হবিগঞ্জ সংবাদদাতা::
হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকরী প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ) চাঁদনী আক্তারের ঘুষ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে এলাকাবাসী। চাঁদনী আক্তারের অবৈধ কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ গ্রামে এলাকাবাসী গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ সভা ডাকেন। প্রতিবাদ সভায় সদর উপজেলায় ২নং রিচি ইউনিয়নের জালালাবাদ, নোয়াগাঁও ও দুর্লভপুর গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবাদ সভা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি চাঁদনী আক্তারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন এলাকাবাসী। যার ডকেট নম্বর: ১৬২, (তারিখ: ১১-০২-২০২২ইং)। স্মারকলিপি অনুলিপি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, সিলেট বিতরণ অঞ্চল এর প্রধান প্রকৌশলী, মৌলভীবাজার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পওস সার্কেল ও হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বরাবরে প্রেরণ করা হয়। স্মারকলিপিতে প্রায় দুইশো সাধারণ মানুষ স্বাক্ষর করেন।
স্মারকলিপিতে তারা উল্লেখ করেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী চাদনী আক্তার এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সাথে নানা প্রকার প্রতারণা ও স্বেচ্ছাচারিতা, অফিসে বসে মনগড়া বিল প্রদান, দুর্ব্যবহার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছেন। তিনি ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ, মাসুয়ারা বাণিজ্য কার্যকলাপ পরিচালনা করে আসছেন। যাচাই বাছাই না করে মিটার খুলে নিয়ে ঘুষ দাবি করছেন।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, গত ২১ ডিসেম্বর বেলা ২টায় জালালাবাদ নিবাসী সাবেক ইউপি মেম্বার মো. শামছু মিয়ার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে যান চাদনী আক্তার। যার মিটার নং- ০০৪১৩৬, হিসাব নং- এ/১৮-৬৮৬, গ্রাহক নং- ৪৫২৩৪৭২৮। উক্ত মিটারের বিপরীতে নভেম্বর ২০২১ মাসের বিল দেয়া হয় ১১৭৬ টাকা। উক্ত বিল পরিশোধ করার নির্ধারিত তারিখ ২৩ ডিসেম্বর এর মধ্যে ঢাকা ব্যাংক লি. এর হবিগঞ্জ শাখায় পরিশোধ করা হয়েছে। উক্ত মিটারের বিপরীতে কোন বকেয়া বিল না থাকা স্বত্বেও চাদনী আক্তার নিয়ম বহির্ভূতভাবে ২১ ডিসেম্বর শামছু মিয়ার মিটার খুলতে আসেন। এসময় শামছু মিয়া সকল কাগজপত্র নিয়ে বাঁধা দেন। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর চাদনী আক্তার তার স্বামী শাকিল চৌধুরীকে নিয়ে আসেন। মূলত চাদনী আক্তার ও তার শাকিল চৌধুরী মিলে একটি সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। শাকিল চৌধুরী তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসে শামছু মিয়ার উপর হামলা করে।
শামছু মিয়া জানান, এসময় তার ছোট বোন মোবাইল দিয়ে ভিডিও করতে চাইলে মোবাইল কেড়ে নিয়ে তাকেও শ্লীলতাহানী করে হামলাকারীরা। হামলার কিছুক্ষণ পর আবারও চাদনী আক্তার পুলিশ ও নির্বাহী প্রকৌশলী নিয়ে শামছু মিয়ার বাড়িতে আসে। এসে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে মিটার খুলে নিয়ে যান। প্রায় আড়াই মাস থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন শামছু মিয়ার পরিবার। স্কুল ও মাদ্রাসা পড়ুয়া দুই মেয়ে ও ১ ছেলে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ঠিক মতো লেখাপড়া করতে পারছেন না। তাদের মৌলিক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়াও শামছু মিয়ার মা অসুস্থ থাকায় নানাবিধ সমস্যা ভোগছেন। অবিলম্বে বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, হামলা, বিদ্যুৎ লাইন কেটেও ক্লান্ত হননি চাদনী আক্তার। নিজের অপকর্ম ঢাকতে উল্টো শামছু মিয়া ও তার স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা জহুরা খাতুন ও এলাকার বিশিষ্ট মুরব্বি আলকাছ মিয়াকে আসামী করে হবিগঞ্জ সদর থানায় একটি বানোয়াট মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও শামছু মিয়ার পিতা মৃত মলাই মিয়ার নামে আরেকটি মিটারে ২০১১ সাল থেকে বকেয়া বিল রয়েছে উল্লেখ করে আরেকটি মামলা দেন। অথচ- ২০১১ সাল থেকে ওই মিটার দিয়ে কেউ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন না।
এলাকাবাসী জানান, শুধুমাত্র শামছু মিয়া নন, প্রতিদিনও কেউ না কেউ চাদনী আক্তারের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে তারপর হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছেন। বকেয়া কোন মিটারের গ্রাহকের নামের সাথে অন্য মিটারের কারও নামের মিল পেলেই চাদনী আক্তার মিটার খুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তাকে অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেন করলে মিটার জায়গামতো রেখে দেন।
এছাড়াও আরেক ভুক্তভোগী গোপেয়া পশ্চিম ভাদৈ কাজী নায়েব আলীর পুত্র মো. কাজী আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া গত বছরের ২ নভেম্বর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কগ১ আদালত, হবিগঞ্জে মামলা দায়ের করেছেন। যার নং- সিআর ৬৪২/২১। যা আদালতে চলমান। এছাড়াও জালালাবাদ গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের পুত্র মো. আব্দুল হাই ১৭ জানুয়ারি চাদনী আক্তারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন এর মহাপরিচালক বরাবরেও একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।