নিজস্ব প্রতিবেদক::
মুসলমানদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। আজ সৌদি আবরসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পবিত্র ঈদ পালিত হচ্ছে। আগামীকাল রোববার দেশের মাটিতে ঈদ পালন করা হবে।
তবে, প্রতিবারের মতো এবার ঈদুল আযহা আনন্দ নিয়ে হাজির হয়নি, এক ভিন্ন ঈদ নিয়ে হাজির হয়েছে ঈদুল আযহা। এবার ঈদে হাসি ফুটবে না সিলেটের কয়েক লক্ষ পরিবারে।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, প্রাকৃতি দুর্যোগ-বন্যা আর মহামারির কষাঘাতে এবার কয়েক লাখ পরিবারের ঈদের আনন্দ বিলীন হয়ে গেছে।
দিন দিন দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। নিয়ন্ত্রণে আসার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তার ওপর জ্বালানি খাতেও চলছে অস্থিরতা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গ্যাস সংকটের কারণ দেখিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তুুতি চলছে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আরেক দফা বাড়বে তা বুঝতে বাকি নেই।
ফলে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। বন্যা ও করোনা মোকাবেলায় খোদ সরকার নি¤œ ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা করেছে। ব্যক্তি উদ্যোগেও কোটি কোটি টাকা সিলেট ও সুনামগঞ্জে বিতরণ করা হচ্ছে।
তবুও ঈদ উদ্যাপনে খরচের বাজেট কাটছাঁট করতে হচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষগুলোকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ নি¤œ আয়ের। তাছাড়াও এবারের পরপর ২ বার বন্যায় এ হার আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের ক্রয়ক্ষমতা যেকোনো সময়ের তুলনায় খারাপ অবস্থায় তা স্পষ্ঠ দেখা যাচ্ছে। বাড়ি নেই, ঘর নেই। মাথা গোজাবার ঠাই নেই। সবই পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। অনেকের বাড়ি ঘরের চিহ্নটুকু নেই। কৃষিপ্রধান এলাকা সুনামগঞ্জ, প্রত্যেক ঘরে বৈশাখী ধান ছিল। সবই বানের জলে ভেগে গেছে। খাবার নেই। উপরে আকাশ আর নিচে পানি ছাড়া তারা আর কিছুই দেখতে পারছেন না। এ সবকিছু মিলিয়ে সুনামগঞ্জবাসী জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহুর্ত পার করছে। স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ পরিবার। বিশেষ করে বন্যায় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের মানুষের জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত।
দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, সিলেট জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৫ লাখ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। গত বুধবার মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, এখনো প্রায় ৩৩৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩০ হাজার লোক অবস্থান করছে। অর্থাৎ, তাদের ঘরে ফেরার অবস্থা নেই। কিংবা তাদের বাড়িঘর ঢলের পানিতে ভেসে গেছে। এই জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে প্রায় ২৮ হাজার মানুষ।
বলা হয়, ঈদ আনন্দ নিয়ে আসে। কিন্তু এবারের ঈদে সিলেট ও সুনামগঞ্জবাসীর কাছে কোন আনন্দ নেই। আছে মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসার তী² অভিজ্ঞতা।