নিজস্ব প্রতিবেদক::
নতুন করে সিলেটের ৬ উপজেলায় পানি ঢুকছে। কুশিয়ারা নদীর বন্যার নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন লাখ লাখ মানুষ। থমকে যাচ্ছে সিলেটের জনজীবন। এদিকে- নগরে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। পানিবন্দি মানুষের মধ্যে বিশেষ করে খাবার পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। অনাহারে, অর্ধাহারে রয়েছে বানভাসি মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, সিলেটে নতুন করে কুশিয়ারা নদীতে পানি বেড়েছে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় পানি ইতিমধ্যে ডেঞ্জার জোন অতিক্রম করেছে। এছাড়া কানাইঘাটে সুরমা, জকিগঞ্জে অমলসীদ, বিয়ানীবাজারে শ্যাওলা ও সিলেটের সুরমার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কেএম নিলয় পাশা গতকাল জানিয়েছেন, বিভিন্ন স্থানে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। অমলসীদে বাঁধ কেটে দেয়ার কারণে পানি ঢুকছে। অন্তত ২০ গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
তিনি জানান, যেসব এলাকায় এখনো বাঁধ আছে সেগুলোকে রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তরফ থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির আশা প্রকাশ করেন তিনি। আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, সিলেটে এবার বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে। এছাড়া উজানে বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত কমে যাবে বলে জানান তিনি। পানি প্রবেশের মুখ সিলেটের জকিগঞ্জ। সুরমার ডাইক উপচে পানি ঢুকে পড়ায় উপজেলার ৮০ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পৌরসভার কাউন্সিলররা জানিয়েছেন, অনেক স্থানে কুশিয়ারার বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তিনি জানান, ঢল অব্যাহত থাকায় অনেক স্থানে বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। জকিগঞ্জ প্লাবিত হওয়ায় শ্যাওলায় পানি বেড়েছে। বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরেও পানি বেড়েছে।
ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এদিকে সিলেট নগরে পানি কমছে। তবে এখনো নগরীর উপশহর, ঘাষিটুলা, বেতরবাজার, কানিশাইল, মাছিমপুর, বাণিজ্যিক এলাকা কালীঘাট, সুবহানীঘাট, যতরপুরসহ কয়েকটি স্থানে হাঁটু পরিমাণ পানি রয়েছে। কিছু স্থানে পানি নেমে যাওয়ায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠছে। কালিঘাটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বন্যায় অন্তত তাদের ২০ কোটি টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে। গোটা কালিঘাটই ছিল পানি নিচে। এ কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বন্ধ থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে যাওয়ায় তারা মালামাল সরাতেও পারেননি। কাজিরবাজার এলাকাও পানির নিচে। সিলেট নগরের ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো মানুষ রয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, আশ্রয়কেন্দ্রে যারা আছেন তাদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, বন্যায় যাতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি না হয় সেজন্য পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে জরুরি ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বন্যার কারণে সিলেট নগরীর ৬ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭৪টিতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশনা না থাকলেও পানি উঠে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানি সরে গেলে ফের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হবে। এদিকে জেলা সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকায় মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবের ত্রাণ বিতরণ: সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বন্যাদুর্গতদের পাশে রয়েছে। ত্রাণসহ বন্যাপরবর্তী ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে। তিনি সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের মানবিক কারণে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি গতকাল দুপুরে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালবাজার ইউনিয়নে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণকালে একথা বলেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত লায়লা নীরা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাজ্জাক হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদরুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাধন কান্তি সরকার, কামালবাজার ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক, কামালবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার আলী, সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা মো. ফারুক আহমদ মেম্বার, খলিলুর রহমান, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবুল মিয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মনজুর আলী, জেলা ছাত্রলীগ নেতা আবদুর রহমান, জাবেদ আহমদ, নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।
মহানগর বিএনপির ত্রাণ বিতরণ: বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেছেন, জাতির যেকোনো দুর্যোগে বিএনপি সব সময় জনতার পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। মহানগর বিএনপির উদ্যোগে নগরীর ২৩ ও ২৪নং ওয়ার্ডের বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যাদুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকীর সভাপতিত্বে ত্রাণ বিতরণকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সিলেট মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুব চৌধুরী, মুর্শেদ আহমদ মুকুল, নুরে আলম সিদ্দিকী খালেদ, মতিউল বারী খুর্শেদ ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, ২৪নং ওয়ার্ড বিএনপি আহ্বায়ক সাবুল চৌধুরী প্রমুখ।
অমলসীদ ডাইক পরিদর্শনে সিলেট জেলা বিএনপি: বিপর্যয় ঠেকাতে দ্রুত মেরামতের আহ্বান জানিয়ে জকিগঞ্জ উপজেলার অমলসীদ এলাকায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উৎসস্থলের একটি ডাইক (নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ) পরিদর্শন করেছেন সিলেট জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। গতকাল বিকালে জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে জেলা বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ডাইক পরিদর্শন করেন।
এসময় জকিগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, সরকারের গাফিলতির কারণে জকিগঞ্জের অমলসীদের ডাইক ভেঙে পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ দ্রুত প্লাবিত হচ্ছে। সর্বত্র মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কার্যকর উদ্যোগ নিলে দ্রুততম সময়ে ডাইকটি মেরামত করা সম্ভব। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, সরকার শুধু দুর্নীতি আর লুটপাটে ব্যস্ত রয়েছে। বন্যাদুর্গতদের কল্যাণে সরকার কোনো ভূমিকা পালন করছে না। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, কানাইঘাট উপজেলার সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ, জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি শফিকুর রহমান, জকিগঞ্জ পৌর সভাপতি মাসুক উদ্দিন প্রমুখ।