ভারতে বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও দিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান নবীন কুমার জিন্দাল রাসূল (সা) কে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে ও মহানবী (স.) এর অবমাননাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট মহানগরীর উদ্যোগে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়েছে। শুক্রবার (১০ জুন) বাদ জুমআ নগরীর প্রত্যেক মসজিদ থেকে ইমামদের নেতৃত্বে খন্ড খন্ড মিছিল এসে সিটি পয়েন্টে এসে জমায়েত হতে থাকে। ফলে মুসল্লিদের গণ-মিছিল গণ-জুয়ারে পরিণত হয়।
জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট মহানগরী সভাপতি মাওলানা হাবীব আহমদ শিহাবের সভাপতিত্ব এবং সেক্রেটারী মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, সহ সাংগঠনিক মাওলানা আবিদ হাসান, প্রচার সম্পাদক মাওলানা মাছুম আহমদের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মিছিল পূর্ববর্তী বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতারা বিশ্বের মুসলমানদের কলিজায় আঘাত করেছে। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শের অধিকারী মুসলমানদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এবং তার সহধর্মিনী মুসলিম উম্মাহর আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) নিয়ে বিজেপির উগ্র সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী ও মুসলিম বিদ্বেষীরা যে জঘন্য ও কূরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য।
তাই ভিন্ন ধর্মের উপর আঘাতকারী সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্টকারী এসকল উগ্র নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের নিকট বাংলাদেশের ১৮ কোটি মুসলমানদের পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি। জনসমুদ্রে বক্তাগণ বলেন, বাংলাদেশে সবসময় আলেম-উলামা ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থে আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে থাকতেন। কিন্ত এবার আমরা লক্ষ্য করেছি, আলেম-উলামাদের পাশাপাশি ঈমানী আন্দোলনে কলেজ ইউনিভার্সিটির ছাত্র শিক্ষকসহ দেশের সর্বস্তরের আপামোর তৌহিদী জনতা মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এজন্য জাতীয় ইমাম সমিতির পক্ষ থেকে সকলকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
সমাবেশে ইমাম সমিতির পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। তা হলো, ১। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ থেকে বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা:) এর অবমাননার প্রতিবাদে ভারতের প্রতি রাষ্ট্রীয়ভাবে নিন্দা প্রস্তাব পাঠাতে হবে, ২। অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর ন্যায় বাংলাদেশেও ভারতীয় হাইকমিশনকে তলব করে অপরাধীদের চূড়ান্ত বিচার নিশ্চিত করতে হবে, ৩। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য বিশ্বের সকল দেশে ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি আইন কার্যকর করতে হবে, ৪। নূপুর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দালের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি মুসলিম দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভারতীয় পন্য বয়কট করতে হবে, ৫। বাংলাদেশের ৩ লক্ষ মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের স্বার্থে সরকার কর্তৃক প্রণীত মসজিদ পরিচালনার নীতিমালা গেজেট আইন আকারে বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সিলেট দরগাহ মাদ্রাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি। বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়বে আমির মাওলানা রেজাউল করিম জালালি, সিলেট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোস্তাক আহমদ খান, সিলেট জেলা জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শায়খুল হাদীস আতাউর রহমান কোম্পানীগঞ্জী, মহানগর জমিয়তের সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোট নেতা পীর আসলাম রহমানি, ইমাম সমিতি জেলা সেক্রেটারী জালালুদ্দীন ভুঁইয়া, বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন মাওলানা নুরুল হক নবীগঞ্জী, মহানগর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হক, দারুল আজহারের প্রিন্সিপাল মাওলানা মনজুরে মাওলা, জাতীয় ইমাম সমিতির মহানগর সহ-সভাপতি মাওলানা শহিদ আহমদ, মাওলানা আহমদ হুসাইন, মাওলানা মুফতি বুরহান উদ্দিন, মাওলানা নূর আহমদ ক্বাসিমি, মাওলানা হিফজুর রহমান, মাওলানা আব্দুস সালাম, হাফিজ মাওলানা মুফতি আব্দুর রহমান শাহজাহান, মাওলানা আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী, হাফিজ মাওলানা আব্দুস সামাদ, ক্বারী মুখতার আহমদ, মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, মাওলানা আব্দুশ শহীদ, মাওলানা লিয়াকত হোসাইন, মাওলানা সোহাইব আহমদ, মাওলানা আব্দুল হাসিব, হাফিজ মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা মনির হোসাইন, মাওলানা জরিফ উদ্দিন, মাওলানা রায়হান উদ্দিন, মাওলানা রহমত আলী, মাওলানা সালেহ আহমদ, মাওলানা আশিকুর রহমান, মাওলানা মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। সমাবেশে বিশ্বনবীর মহব্বতে নাতে রসূল উপস্থাপন করেন হাফিজ আব্দুল করিম দিলদার। সর্বশেষ দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে মুনাজাতের মাধ্যমে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।