• ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৪ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

আশ্রয়কেন্দ্রে বেশি ঝুঁকিতে নারীরা

admin
প্রকাশিত জুলাই ৩, ২০২২
আশ্রয়কেন্দ্রে বেশি ঝুঁকিতে নারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক::
সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যাদুর্গত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে নারী ও মেয়েরা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ যৌথ মিশনের সদস্য ও বিশেষজ্ঞরা।বন্যাদুর্গত এলাকায় ৬০ হাজার সন্তানসম্ভবা নারী রয়েছেন। তাদের পর্যবেক্ষণ করছে জাতিসংঘ যৌথ মিশন। এছাড়া নারী স্বাস্থ্যের সুরক্ষা ও শিশু শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষিখাতে সহায়তা, গৃহনির্মাণ এবং ওয়াশ বা স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করবে তারা।

সুনামগঞ্জে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পর শনিবার (২ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় সিলেট নগরের অবস্থিত একটি পাঁচ তারকা হোটেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের যৌথ মিশনের সদস্য ও বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন- প্রতিনিধি দলের প্রধান বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক জিন লুইস, জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল-ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ক্রিস্টিন ব্লখুস, বাংলাদেশে ইউনিসেফ প্রতিনিধি মি. শেলডন ইয়েট, ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর এফসিডিও মাট ক্যানেল, ইউরোপীয় কমিশন বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইসাবেলা ডা’ডট এবং স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সাজিদ রায়হান।

জিন লুইস বলেন, সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার যেসব এলাকা পরিদর্শন করেছি, সেখানে এখনো শুধু পানি আর পানি। এ আকস্মিক বন্যায় সিলেট বিভাগের চার জেলাসহ দেশের মোট ৯টি জেলার ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন (প্রায় ৭২ লাখ) মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯টি জেলার মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, শেরপুর। এর মধ্যে সিলেটে বেশি পানি হলেও বন্যা মোকাবিলায় মানুষের তুলনামূলক সক্ষমতা ছিল। তবে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার অবস্থা সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ।

তিনি আরও বলেন, বন্যায় ১ হাজার ৬০৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫ লাখ লোক বসবাস করছে, যারা গৃহহীন হয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে নারী ও মেয়েরা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন। স্যানিটেশন ব্যবস্থা নাজুক। এছাড়া বন্যাদুর্গত এলাকায় সন্তানসম্ভবা প্রায় ৬০ হাজার নারী আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।

জাতিসংঘের যৌথ মিশনের প্রতিনিধিরা বলেন, বন্যায় অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অবকাঠামোগত ও সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় (ডিডিএম) ও কেয়ারের নেতৃত্বে নিডস অ্যাসেসম্যান্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (নেএডাব্লিউজি) কাজ শুরু করেছে। তারা প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে। তাদের জন্য ৫৮ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

তারা আরও জানান, তাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে এটি দেশের অভ্যন্তরে বড় দুর্যোগ হলেও সরকার সামাল দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। যেহেতু সরকার পদ্মা সেতুর মতো অবকাঠামো করতে পেরেছে। এরপরও জাতিসংঘের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) ও যুক্তরাষ্ট্র ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছে। এর কিছু কিছু সরকারের মাধ্যমে এবং এনজিও সংস্থাগুলোর মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে খাদ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। ছয় মাসব্যাপী (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) বন্যাদুর্গত এলাকায় খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি, স্যানিটেশন, হাইজিন, নারী ও শিশু সুরক্ষা এবং শিক্ষা, গৃহনির্মাণে আর বড় পরিসরে কাজ করা হবে।

এর আগে প্রতিনিধি দলটি শনিবার বেলা ১১টায় সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে। এ সময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও শিশুদের সঙ্গে কথা বলে তারা। পরে বিভিন্ন হাউজিং সামগ্রী বিতরণ করে। বিকেলে তারা সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস ও ইপিআই ভবন পরিদর্শন এবং জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম দেয়। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক জিন লুইস।

রোববার (৩ জুলাই) জাতিসংঘের যৌথ মিশনের প্রতিনিধি দল সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।