নিজস্ব প্রতিবেদক::
‘যেখানেই ছিলাম না কেন বা থাকি না কেন, সিলেট আমাকে খুব টানে। আমি আবার সিলেট যাব।’তবে সেই যাত্রা যে শেষ যাত্রা হবে তা তো কারও জানা ছিলোনা।কথাগুলো বলেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
জন্মভূমি সিলেটের মাটিতে ফিরবেন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক এবং ভাষাসৈনিক আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্মহণ করা সাবেক এই অর্থমন্ত্রী আজ নিজের জন্মভিটায় ফিরছেন তবে নিথর দেহে।
গত বছর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থও হয়েছিলেন। ফিরেছিলেন বাসায়। পরবর্তী দিনগুলোতে শরীর ভালো সায় দিচ্ছিল না। এরপর আরও কয়েক দফায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু এবার মৃত্যুর কাছে হার মানতেই হলো তাকে। জীবনের সব লেনদেন সাঙ্গ করে চিরপ্রস্থানের পথে যাত্রা করলেন তিনি।
এই চিরবিদায়ের আগে গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তিনি বলেছিলেন, ‘যেখানেই ছিলাম না কেন বা থাকি না কেন, সিলেট আমাকে খুব টানে। আমি আবার সিলেট যাব।’
তবে সেই যাত্রা যে শেষ যাত্রা হবে তা তো কারও জানা ছিলোনা।
আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেনন, তিনি তাঁর প্রিয় শহরে ফিরবেন ঠিকই, তাঁকে দেখতেও আসবেন মানুষজন। কিন্তু হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিমায় তাঁকে আর কথা বলতে কেউ দেখবেন না। এই শহর ছেড়ে, এই শহরের মানুষ ছেড়ে তিনি চলে গেলেন।
এর আগে দীর্ঘ আড়াই বছর পর গত ১৪ মার্চ আবুল মাল আবদুল মুহিত সিলেটে এসেছিলেন। করোনা পরিস্থিতিতে রাজধানী ঢাকার বাসা থেকে বাইরে তিনি খুব একটা বের হননি। তাই দীর্ঘ সময় সিলেটে আসা হয়নি। ২০২১ সালের ২৫ জুলাই তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত মার্চের শুরুতে আবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন কিছুদিন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে ১৪ মার্চ সিলেটে আসেন। সিলেট সিটি করপোরেশন ১৬ মার্চ তাঁকে ‘গুণী শ্রেষ্ঠ সম্মাননা’ দেয়। সে অনুষ্ঠানে মুহিত আবারও সিলেটে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তাঁর জীবন ‘মহাতৃপ্তি আর মহাপ্রাপ্তির’।
আবুল মাল আবদুল মুহিতের ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, তিনি যখনই সিলেট নিয়ে কথা বলতেন, তখনই তিনি নিজ শহরের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে গর্ববোধ করতেন। আলোকিত সিলেটের স্বপ্নদ্রষ্টাও ছিলেন তিনি। সিলেটের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুইবার অর্থমন্ত্রী ও সাংসদ থাকাকালে এই অঞ্চলের জন্য নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। যা তাঁকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এসব ছাড়াও তাঁর বিভিন্ন বইয়েও সিলেট নিয়ে তাঁর উচ্ছ্বসিত মন্তব্য রয়েছে। বিশেষত তাঁর আত্মজৈবনিক রচনা ‘সোনালি দিনগুলি’ (২০১৬) এবং ‘আমার সিলেট’ (২০১৯) বই দুটিতে মূলত সিলেটের প্রসঙ্গই ঘুরেফিরে এসেছে।
বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শোক জানিয়েছেন।
শনিবার দুপুরে রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে জন্মভিটা সিলেটে ফিরবেন মুহিত। আপন মাটিতেই শায়িত হবেন চিরনিদ্রায়।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশান আজাদ মসজিদে মুহিতের প্রথম এবং বেলা সাড়ে ১১টায় সংসদ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ২টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। তবে তার দাফনের স্থান ও জানাজার সময় এখনো নির্ধারণ হয়নি বলে জানা গেছে।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন জানিয়েছেন, শনিবার দুপুর ১২টায় নগরীর ধোপাদিঘী পাড়াস্থ হাফিজ কমপ্লেক্সে আবুল মাল আবদুল মুহিতের জানাজা ও দাফন বিষয়ে জরুরি সভা হবে। সভা থেকেই এ বিষয়টি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
Editor: Shahin Ahmed & Sadrul Islam Lukman
Office: Hoque Super Market, 3rd Floor, Zindabazar, sylhet.
Email: ekusheynet.syl@gmail.com
Contact: 01739447302