ডেস্ক রিপোর্ট::
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়লে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাধে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের ইট-পাটকেল ও পুলিশের ছোঁড়া রাবার বুলেটে এ সময় শিক্ষার্থী, পুলিশ ও ব্যবসায়ীসহ আহত হয়েছে অতন্ত অর্ধশতাধিক।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীরা বলেছেন, রাতে ঢাকা কলেজের কয়েকজন ছাত্র নিউমার্কেটের একটি ফাস্টফুডের দোকানে খাবার খেতে এসেছিলেন। খেয়ে তাঁরা টাকা না দিয়ে চলে যেতে চাইলে দোকান কর্মচারীদের সাথে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়।যেটি এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে রুপ নেয়। পরে তারা কলেজ গিয়ে দলবল নিয়ে আসে হামলার উদ্দেশ্যে।
তবে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, বিনা কারণে তাদের দুই শিক্ষার্থীর উপর নিউমার্কেটের দোকান কর্মচারীরা হামলা চালায়। এর প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নেমে এলে বাধে সংঘর্ষ। রাত সাড়ে এগারোটায় শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ দফায় দফায় চলে ভোররাত পর্যন্ত। সংঘর্ষের পুরোটা সময় নীলক্ষেত , ঢাকা কলেজ, সাইন্সল্যাব ও এর আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। পুলিশ এসে মুখোমুখি অবস্থানে থাকা দুই পক্ষকে রাস্তা থেকে সরে যেতে বলে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে। এ সময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করে।
পরে পুলিশের সাজোয়া যান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় তারা। পরে তাদের একটা অংশ ঢাকা কলেজের বিভিন্ন বহুতল ভবনের ছাদে জড়ো হয় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পুলিশকেও এ সময় তাদেরকে লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুড়তে দেখা যায়। মুহুর্মুহু রাবার বুলেট টিয়ারশেল ও ককটেলের শব্দে এ সময় পুরো নিউ মার্কেট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। রাত দুটোর দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে পিছিয়ে আসে পুলিশ।
এ সময় শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে রড লাঠি হাতে ফের রাস্তায় নেমে আসে। রাস্তায় জড়ো হয়ে তারা 'প্রশাসনের কালো হাত ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও, 'শিক্ষার্থীদের উপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই' সহ নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় তারা পুলিশের বিরুদ্ধে তাদের উপর গুলি চালানোর অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের হামলায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে তারা জানায়।
ঢাকা কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী আরো অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজশে পুলিশ তাদের ওপর হামলা করেছে। ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুব গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, পুলিশের হামলায় ঢাকা কলেজের তিন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এদের মধ্যে একজন আইসিইউতে আছেন। আরও কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আমরা এটির প্রতিকার চাই। বড় ভাইরা নির্দেশ দিয়েছেন, এ ঘটনার শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কাল থেকে আমরা নিউমার্কেট খুলতে দেবো না।’
এদফায় তারা প্রায় ঘন্টাখানেক নিউ মার্কেট সংলগ্ন সড়কে অবস্থান নেয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কিছুদুর সামনে সাজোয়াযান সহ পুলিশের শতাধিক সদস্য সতর্ক অবস্থানে ছিল। পরে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ ও একাধিক ছাত্রনেতার মধ্যস্থতায় রাত সাড়ে তিনটার দিকে তারা ক্যাম্পাসে ফিরে যায়। সংঘর্ষের বিষয়ে রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যতদূর জেনেছি ঢাকা কলেজের কয়েকজন ছাত্র নিউমার্কেটে যায়। যে দোকানে তারা গিয়েছিল সেই দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে তাদের তর্ক হয়।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, সেই কর্মচারী তাদের আঘাত করে। পরে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য দলবল নিয়ে নিউমার্কেট এলাকায় আসে। এ সময় তারা প্রথমে নিউ মার্কেটের চার নং গেইট ও পরে ২নং গেইট ভেঙে ভেতরে ঢুকার চেষ্টা করে। দুই নং গেইট ভেঙে ভেতরে কয়েকজন ঢুকেও পড়ে । পরে আমরা তাদেরকে বুঝিয়ে হল ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করি। আমাদের অনুরোধ শুনে তারা ফিরেও যায়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা রাস্তায় চলে আসার কারণে তাদের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থার সৃষ্টি হয়।’ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো রাবার বুলেটও নিক্ষেপ করিনি।
আমরা শুধু টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছি। আমাদের বাহিনীকে সেরকমই নির্দেশ দেয়া ছিল।’ এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হয়েছে অবশ্যই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।' পুলিশর সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অংশ নেয়ার দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি নিছকই দাবি। সত্য নয়।’
Editor: Shahin Ahmed & Sadrul Islam Lukman
Office: Hoque Super Market, 3rd Floor, Zindabazar, sylhet.
Email: ekusheynet.syl@gmail.com
Contact: 01739447302