মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া রেললাইনের পাশের ৪৩টি ঝুঁকিপুর্ণ গাছ চিহ্নিত করেছে বন ও রেল বিভাগ। ঝড়-তুফানসহ যেকোন সময়ে গাছগুলো রেললাইনে পড়ে রেল দুর্ঘটনার আশংকা জানিয়ে বন বিভাগকে গাছগুলো কাটার অনুরোধ জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সংরক্ষিত বনে কোনো অজুহাত দেখিয়ে গাছ না কাটার দাবি জানিয়েছে পরিবেশকর্মীরা।
এরআগে এবছরের গত ২০ মে ভোরে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতরে ট্রেনের সামনে গাছ পড়ে ট্রেনের ইঞ্জিন ও দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। পরে প্রায় ১৫ ঘন্টা পর সিলেটের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ চালু হয়। এরপরই সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ রেলপথের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া রেললাইনের পাশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ গাছ চিহ্নিত করতে বনবিভাগ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ লাউয়াছড়া পরিদর্শন করে।
সরেজমিনে শনিবার লাউয়াছড়া উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া রেললাইন ধরে হেটে দেখা গেছে, ছোট বড় অনেকগুলো গাছের গুড়ায় মাটি সরে গেছে। অনেক গাছের শেকড় বের হয়ে এসেছে। কয়েকটি গাছ রেললাইনের দিকে হেলে পড়েছে। তবে প্রতিটি ঝুকিপূর্ণ বড় গাছের সাথে ছোট বড় অনেক গাছ রয়েছে। এই বড় গাছ কাটতে গিয়ে এগুলোর ক্ষতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলোর তালিকার মধ্যে চিকরাশি, চাপালিশ, বনাকসহ বেশ কয়েক প্রজাতির গাছ রয়েছে।
মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, ‘‘রেলওয়ে ও বন বিভাগের চিহ্নিত করা গাছগুলো কাটার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে। আমরা প্রাথমিক তদন্তে ৪৩টি গাছ পেয়েছি। এখন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা এসিল্যান্ড, রেলওয়ের প্রকৌশলী ও বন বিভাগের আমি (এসিএফ) অথবা রেঞ্জার মিলে ফাইনালি একটা তদন্ত করে আমাদের বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে পাঠাবো।’’
এসিএফ বলেন, ‘‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অনেক বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর বসবাস। তাই শুধু গাছ কাটলেই হবে না, প্রতিটি গাছ আসলেই ঝুঁকিপূর্ণ কি না, গাছের এই প্রজাতিটি মহাবিপন্ন কি না সেটা দেখতে হবে। আমরাও চাই না লাইয়াছড়ার ভেতর থেকে কোন গাছ কাটা হোক।’’
বাংলাদেশ রেলওয়ের গণপূর্ত বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী ফিরোজ গুলজার শনিবার বলেন, ‘‘লাউয়াছড়ায় কিছুদিন আগে রেল দুর্ঘটনার পর রেলওয়ে ও বন বিভাগ যৌথভাবে লাউয়াছড়ার ভিতর দিয়ে যাওয়া রেল লাইনের দুই পাশের ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো দেখে দেখে ৪৩টি গাছ মার্ক করে এসেছে। এই গাছগুলো খুবই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
‘‘আমরা রেলওয়ে বিভাগ থেকে বন বিভাগকে অই গাছগুলো কাটার জন্য চিঠি লিখেছি। গাছগুলো যেকোন সময় চলন্ত ট্রেনে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এখন ঝড় তুফানের সময় বনের ভেতর দিয়ে খুবই সাবধানে ট্রেন চালাতে হচ্ছে।’’
লাউয়াছড়া জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক জলি পাল বলেন, ‘‘আমরা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর থেকে রেল ও সড়ক পথ সরানোর দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। রেল ও সড়ক পথটি লাউয়াছড়ার ঠিক মাঝামাঝি পড়েছে। একটা সংরক্ষিত বন থেকে এগুলো সরানোর পরিবর্তে বার বার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
‘‘এর আগেও ২০১৬ সালে লাইয়াছড়ার ২৫ হাজার গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছিলো সরকার। পরে আন্দোলনের মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। এই ৪৩টি গাছ কাটতে গিয়ে বনের অনেক গাছ কাটা পড়বে বলে আমরা মনে করি। রেলওয়ে ও বন বিভাগের এই সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করি এবং গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানাই।’’
Editor: Shahin Ahmed & Sadrul Islam Lukman
Office: Hoque Super Market, 3rd Floor, Zindabazar, sylhet.
Email: ekusheynet.syl@gmail.com
Contact: 01739447302