একুশেনিউজ ডেস্ক : দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৩১তম আসন সিলেট-৩। উপ-নির্বাচনসহ গত চারবার এ আসন আওয়ামী লীগের দখলে। তবে ভালো সংখ্যক ভোট আছে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অর্ধডজন নেতা।
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন দৌড়ে মাঠে সক্রিয় তিন হেভিওয়েট প্রার্থী বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল। এছাড়া মাঠে আছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাহিদ। সাবেক এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরীও প্রার্থী হতে পারেন এই আসনে।
অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের এপিএস আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর। পাশাপাশি শফি আহমেদ চৌধুরীও আছেন মাঠে।
আসনটির তিন উপজেলায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সঙ্গে হানাহানি না থাকলেও সংগঠন আছে দু’দলেরই। স্থানীয়রা বলছেন, ভোটেও দু’দল সমানে সমান। প্রার্থীর ব্যক্তি জনপ্রিয়তা, দলের নির্বাচনী চমক এবং দলের বাইরের ভোটাররা ঠিক করেন, কে হবেন এমপি!
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বলছেন, এখানে তাদের অবস্থান বেশ সৃদৃঢ়। সংগঠনগুলো সক্রিয়। করোনাভাইরাস ও বন্যায় মানুষের পাশে থেকে তাদের সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন।
বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, করোনার মধ্যেও উপ-নির্বাচনে জনগণ এক লাখ ভোটে আমাকে নির্বাচিত করেছে। আমিও সাধ্যমতো করোনা এবং সাম্প্রতিক বন্যায় মানুষের পাশে ছিলাম। পাশাপাশি আমি যে উন্নয়নের কথা বলেছিলাম, অনেক ক্ষেত্রেই সেটা করতে সক্ষম হয়েছি। এখানে সাংগঠনিক অবস্থা খুবই ভালো। আমার তিন উপজেলায় (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী। তিন উপজেলার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন নিয়েই আমি কাজ করছি। সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার যে যোগাযোগ এবং সখ্য তা আগামী নির্বাচনেও আমাদের বিজয় এনে দেবে ইনশাআল্লাহ।
মনোনয়নের বিষয়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাহিদ বলেন, আমি গত দুবার মনোনয়ন চেয়েছি। এবারও চাইবো। এখানে তো অনেক প্রার্থী, কারও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা স্বল্প সময়ের, কেউ আর্থিক সঙ্গতিকে যোগ্যতাক মনে করে মনোনয়ন চায়। আমরা তো দুর্দিনে তৃণমূল থেকে উঠে এসেছি। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে এসে এখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। দুবারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান। এলাকায় সব সংগঠন ও সবার সঙ্গে যোগাযোগ আছে। জনসাধারণের কাছে ভালো পরিচিত হিসেবেই আছি।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন বলেন, আমিও এলাকায় কাজ করছি। আমি আশা করছি, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবো, ইনশাআল্লাহ।
দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৩১ নম্বর আসন সিলেট-৩। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ২২ হাজার ২৯৩। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৬৮ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪২৫।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, আসনটি দুবার ছিল জাতীয় পার্টির দখলে। একবার বিএনপি ও টানা তিনবার এবং উপ-নির্বাচনসহ চারবার আওয়ামী লীগের কব্জায়। স্বাভাবিকভাবেই নৌকার ভোট বেশি। দলগতভাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থাও ভালো। ব্যক্তি হিসেবে প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ছিলেন বেশ জনপ্রিয়। এ আসনটিতে তিনি নৌকার বলয় গড়তে সক্ষম হয়েছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৮৭ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরী পান ৮৩ হাজার ২৮৮ ভোট।
১০ম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী।
৯ম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ৯৭ হাজার ৫৯৩ ভোট পান। বিএনপির শফি আহমেদ চৌধুরী পান ৫৪ হাজার ৯৫৫ ভোট।
৮ম সংসদ নির্বাচনে (২০০১) বিএনপির শফি আহমেদ চৌধুরী ৫৫ হাজার ৯৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পান ৪৪ হাজার ৩৪২ ভোট।
৭ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬) জাতীয় পার্টির এ মুকিত খান পান ২৬ হাজার ৬৫৯ ভোট। আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পান ২৬ হাজার ১৬৮ ভোট।
৫ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১) জাতীয় পার্টির এ মুকিত খান ৩৩ হাজার ৪১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের আতিকুর রহমান পান ১৯ হাজার ৫৭ ভোট।