মো. বায়েজীদ বিন ওয়াহিদ: জামালগঞ্জ থেকে : সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে ক্লাস না করেই প্রতিমাসে বেতন তুলে নিচ্ছেন একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকরা। গত দুইদিন উপজেলার একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ক্লাস করার নির্দেশনা থাকলেও আইনের কোনো তোয়াক্কা করছেন না নাজিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হটামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফেনারবাঁক ইউনিয়নের নাজিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেলা ১২ টায় পুরো স্কুল আঙ্গিনা শুনশান নীরবতা। বিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্লাসরুমে ঝুলছে তালা। উত্তোলন করা নেই জাতীয় পতাকা।
এসময় স্কুলের পাশের বাড়িতে থাকা মো. নজরুল ইসলাম নামে এক অভিভাবককে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, মাসের পর মাস এভাবে তালা ঝুলে থাকে। সপ্তাহ কিংবা পনেরো দিনে একবার আসেন শিক্ষকরা।
আরেক অভিভাবক শফিকুল ইসলাম জানান, বেলা ১২ টা বাজে এখনো কোনো শিক্ষক আসেনি। এভাবে সারা মাসই বন্ধ থাকে। হঠাৎ মাঝেমধ্যে আসে।
তফুরা বেগম নামে এক শিক্ষার্থীর মা ক্ষোভের সুরে জানান, ক্লাস ফাইভের একটা ছাত্র নিজের নাম বানান করতে ও ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত গণনা করতে পারে না। আমরা নাজিমনগর স্কুলের প্রধান শিক্ষক শংকর মাষ্টার ও সহকারী শিক্ষিকা দোলন ম্যাডামের পরিবর্তন চাই।
আরেকজন জানান, প্রধান শিক্ষক শংকর স্যার মাঝেমধ্যে আসেন কিন্তু সহকারী শিক্ষক দোলন ম্যাডাম সারা মাসই অনুপস্থিত থাকেন।
অপর দিকে হটামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১১ টায় গিয়ে দেখা যায় শিক্ষকদের জন্য অপেক্ষা করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক কখন আসবেন সেটাও তারা জানেন না। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন না ওই স্কুলের দপ্তরি জয়কুল ইসলাম। স্কুলের তালা কে খুলে দিয়েছে জিজ্ঞেস করলে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীরা জানান, হটামারা গ্রামের মিজান নামে একটি ১০ বছর বয়সি ছেলে প্রতিদিন তালা খুলে দেন। পরে আবার দুপুরে এসে ছুটি দিয়ে তালা লাগিয়ে চলে যান।
এব্যাপারে হটামরা গ্রামের একাধিক অভিভাবকের সাথে যোগাযোগ করা হলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। ওই গ্রামেরই যুবক সিলেট সরকারী কলেজের ছাত্র আনিসুর রহমান জানান, নামে মাত্র স্কুল চলছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই নাই। মাসের পর মাস চলে যায় কোনো শিক্ষক স্কুলে আসেনা। প্রধান শিক্ষক রঞ্জু পুরকায়স্থ এবং তোফায়েল নামে একজন সহকারী শিক্ষকসহ একজন দপ্তরি আছে। স্কুলের ৩ জনই অনিয়মিত স্কুলে আসেন। তাদের অনিয়মিত স্কুলের আসার কারনেই ওয়ান থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী ” অ, আ”, ভালো ভাবে পড়তে পারেনা। এভাবে চললে আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে স্কুলই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
হটামারা স্কুলের আরেক অভিবাক আসমা আক্তার জানান, প্রধান শিক্ষক সপ্তাহে ২ দিন ক্লাসে আসেন।
পুরো স্কুলে তালা ঝুলছে এব্যাপারে নাজিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শংকর পুরকায়স্থকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, আমার ভাগনির বিয়ে তাই আমি আজ স্কুলে যেতে পারিনি। তাছাড়া জামালগঞ্জ থেকে প্রতিদিন গিয়ে স্কুল করা কষ্ট হয়ে যায়। এই বিষয়টি পত্রিকায় দিবেন না প্লিজ।
হটামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রঞ্জু পুরকায়স্থ জানান আমি আজ যেতে পারিনি। আমার একটু সমস্যা ছিলো।
স্কুল বন্ধের ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম রাব্বি জাহানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, নাজিমনগর ও হটামারা স্কুল আজ বন্ধ ছিলো আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। কেউ কোনো ছুটি নেয়নি আমার কাছ থেকে। এব্যাপারে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানানো হবে।