• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

হাওরে বিশাল কর্মজজ্ঞে প্রচন্ড তাপদাহে দিশেহারা মানুষ

admin
প্রকাশিত এপ্রিল ২৬, ২০২৪
হাওরে বিশাল কর্মজজ্ঞে প্রচন্ড তাপদাহে দিশেহারা মানুষ

একুশে নিউজ ডেস্ক : বৈশাখের এই সময়ে হাওরের চারদিকে পাকা সোনার ধানের মৌ মৌ গন্ধ। মেঘমুক্ত আকাশে সূর্যের চোখ রাঙানি,তীব্র তাপদাহের দাপট উপেক্ষা করে হাওরের গভীর থেকে ধান কাটা ও খলায় মাড়াইয়ের কাজ নিয়ে ব্যস্থ কৃষক। হাওরে বিশাল এই কর্মজজ্ঞে প্রচন্ড তাপদাহে কৃষক,কৃষাণীসহ দিশেহারা নিন্ম,মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ।

জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না মানুষজন। এদিকে বিদ্যুৎতের ঘন ঘন লোড শেডিংয়ে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। গাছের পাতাও নড়ছে না। গরমে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশু এবং বয়স্ক মানুষকে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন।

সরেজমিনে হাওর ঘুরে দেখা গেছে,তীব্র গরমে হাওরের খলায় খলায় কৃষান ও কৃষানী ও তাদের সন্তান আত্নীয় স্বজনরা কেউ ছাতা হাতে কেউ বা ত্রীপাল টানিয়ে খলায় বসে ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ করছে। গরমের কারনে হাওরে শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি ধান কাটা মেশিনের সংকট থাকায় হাওরে ধান কাটা শ্রমিকরাও এই গরমে ধান কাটতে হাওরে সহজে যেতে চায় না। যারা যেতে চায় তারাও আবার অধিক টাকা দাবি করার ফলে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। প্রতি বিঘায় অন্যান্য বছর ৩ হাজার টাকায় ধান কাটলেও এবার ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা দাবি করছে শ্রমিকরা।

সুনামগঞ্জ কৃষি অফিস জানিয়েছেন এবার সুনামগঞ্জের ১৩৭টি হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত জমি থেকে ১৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। এর মূল্য প্রায় ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা।

জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পথচারী জাহিদ মিয়া বলেন,প্রচন্ড গরমে ঘরে বিদ্যুৎ না থাকলে থাকাও যাচ্ছে না আর বাইরেও প্রচন্ড তাপ অবস্থা খারাপ। বাহিরে বাতাশও নেই এরপরও জরুরী প্রয়োজনে বের হয়েছি কোনো উপাই নেই।

জেলার সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নে ধান কাটতে আসা শ্রমিক আনিস মিয়া বলেন,প্রতি বছরের মত এবারও ধান কাটতে ১৫ জনের একটি দল নিয়ে এসেছি। কিন্তু এই গরমে হাওরে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। কিন্তু কিছুই করার নাই পেটের দায়ে ধান কাটতে হচ্ছে। হাওর থেকে ধান কেটে মাথার করে খলায় আনার পর দম যায় যায় অবস্থা। প্রতি একটি বোঝায় ৫৫-৬০টি ধানের আটি আনা হয় এতে প্রায় এক মনের বেশি ধান হবে। একবার আনার পর আধা ঘণ্টা বসে জিরাইয়া (বিশ্রাম নিয়ে) পরে আবারও হাওরে যাই।

জেলার তাহিরপুর উপজেলার শনি হাওরের কৃষক সাদেক আলী জানান,এবার ধানের ফলন ভাল হয়েছে। তবে গরমে অবস্থা খুবেই খারাপ, এরপরও ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ করতে হচ্ছে প্রচন্ড তাপের মধ্যে কোনো উপাই নাই। ধান শুকাতে হবে না হলে জীবন বাঁচানোও দায় হয়ে পড়বে। এরপরও ভাল যে আগাম বন্যা আমাদের ফসলের ক্ষতি হয়নি অন্যান্য বছর দুশ্চিন্তায় থাকতে হত হাওরের হাজার হাজার কৃষকদের।

জামালগঞ্জ উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রীকান্ত তালুকদার বলেন,আগে তাদের ধান কাটার জন্য প্রতি বিঘায় ৩ হাজার টাকা করে আলাপ করেছি। গরমের কারণে শ্রমিকরা এখন সাড়ে চার হাজার টাকা দাবি করছে। ধানও পেকে গেছে তাই দেন দরবার করে প্রতি বিঘায় ৪ হাজার টাকা করে ধান কাটছি। কোনো উপায় নেই কষ্টে ফলানো হাওরে পাকা ধান ত আর হাওরে রাখা যাবে না।

তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মির্জা রিয়াদ হাসান জানান,তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে বেশী বেশী করে ডাবের পানি অথবা বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। বিশেষ করে গর্ববতি, শিশু ও বৃদ্ধদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। প্রচন্ড তাপমাত্রার কারণে জ্বর সর্দি ও ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।