রায়পুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জস্থ বাংলাবাজারে গরুর হাটের ইজারা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষে প্রায় ১০জন আহত ও ১জন নিহত হয়েছেন। (১৩ আগস্ট) শনিবার দুপুর ১২টায় বর্তমান চেয়ারম্যান জাফর উল্লাহ দুলাল হাওলাদার ও সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল্ল্যাহ বিএসসি এই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে।
খবর পেয়ে রায়পুর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সংঘর্ষে নিহত মোহাম্মদ হারুন (৩৫) স্থানীয় চর-আবাবিল গ্রামের মৃত মাসুক উদ্দিনের পুত্র ও বর্তমান চেয়ারম্যানের পক্ষের লোক। সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনায় বর্তমান চেয়ারম্যানের পুত্র রাশেদুল ইসলাম অপু বাদী হয়ে রায়পুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।
জানা যায়, ১নং চর-আবাবিল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জাফর উল্ল্যাহ দুলাল হাওলাদার ও সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল্ল্যাহ বিএসসি এর মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে ইউপি নির্বাচন নিয়ে বিরুধ চলে আসছে। এতে করে স্থানীয় এই দুই নেতার অনুসারী লোকদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া বিবাধ ও মারামারি ঘটে। সম্প্রতি স্থানীয় বাংলাবাজারে গরুর বাজারের ইজারা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ঘটনার দিন দুপুর ১২টার দিকে বাংলাবাজারে বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যানের মধ্যে গরুর বাজারের ইজারা নিয়ে প্রথমে বাকবিতন্ডা ঘটে। এক পর্যায় দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও হামালা পাল্টা হামলা চালায়। এসময় বাংলাবাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। খবর পেয়ে রায়পুর থানার একদল পুলিশ তাৎক্ষণিক ভাবে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষে প্রায় ১১ জন আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তন্মধ্যে মাথায় জখম প্রাপ্ত রক্তাক্ত গুরুতর আহত মোহাম্মদ হারুন কে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মোহাম্মদ হারুন বর্তমান চেয়ারম্যান জাফর উল্ল্যাহ দুলাল হাওলাদারের পক্ষের লোক। পুলিশ হাসপাতালে প্রাথমিক সুরতহাল শেষে লাশ প্রথমে থানায় নিয়ে যায়। পরে ময়না তদন্তের জন্য নিহতের লাশ লক্ষীপুর জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়।
নিহত ও সংঘর্ষের ঘটনায় বর্তমান চেয়ারম্যানের পুত্র রাশেদুল ইসলাম অপু বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ২০ জনকে আসামী করে রায়পুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।তারিখ ১৩/০৮/২০২২ইং। মামলার আসামীরা হলেন রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ গ্রামের খলিলুর রহমানের পুত্র শহীদুল্ল্যাহ বিএসসি (৬০), হায়দরগঞ্জ গ্রামের জমির উদ্দিনের পুত্র নাজিম উদ্দিন (৪৫), হায়দরগঞ্জের করিম উল্ল্যাহ এর পুত্র মাহি উল্যাহ (২৯), চর-আবাবিল গ্রামের আরমান সরকারের পুত্র সজিব সরকার নিপু (২৫), চরপঙ্কী গ্রামের মজিদ মিয়ার পুত্র আরিফুল ইসলাম (৩১), হায়দরগঞ্জের আব্দুল আজিজের পুত্র রাজ্জাক উদ্দিন (৪৩), চর-আবাবিল গ্রামের মুহিবুর রহমানের পুত্র সোহেল আহমদ (৩৭), ঝাউডগী গ্রামের সফিক উদ্দিনের পুত্র কাউসার আহমদ (২৮), কাঠেরপুল গ্রামের আব্দুল করিম এর পুত্র জসিম উদ্দিন (৩০), চর-আবাবিল গ্রামের মোঃ মাইন উদ্দিন এর পুত্র এমরান হোসেন (২২), কুচিয়ার মোড় গ্রামের মাসুক উদ্দিনের পুত্র আসফাক আহমদ (২৯), সরদার কান্দি গ্রামের বাবুল হোসেনের পুত্র নুরুল আমিন (৩০)।
এ বিষয়ে রায়পুর থানার অফিসার ইনচার্জ শিপন বড়ুয়া বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক সুরতহাল শেষে নিহতের লাশ থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে ময়না তদন্তের জন্য লাশ লক্ষীপুরস্থ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশী অভিযান চলছে। আইনের হাত থেকে কোন অপরাধী রেহাই পাবে না।