একুশেনিউজ ডেস্ক::
এবারের অকাল বন্যা শুরুর দিকেই সিলেটের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনা এড়াতে নেয়া এই সিদ্ধান্তের কারণে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়। কেবল দরিদ্র মানুষই নয়, অনেক সামর্থ্যবানদেরও এ সমস্যায় নাজেহাল হতে হচ্ছে। এসব মানুষের পাশে ছুটে চলেছে মানবিক টিম সিলেটের তরুণ তুর্কিরা। ঘরে ঘরে গিয়ে তারা বিশুদ্ধ পানি তুলে দিচ্ছেন গত ৪/৫ দিন ধরে।
চাহিদার তুলনায় তা খুব বেশি না হলেও মানবিক টিমের সদস্যরা তাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা দিয়েই মানুষকে সেবা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ৪ দিনে প্রতিদিন গড়ে তারা ২ হাজার লিটারের বেশি বিশুদ্ধ পানি দিয়েছেন বন্যার্তদের।
প্রতিদিন নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তারা তাদের মানবিক দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন রাতে তারা নগরীর বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্ট থেকে পানির শূণ্য বোতল সংগ্রহ করেন। পরদিন সকাল থেকে সেই বোতলগুলো ধোয়ে জীবানুমুক্ত করা হয়।
এরপর চলে যান তারা নগরীর পুলিশ লাইনে। সেখানে চলে বোতলে পানি ভরার কাজ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা পানি ভর্তি করে বোতলগুলো সাজিয়ে রাখেন। এরপর বিকেলের দিকে সেই বোতলগুলো ভ্যানে বা ঠেলাগাড়িতে করে নিয়ে যান বিভিন্ন বন্যাক্রান্ত এলাকায়। তুলে দেন বিশুদ্ধ পানির অভাবগ্রস্ত মানুষের হাতে।
মানবিক টিমের সদস্যরা জানান, ইতমধ্যে তারা নগরীর কদমতলি, উপশহর ই, সি, জে, জি, এইচ, লামা ঘাসিটুলা, কলাপাড়া, কামালগড়,মাছিমপুর, ছড়ারপাড়, বেতেরবাজার ইত্যাদি এলাকায় গড়ে প্রতিদিন বন্যার্তদের হাতে দু’হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি তুলে দিচ্ছেন।
তারা জানান, আগে তারা কেবল পানির বোতল সংগ্রহের পর সেগুলো জীবানুমুক্ত করে পানি সরবরাহ করতেন। তাদের কাজে অনুপ্রানিত হয়ে একজন সমাজসেবক তাদের একটি বড় ট্যাংক কিনে দিয়েছেন। এখন সেই ট্যাংক ভর্তি পানি নিয়ে তারা বানবাসীদের কাছে যাচ্ছেন। যখন যে এলাকায় যাচ্ছেন, সেখানে গিয়ে হ্যান্ড মাইকে যাদের পানি প্রয়োজন তাদের নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। এতেই নির্দিষ্ট এলাকায় সাড়া পড়ে। যাদের দরকার তারা প্রয়োজনীয় পানি নিয়ে যান। তাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন সংশ্লিষ্টরা।
মানবিক টিমের সাথে জড়িতরা নানা পেশায় নিযুক্ত। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পর বানবাসীদের পাশে তারা দাঁড়াচ্ছেন। কেবল বানবাসীই নয়। এর আগে করোনার প্রদুর্ভাবে লকডাউনের সময়ও তারা এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন নির্ভরতার প্রতীক হয়ে। এই টিমের সদস্য সংখ্যা ১০ জন। সবাই স্বেচ্ছাসেবক। কারও কোন পদবী নেই।
তবে তাদের কাজকর্ম সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি সার্ভিসের নায়েক মো. সফি আহমেদ পিপিএম। তিনি বিভিন্ন সময়ে সেবামূলক তৎপরতার কারণে গণমাধ্যমে উঠে এসেছেন অনেকবার। তার সাথে যারা আছেন তাদের মধ্যে কেউ সাংবাদিক কেউবা ব্যবসায়ী কেউবা অন্যান্য কাজ করছেন।
এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে সফি বলেন, বিশুদ্ধ পানির চাহিদা অনেক। বন্যার্তরা সাহায্যের অপেক্ষায়। আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করছি। তবে এরকম আরও অনেক টিম প্রয়োজন।
তিনি তাদের কাজে যারা নানাভাবে সাহায্য সহযোগীতা করছেন, সমর্থন দিচ্ছেন তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।