীর আরও কয়েকটি সড়কে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের কাজও চলছে। আর তাই টিলাগড়, শিবগঞ্জ, মিরাবাজার, কুমারপাড়া, শাহি ঈদগাহ, ইলেক্ট্রিসাপ্লাই, আম্বরখানা, সুবিদবাজার, মদিনা মার্কেট, আখালিয়া, লামাবাজার, বাগবাড়ি, রিকাবিবাজার, বারুতখানা জেলরোড এলাকার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এসব রাস্তায় ঘর থেকে বের হলেই আর উপায় নেই। ফিরতে হয় ধুসরিত চুল আর কাপড়চোপড় নিয়ে। এমনকি গলা বা হাতে আঙুল ঘষেও ধুলাবালির আস্তরণের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে।
এতে নানা রোগের প্রাদুর্ভাবও বাড়ছে। সিলেট মহানগরীতে চলাফেরার করেন এমন ১০ জনের মধ্যে অন্তত ৬/৭ জন সর্দিকাশিতে ভুগছেন বলে আলাপকালে জানা গেছে। প্রায় সববয়সের নাগরীকই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, তবে বেশী মহিলা শিশু আর বয়স্করা। বিশেষ করে স্কুল পড়–ায়াদের অবস্থা খুব করুন।
নগরীর ইলেক্ট্রি সাপ্লাই এলাকার ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী দিশাকে রোববার সকালে মাস্ক পরা অবস্থায় একটা দর্জি দোকানে প্রবেশ করে পরিস্কার কিছু কাপড়ের টুকরা সংগ্রহ করতে দেখা যায়।
ধুলাবালিতে সে যে খুব বিরক্ত তার চোখমুখ দেখেই বুঝা গেল। তবু প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলে, ধুইলে ভরা। কাপড় নিয়ার একতিল বাদ বাদ পুছিতাম ( মুছা) করি।
ঐ দোকানের টেইলার জিল্লুর রহমান তার ঘরের শাটার দেখালেন। সেখানে প্রায় ইঞ্চিখানেক পুরো ধুলার আস্তরণ। গ্লাসেও ধুলা। একটু পরপর ঝাড়মুছ করলেও পরমুহুর্তে আবার তা আগের মত হয়ে যায়।
জিল্লুর রহমান বলেন, ইবার যেমন বেশী ছাতাইলার ধুলায়। ই রোডোর কামর আতায় আরও বেশী যন্ত্রণা। ইতা কাজকামও কোনদিন যে শেষ অইবো আল্লা মালুম। সিটিয়ে ( সিটি করপোরেশন ) পানিও ছিটার না।
এত দুর্ভোগে অতিষ্ঠ যখন নাগরিক জীবন, তখন সিসিক’র পক্ষে রাস্তায় পানি ছিটিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফেরানো যেত বলে মনে করছেন সচেতন আরও অনেকে।
এ ব্যাপারে তাদের উদ্যোগ কি- জানতে প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানের মোবাইলে কল দিলে তিনি বললেন, যেসব রাস্তায় কাজ চলছে ওসব রাস্তায় ধুলোবালি বেশী। আমরা পানি ছিটানোর উদ্যোগ নিয়েছি।
কবে নাগাদ তারা এই কাজ শুরু করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দিন তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। তবে সপ্তাহখানেক লাগতে পারে।
অনেক বিলম্ব হয়ে যাবে বললে তিনি আবারও বললেন, আমরা চেষ্টা করছি। দেখি কি করা যায়।