
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনে উজির মিয়ার মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।
২২ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠনের পর তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। পরে প্রতিবেদন জমার সময় তিন দিন বাড়ানো হয়। সে সময় পার হলেও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি দুই তদন্ত কমিটি।
পুলিশের তদন্ত কমিটি বলছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় তারা এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি । আর জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে পাওয়া গেছে দুই ধরনের তথ্য।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান জানিয়েছেন, তিনি ২ মার্চ জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তবে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, তিনি এখনও প্রতিবেদন পাননি।
এ অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করে উজির মিয়ার ভাই ডালিম মিয়া বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে টালবাহানা চলছে। তারা (তদন্ত কমিটির সদস্য) আসছিল, আমাদের সঙ্গে কথাবার্তার পর কী হলো কিছুই জানি না। দ্রুত তদন্ত শেষ করে আসল তথ্য সবার সামনে আনার দাবি আমাদের।’
উজির মিয়ার বাড়ি উপজেলার শত্রুমর্দন গ্রামে। ছোটখাটো ব্যবসা করতেন তিনি। একসময় ছিলেন সৌদি আরবে। এলাকায় চুরির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন উজির মিয়া। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে উজির মিয়া পুলিশের নির্যাতনের শিকার হন এবং সেই নির্যাতনেই তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার শত্রুমর্দন গ্রামের উজির মিয়াকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি একটি গরু চুরির মামলায় গ্রেপ্তার করেছিল শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ। যদিও মামলার এজাহারে তার নাম ছিল না এবং ওই মামলাটিও স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছিল।
গ্রেপ্তারের পর উজিরকে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। পরদিন তিনি আদালত থেকে জামিন পেলেও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মারা যান উজির মিয়া। এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে তার লাশ নিয়ে ওই দিনই সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী।
এরপর দুটি তদন্ত কমিটি করেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। জেলা প্রশাসনের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার-উল-হালিমকে।
তদন্ত প্রতিবেদনের ব্যাপারে শনিবার দুপুরে তিনি বলেন, ‘২ মার্চ আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’
তদন্তে কী পাওয়া গেছে তা জানাতে অস্বীকার করে আনোয়ার বলেন, ‘প্রতিবেদন ডিসি স্যারের কাছে দিয়েছি। প্রতিবেদনে কী আছে এবং তা প্রকাশ করা হবে কি না এ ব্যাপারে উনিই বলতে পারবেন।’
তবে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন শনিবার দুপুরে জানিয়েছেন, তিনি তদন্ত প্রতিবেদন এখনও পাননি।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘প্রতিবেদন এখনও হাতে পাইনি। কাল (রোববার) পেতে পারি।’
অন্যদিকে উজির মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এখনও জমা দেয়া হয়নি।
এই তদন্ত কমিটির প্রধান সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ বলেন, ‘ময়নাতদন্তের বিস্তারিত রিপোর্ট না এলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারছি না। তাই একটু সময় লাগছে।’
এদিকে ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় গত সোমবার শান্তিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ সূত্রধর ও এসআই আলা উদ্দিনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলার আবেদন করেছিলেন ডালিম। এ অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছে আদালত।