সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::
টানা বর্ষণ আর ভারতের পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যায় কবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ। জেলাটির ১১টি উপজেলার সবগুলোই পানিতে তলিয়ে গেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ। বন্ধ রয়েছে নিত্যপণ্য সরবরাহ। টানা তিনদিন বিদ্যুৎহীন গোটা জেলা। একপ্রকার অন্ধকারে বসবাস করছে এই জেলার লাখ লাখ মানুষ। কারো বাড়িতে কোমর পানি, করো বাড়িতে বুক পানি। অনেকে বাড়ি ছেড়ে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন দোতলা-তিনতলা বাড়ির ছাদে, কেউবা আশ্রয় নিয়েছেন বাড়ির টিনের চালে, কেউ আবার আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তার পাশে আটকে পড়া পরিত্যক্ত গাড়ির ছাদে।
সেখানেও এক অমানবিক পরিবেশ। নেই খাবার, নেই বিশুদ্ধ পানি। প্রাণ বাঁচাতে হাহাকার করছেন শিশুরা। তীব্র খাবার সঙ্কট পুরো জেলাতেই।
মানবজমিনের ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদের ক্যামেরায় উঠে এসেছে সুনামগঞ্জের বন্যার বিভীষিকার চিত্র। ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাস্তার পাশে পানিতে ডুবে যানবাহন। তলিয়ে আছে বাড়িঘর। কোথাও কোন শুকনো জায়গা নেই। গোটা জেলা যেন সুনসান বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। জীবন আহমেদ জানান, সকাল সাড়ে ৭টায় সিলেটের টোকেরবাজার ব্রিজ থেকে রওনা হয়ে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পাগলাবাজার পৌঁছতেই দুপুর হয়ে যায়। এই ২৫ কিলোমিটার সড়কের দুপাশে চোখে পড়েছে প্রলয়ঙ্করী বন্যার ক্ষতচিত্র। ভয়াবহ এই বন্যায় আশ্রয়হীন মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যাদের ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে তারা রাস্তার দু’পাশে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে কোনরকম বসবাস করছেন। কেউ আবার একতলা বাড়ির খোলা ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে আবার রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত ট্রাকের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার যেসব গাড়ি বন্যার পানিতে সড়কের পাশে আটকে আছে সেসব গাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছে গৃহহীনরা। কেউ আবার ডুবে যাওয়া বাড়ির টিনের চালে তোষক বিছিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি জানান, রাস্তার পাশে আশ্রয় নেয়া অনেকে আমাকে জানিয়েছেন, বন্যায় তাদের বাড়িঘর ভেঙে গেছে। পানি কমলেও আশ্রয় নেয়ার মতো তাদের ঘর নেই। তাদের সব নিয়ে গেছে প্রলয়ঙ্করী বন্যা। তিনি আরও জানান, সুনামগঞ্জের বন্যাপীড়িতরা সবচেয়ে বেশি খাবার সঙ্কটে ভুগছেন। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় নিত্যপণ্য সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে গোটা জেলাজুড়ে খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আশপাশের দোকান থেকে যৎসামান্য শুকনো খাবার খেয়ে কোনরকমে জীবন বাঁচাচ্ছেন তারা। খাবারের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষ আহাজারি করছেন।
এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে গেছে সুনামগঞ্জের কবরস্থান-শ্মশান। মানুষ মারা গেলে দাফন ও সৎকার করার কোন জায়গা নেই। অনেকে মৃতদেহ নৌকাযোগে অন্য জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন দাফন করার জন্য। ওদিকে সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও এখনো বাড়িঘর ডুবে আছে। তলিয়ে আছে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কও। এদিকে তিনদিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় সুনামগঞ্জের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করতে পারছেন না। অনেকে উদ্বেগ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিচ্ছেন।
Editor: Shahin Ahmed & Sadrul Islam Lukman
Office: Hoque Super Market, 3rd Floor, Zindabazar, sylhet.
Email: ekusheynet.syl@gmail.com
Contact: 01739447302