নিজস্ব প্রতিবেদক::
সিলেট নিজের ১৭ মাসের সন্তানকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার ঘটনায় পাষন্ড মা নাজমিন জাহানকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার (১০ ফেভ্রুয়ারি) নাজমিনকে আদালতে তুলে ৫ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কিন্তু রিমান্ডে প্রথম দিনেই সব কিছু স্বীকার করায় বাকী দুইদিন আর রিমান্ডের প্রয়োজন পড়েনি।
তাই শনিবার নাজমিনকে আদালতে প্রেরণ করলে সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন ভূঁইয়া তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। সিলেটপ্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন এসএমপি শাহপরাণ (রহ.) থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আনিসুর রহমান।
রিমান্ডে নাজমিন জানান, স্বামীর প্রতি ক্ষোভেই ১৭ মাস বয়সী শিশু সন্তান নুসরাত জাহান সাবিহাকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেছি। পুরো তিন মিনিট সাহিবার মুখে বালিশচাপা দিয়ে রেখে মৃত্যু নিশ্চিত করেন নাজমিন।
জানা যায়, ২০১৫ সালের মে মাসে সাব্বির হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় নাজমিনের। বিয়ের ৬ মাস পর সাব্বির বিদেশে চলে যান। পরে তিনি শাহপরান এলাকার নিপোবন-৪৯ নং বাসায় থেকে সিলেটের একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতে থাকেন।
পুলিশের জবানবন্দিতে নাজমিন জানান, বিদেশের যাওয়ার পর থেকে সাব্বির ভরণ পোষন তো দূরের কথা, খোঁজ খবরও রাখেননি। উল্টো পরিচিতজনদের দিয়ে নাজমিনকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলতেন। এ অবস্থায় চার বছর পর ২০২০ সালে দেশে আসেন সাব্বির। দেশে এসে নাজমিনকে বুঝিয়ে আবারও সংসার শুরু করেন তিনি। তখন নাজমিন গর্ভবতী হন। তাকে গর্ভবতী রেখে সাব্বির আবারও কাতার চলে যান। তবে প্রবাসে যাওয়ার পরপরই গর্ভের সন্তান নিজের নয় বলে দাবি করেন সাব্বির।
নাজমিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটাতে থাকে, আমি বাধ্য হয়ে বলি- ডিএনএ টেস্ট করার কথা। কিন্তু সাব্বির তাতেও সায় দেননি। সন্তান জন্মের পর মেয়ের চেহেরা অবিকল তার বাবার মতো হওয়ায় তার সন্দেহ দূর হয়। সাব্বির ১৫ দিন আগে দেশে এসেছেন। কিন্তু আমার কাছে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। চার-পাঁচ দিন পর পর শুধু কয়েক মিনিটের জন্য মেয়েকে দেখতে যান। কিন্তু আমি স্ত্রী হিসেবে তাকে কাছে পাইনি।
নাজমিন বলেন, সাব্বির পরকীয় আসক্ত। সে বহু নারীর কাছে যায়। এজন্য আমার কাছে যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করেনি।
নিজের অবুঝ শিশু সন্তানকে কেন হত্যা করলেন পুলিশের এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমিন বলেন, আমি সাব্বিরের দেওয়া কষ্ট, অপবাধ সইতে পারিনি। তাই ইমোশনাল হয়ে আমার মেয়েকে হত্যা করেছি। হত্যার পর যখন বুঝতে পারি- আমি বড় ধরণের পাপ করে ফেলেছি, তখন আমার মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেই, আমার বমি করে। পরে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
উল্লেখ্য: গত বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ২টার দিকে সাবিহাকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তিনি। এ ঘটনায় নাজমিনের স্বামী সাব্বির আহমদ বুধবার রাতে বাদি হয়ে নাজমিনকে আসামি করে শাহপরাণ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-১১।