একুশেনিউজ ডেস্ক::
নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে দিশাহারা মানুষ। দিনকে দিন বেড়েই চলেছে জীবন যাত্রার ব্যয়। সবকিছুর দাম বাড়লেও বাড়ছে না কেবল মানুষের আয়। এ অবস্থায় বিশেষ করে শহরের স্বল্প আয়ের মানুষের টিকে থাকা দায় হয়ে গেছে। ভালো নেই মধ্য আয়ের কর্মজীবী মানুষেরাও। শুধু খাদ্যদ্রব্য নয়, জীবন-যাপনে প্রয়োজনীয় সবকিছুর দামই হু হু করে বাড়ছে। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্য আয়ের মানুষদেরও। মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করা ব্যক্তিরাও এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বাসা ভাড়া, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, অফিসে যাতায়াতসহ সংসারের যাবতীয় খরচের সঙ্গে যোগ হয়েছে নিত্যপণ্যের বাড়তি মূল্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, সরবারহ সংকট, উৎপাদন কম হওয়া এবং ডলারের মূল্য বৃদ্ধি দেশের বাজার অস্থির হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ। এমন পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র টিসিবি’র মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি ছাড়া দ্রব্যমূল্য কমানোর কোনো বিকল্প রাস্তা দেখছে না সরকার।
এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, তেল, চিনি ও ডাল এই তিনটি পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে বলেই দেশেও এর চাপ পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যেটার দাম বেড়ে গেছে, সেটা যারা কিনবে তারা তো আর লোকসানে বিক্রি করবে না। তবে আমরা যে দাম ঠিক করে দেই, আলোচনা করে দাম দর দেখে আমাদের ট্রেড কমিশন বসে যেটা ঠিক করে, সেই দামে যেন বিক্রি করা হয় সেটা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।
ভোক্তা অধিকার সহ সরকারি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা দিয়ে সেটা মেনটেইন করা হয়। এছাড়া অন্যান্য পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে- জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। তারপরও সরবারহ যথেষ্ট থাকলে দাম কমবে। যেমন পিয়াজের দাম অনেক বেশি ছিল আবার কমে গেছে। আবার একটু বেড়ে গিয়েছিল। সাপ্লাই কমে গেলে দাম বাড়ে। তবে এখন একটু ভালো আছে। এছাড়া চাল কিন্তু আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ আছে।
মোটা চালের দামই কিন্তু হাতের নাগালে আছে। তবে চিকন চালে বেড়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি কমানো যায় কিনা। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের একটাই করণীয় সেটি হলো- টিসিবি কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য দেয়া। এটাই বিকল্প ব্যবস্থা। যতো ভর্তুকিই দিতে হোক না কেন আমরা সাশ্রয়ী দামে ১ কোটি মানুষকে পণ্য দেবো। ১ কোটি মানুষকে দিলে অন্তত ৫ কোটি মানুষ এর সুফল পাবে। সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।
ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, সরকার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আদমানি শুল্ক কমিয়ে দিলে দাম কিছুটা হলেও কমে যাবে।
এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, শুল্ক কমিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আমরা এনবিআরকে চিঠি লিখেছিলাম। যাতে তেলের ওপর থেকে শুল্ক তুলে দেয়া হয় অথবা কমিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এটা তারা এখনো করেনি। কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান মনে করেন, সব মিলিয়ে একটি নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
তবে টিসিবি’র কার্যক্রম বাড়ালে সার্বিক বাজার পরিস্থিতিতে তেমন কোনো ফল না হলেও অন্তত কিছু মানুষ এতে উপকৃত হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি দেশের বাজার অস্থির হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ। এছাড়া পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, সরবারহ সংকট, উৎপাদন কম হওয়া, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন কারণে দেশের বাজারে পণ্যের দাম বাড়ছে। তাছাড়া আমদানি পণ্যের মূল্য বাড়লে ট্যাক্সের পরিমাণও বেড়ে যায়।
এতে বাজারের অন্যান্য পণ্যের দামেও প্রভাব ফেলে। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের সংসার খরচও বেড়ে গেছে। তারাও তাদের জীবন মান ঠিক রাখতে, বিভিন্ন খরচ মেটাতে আরও বেশি লাভ করতে চাচ্ছে। সেজন্য সব পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাচ্ছে। ক্যাব সভাপতি বলেন, এটা এমন একটি পরিস্থিতি যে, এখানে কাউকে আপনি এককভাবে দায়ী করতে পারবেন না। সিস্টেমেটিকভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে। এখানে করোনা সংকটও এর জন্য দায়ী।
এ অবস্থায় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে থাকে। বেশি জোর দিতে হবে মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে, যাতে মানুষের আয়-রোজগার বাড়ে।
Editor: Shahin Ahmed & Sadrul Islam Lukman
Office: Hoque Super Market, 3rd Floor, Zindabazar, sylhet.
Email: ekusheynet.syl@gmail.com
Contact: 01739447302