নিজস্ব প্রতিবেদক:: সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার ক্ষত শুকায়নি এখনও। অনাহারে-অর্ধহারে থাকা বানভাসিরা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর নিরন্তর চেষ্টায়।
সংকট কাটিয়ে ওঠার আগেই হাজির বর্ষা। মৌসুমের স্বাভাবিক বৃষ্টি যেখানে ভয় ধরাচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষের মনে। সেখানে ভারী বর্ষণ ফের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে। এমন অবস্থায় আবারও বিপদ সংকেত। সিলেট অঞ্চলে প্রতি দিন সমানতালে হচ্ছে ভারী বর্ষণ। অতি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ফের বাড়ছে নদ-নদীর পানি।
সোমবার (৬ জুন) ভোরে মাত্র ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উজানে বরাক উপত্যাকায়ও বিরামহীন ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এতে সিলেটের নদ-নদীর পানি বেড়েই চলছে। যে কারণে আবারও বড় বন্যার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা।
এরইমধ্যে সুরমার পানি ফের বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে। কুশিয়ারাসহ অন্য নদীগুলোর পানিও বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই অবস্থা। আর বর্ষাকাল শুরুর আগেই আরেক দফা বন্যার পদধ্বনিতে আতঙ্কে আছেন সিলেটের মানুষ।
এ অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কপালেও দুশ্চিন্তার বলিরেখা এঁটে দিচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত। আগামী ১০ দিন প্রবল বর্ষণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাকে খোদ আবহাওয়াবিদরাও হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রোববার (৫ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার (৬ জুন) সকাল ৬টা পর্যন্ত কেবল রাতেই ৯৮ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। রাত ৩টার পর মাত্র ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, তথা কম সময়ের ভেতরে বেশি বৃষ্টিপাত। আর সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাত্র ৮ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তাতে অনুমেয় রাতেই বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের আবহাওয়াবিধ সাঈদ আহমদ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আগামী কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ হলেই হতাশার খবর। আর প্রতি দিন রাত ৯টার পর থেকে বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী ১১, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৫ জুন আরও ভারী বর্ষণ হবে।
তিনি বলেন, রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৪৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আরও ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যদিও বর্ষা মৌসুমে ৩শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড আছে। তবে, বরাক অববাহিকায় ওপরে প্রচুর মেঘ রয়েছে। ফলে সিলেটের উত্তর-পূর্বে ভারী বৃষ্টিপাত হলে ফের বন্যাকবলিত হবে। গত রোববার পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টায় বরাক অববাহিকায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ওইদিনের হিসাব অনুযায়ী গত ৭২ ঘণ্টায় সিলেটে ১৬৫ দশমিক ৯ মিলিমিটার, জৈন্তাপুরে ১৭৩ দশমিক ৯, গোয়াইনঘাটে ১৮৬ দশমিক ৭, জকিগঞ্জে ১২৮ দশমিক ৫ এবং কোম্পানীগঞ্জে সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
আগামী ১০ দিন পূর্বাবাস দিয়ে তিনি আরও বলেন, এই সময়ে সিলেটে ৪৮৭ মিলিমিটার, জৈন্তাপুরে ৭৪৭, গোয়াইঘাটে ৭৪৫, জকিগঞ্জে ৩৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর জুন মাসে ১ থেকে ৫ তারিখ বিকেল পর্যন্ত ৩৬৪ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এছাড়া শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি তথা বাংলাদেশ সীমানা থেকে স্কয়ার ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ওপরে দেখা গেছে, জকিগঞ্জ তথা সিলেটের উত্তর-পূর্ব দিকে বৃষ্টি আছে বেশি রয়েছে। যা তুলনামূলক অন্য জায়গাগুলোতে নেই বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, উজানের বৃষ্টিপাতের কারণে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহমান ছিল। এছাড়া সিলেটে সুরমা, আমলসীদ, বিয়ানীবাজারের শেওলা, মৌলভীবাজারের শেরপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারা পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে। সেসঙ্গে কানাইঘাটের লোভাছড়া, গোয়াইঘাটের সারি ও কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রমের পর্যায়ে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপ প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, সাম্প্রতিককালের বন্যা গত ১৮ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। ২০০৪ সালের বন্যাকে ছাড়িয়ে যায়। সামনে বর্ষাকাল। অথচ এখনই যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হচ্ছে তাতে ফের বন্যাকবলিত হবে সিলেট। এরইমধ্যে সুরমা-কুশিয়ারার পানি ক্রমশ; বৃদ্ধি পাচ্ছে।
Editor: Shahin Ahmed & Sadrul Islam Lukman
Office: Hoque Super Market, 3rd Floor, Zindabazar, sylhet.
Email: ekusheynet.syl@gmail.com
Contact: 01739447302