শিহরুম মুবিন:
ক্ষমতা হস্তান্তরের টালবাহানায় পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী যখন পূর্বাঞ্চলের মুক্তিকামী জনগণকে কোণঠাসা করার এক উলঙ্গনৃত্যে নেচে উঠেছিল। ঠিক তখনই দিশেহারা জনগোষ্ঠীকে সঠিক দিকনির্দেশনা ও সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, পোয়েট অব পলিটিক্স বা রাজনীতির কবি বলে সারাবিশ্বে সমাদৃত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মুক্তির এক মহাকাব্য নিয়ে জনতার সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন। যা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ হিসেবে সারা পৃথিবীতেই প্রশংসনীয়।
',,,তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে,,,'
',,,আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব।'
'মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
জয় বাংলা।'
ভাষণের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ পরদিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর এক রিপোর্টে বলা হয় যে,‘চতুর শেখ মুজিব, চতুরতার সাথে বক্তৃতা করে গেলেন। একদিকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গেলেন, অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হওয়ার দ্বায়িত্বও নিলেন না। নীরব দর্শকের ভূমিকা ছাড়া আমাদের কিছুই করার ছিল না।'
যুদ্ধে জেতার জন্য অপ্রত্যক্ষ সত্যের আশ্রয় নেওয়ার প্রথা সুপ্রাচীনকালের। সেদিন বঙ্গবন্ধুর সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়াটা হত আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের সামিল। এতে করে সারাবিশ্বের কাছ থেকে তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার তকমা পেতেন। জাতি পরিনত হত এক বিচ্ছিন্নতাবাদী জনগোষ্ঠীতে। যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশ্বদরবারের কাছ থেকে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার দ্বারকে উন্মুক্ত না করে উল্টো অবরুদ্ধ করে দিত। তাঁর এই রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও সাংগঠনিক সুকৌশলই জাতিকে একসুতায় বেঁধেছিল এবং পরবর্তীতে বিশ্বের কাছে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর প্রয়াস যুগিয়েছিল।
রাজনীতির কবির মহাকাব্য থেকে যে স্বাধীনতা আমাদের পাওয়ার সেটা আমরা পেয়েছি। কিন্তু মুক্তি কি আদৌ আমরা পেয়েছি? সমাজের উঁচু শ্রেণি থেকে নিচু শ্রেণির দূরত্ব আকাশ পাতাল। সেজন্যই দারিদ্র্য, বেকারত্ব, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ঘুনে ধরা সমাজকে আঘাত করতে চেয়েছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।
আজ প্রত্যেকের নিজ নিজ জায়গা থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করতে হবে। এ সংগ্রাম হবে সমাজের সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, বেকারত্বের বিরুদ্ধে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক সকল অসমতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে। অফিসের দুর্নীতিবাজ পিয়ন থেকে শুরু করে বড় সাহেব পর্যন্ত। আমাদের মনের ভিতরে একটা মহান ব্যক্তি আছে যে সুযোগ পেলেই রিকশাওয়ালাকে ঠকাতে চায়, মাছওলাকে ঠকাতে চায়, সবজিওয়ালাকে ঠকাতে চায়। সমাজের নিচু শ্রেণীর মানুষকে পদপিষ্টে মাটির নিচে নিয়ে যেতে চায়। তাই এ যুদ্ধ হবে আমাদের নিজের সাথে নিজের। স্বীয় চরিত্রের খারাপ দিকের সাথে।
আজকে একটা নির্দিষ্ট শ্রেণী ভিন্ন ভিন্ন দলের নামে, সংগঠনের নামে, আদর্শের নামে এ জাতির বুকের উপর খঞ্জর বিঁধছে। এরা পাকিস্তানি শাসক শোষকদের থেকেও হাজারগুণ শক্তিশালী। এরা আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেছে। এদের থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য নয় মাসের যুদ্ধ যথেষ্ট নয়। যুগ যুগ এ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।
জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান এ যুদ্ধের রসদ আমাদের অনেক আগেই দিয়ে গেছেন। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর আগে জীবনের প্রতিটি মূহুর্তেই আমাদের এ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা আমাদের দেশ, জাতি ও সমাজকে সকল অন্যায়, অনিয়ম ও অনাচারের বেড়াজালে আবদ্ধ শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে পারি। আর তাই এ নতুন যুদ্ধে রাজনীতির মহানেতার ভাষায় বলতে হবে,'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
লেখক: কথাসাহিত্যিক
Editor: Shahin Ahmed & Sadrul Islam Lukman
Office: Hoque Super Market, 3rd Floor, Zindabazar, sylhet.
Email: ekusheynet.syl@gmail.com
Contact: 01739447302