একুশেনিউজ ডেস্ক::
গুদাম সয়াবিনে ঠাসা। অথচ দোকানে নেই। ৫ লিটার বোতলের গায়ে ঘষামাজা। ৭৫০ টাকার স্থলে লেখা হয়েছে ৯৮০ টাকা। সয়াবিন তেল নিয়ে এ ধরনের নানা ঘটনা ঘটেই চলেছে সিলেটের বাজারে। আর এসব ঘটনা ধরা পড়েছে খোদ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানেও। তবুও টনক নড়ছে না সিলেটের খুচরা বিক্রেতাদের। অধিক লাভের আশায় তারা সয়াবিন মজুত করে রেখেছেন। নগরের তালতলার বিগবাজার। প্রথমেই জানিয়ে দেয়া হলো সয়াবিন নেই
এরপর বলা হলো; ৯৮০ টাকা দিলে দেখতে পারি খোঁজ করে একটি পাওয়া যায় কিনা। রাজি হলেই দেয়া হলো ৫ লিটারের সয়াবিন তেল। শুধু বিগবাজারই নয়, নগরীর জিন্দাবাজার, কাজিটুলা, আম্বরখানা, শিবগঞ্জ, মদিনা মার্কেটসহ কয়েকটি এলাকায়ও একই রকম দৃশ্য। বড় বড় শপেও নেই সয়াবিন। অথচ তাদের গুদাম সয়াবিনে ঠাসা। দাম আরও বাড়তে পারে এমন আশায় তারা মজুত করে রেখেছেন। ঈদের আগের পরিস্থিতি ছিল এ রকম। এক সপ্তাহ আগে থেকে হঠাৎ বাজারে সয়াবিনের সংকট।
পাইকারি কিংবা খুচরা বাজার সবখানেই সংকট দেখা দেয়। সরবরাহ কম বলে সংকট হচ্ছে- এমন দাবি করে ঈদ মৌসুমে সিলেটে ৮৫০ টাকা দরে ৫ লিটার সয়াবিন বিক্রি করা হয়েছে। আর খুচরা হিসেবে এক কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়। তাও আবার টাকা দেয়ার পর দোকানের বাইরে থেকে এনে দেয়া হয়। ঈদ পরবর্তী সময়েও সিলেটে সয়াবিনের সংকট কাটেনি। একইভাবে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছিলো। সরকার থেকে কেজিতে ৩৮ টাকা দাম বাড়ানোর পরও সংকট কাটছে না। আর এই সংকট দেখিয়ে ৭৫০ টাকা গায়ে লেখা ৫ লিটারের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৮০ টাকা দরে।
সিলেটের বাজারে সয়াবিনের সংকটের অভিযোগে গতকাল সকাল থেকে বাজার তদারকিতে নামে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।বেলা ১১টা থেকে এ অভিযান শুরু করে সিলেট জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়। অভিযানে সিলেটের কালীঘাট, কাজীরবাজার, লামাবাজার, মদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও টুকেরবাজারের তেলের ডিলারদের গোদাম ও দোকান তদারকি করা হয়। এ সময় তেল থাকা সত্ত্বেও বিক্রয় না করা, অতিরিক্ত মূল্যে তেল বিক্রয় করা, ঘষামাজা করে তেলের নির্ধারিত মূল্য পরিবর্তন করাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৭ প্রতিষ্ঠানকে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়।
তবে- নগরীর পাইকারি বাজার কালীঘাট এলাকায় কোনো গুদামে সয়াবিন মজুতের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কালিঘাটের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ছিল; তেল কোম্পানির ডিপোগুলো থেকে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না। বিষয়টি যাছাই করতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দুপুরের দিকে সিলেটের ডিপোগুলোতে তদারকি করতে অভিযান চালানো হয়।
এ সময় ডিপোগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়; কয়েকদিন ঈদের বন্ধ থাকার কারণে তেল সরবরাহ কিছুটা কম ছিল। তবে এখন থেকে তাদের কাছে পর্যাপ্ত তেল আসা শুরু হয়েছে এবং তারা নিয়মিত তেল সরবরাহ করবেন। অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিচালক শ্যামল পুরকায়স্থ ও মো. সেলিম মিয়া।
অভিযানে সার্বিক সহযোগিতা করেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স এর একটি টিম, র্যাব ৯’র একটি টিম ও ৭ এপিবিএন এর একটি টিম। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম মাসুদ জানিয়েছেন- এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
যদি সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে তাহলে বাজারে সংকট হওয়ার কথা না। যারাই সংকট দেখাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দোকানে না রেখে গুদামে রাখলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
সিলেটের সবক’টি পাইকারি ও খুচরা দোকানে তেলের গায়ে পুরনো মূল্য লেখা থাকলেও সেগুলো বিক্রি হচ্ছে নতুন দামে। মহাজনপট্টিতে ইনসাফ স্টোর গত শনিবার সয়াবিন বিক্রি করেনি। জানিয়ে দেয়, সয়াবিন নেই। আলম ব্রাদার্সে ১৬ লিটারের পাম ও সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছিল। পাম তেলের দাম ২ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা। কালীঘাট এলাকার হাজী বশর উদ্দিনের দোকানে ৫ লিটার সয়াবিন তেলের কিছু বোতল দেখা যায়। এসব তেলের বোতলের গায়ে ৯৮০ টাকা লেখা থাকলেও আগে সেখানে লেখা ছিল ৭৫০ টাকা। ফেরদৌস অ্যান্ড ব্রাদার্সে এক সঙ্গে সব পণ্য না কিনলে সয়াবিন বিক্রি করা হয় না।
কালিঘাটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- সয়াবিন তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অর্ডার নেয়া বন্ধ থাকার কারণে বাজারে সয়াবিন সংকট চলছে। বাজারে সরবরাহ বাড়লে সয়াবিন পাওয়া যাবে।
Editor: Shahin Ahmed & Sadrul Islam Lukman
Office: Hoque Super Market, 3rd Floor, Zindabazar, sylhet.
Email: ekusheynet.syl@gmail.com
Contact: 01739447302