• ১৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেট সদর উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ টিলায় বসবাসকারীদের নিরাপদে আসার আহবান

admin
প্রকাশিত জুলাই ২, ২০২৪
সিলেট সদর উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ টিলায় বসবাসকারীদের নিরাপদে আসার আহবান

একুশে নিউজ ডেস্ক : সিলেট সদর উপজেলার অত্যান্ত ৩ ইউনিয়নে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ টিলা সনাক্ত করেছে উপজেলা প্রশাসন। ঝুঁকিপূর্ণ টিলায় বসবাসকারী জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে অত্যন্ত ৩টি ইউনিয়নে ঝুঁকিপূর্ণ টিলা সনাক্ত করে লাল কাপড় দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ টিলা চিহ্নিত করার পরও বসবাসকারীরা সরকারি নির্দেশনা মানতে নারাজ। তবে খোঁজ নিয়েও দেখা গেছে, টিলার উপর বা নিচে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী বেশির ভাগই দরিদ্র পরিবার। উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করা হচ্ছে। এ উপজেলায় ছোট-বড় অনেক টিলাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। যে কারণে প্রশাসনের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরবাড়ি গুলো গলারকাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ টিলা কিংবা পাহাড়ের নিচে যাতে কেউ বসবাস না করে, সেই জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরবাড়ির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বড় দুর্ঘটনা এড়াতে দিন রাত প্রচার -প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা সিলেটে বর্তমানে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। কিছুদিন আগে ভারী বর্ষণে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় টিলা ধসে একই পরিবারের ৩ জনের প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটেছিল। এ ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে সে জন্য জনগনকে সরকারি নির্দেশনা মানতে কঠোর হচ্ছে প্রশাসন। প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে নির্দেশনা না মানলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। সনাক্তকৃত ঝুঁকিপূর্ণ ঘরবাড়ি থেকে যদি কেউ নিরাপদ আশ্রয়ে না আসে তবে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে উপজেলা প্রশাসন ধসের ঝুঁকিতে মানুষের নিরাপদে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে প্রশাসন জোরেশোরে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম।

প্রশাসন থেকে অনুরোধ করা হয়েছে টিলার উপর বা নিচে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরবাড়িতে তারা যেন বসবাস না করেন। তারা যেন তাদের পরিবার নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যান। উপজেলা প্রশসানের পক্ষ থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন টিমে ভাগ হয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী পরিবারকে অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি সবাইকে সচেতন করার লক্ষ্যে সভাসমাবেশ করে বিষয়টি নিয়ে মানুষের নিকট বুঝিয়ে বলা হচ্ছে। সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরীন আক্তার, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. মাহবুবুল ইসলাম প্রতিদিন বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। অন্যদিকে ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তাগণসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।।

৩নং খাদিমনগর ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি গ্রামে টিলা কেটে দখল করে তৈরি করা হয়েছে শত শত ঘরবাড়ি। যেগুলো এখনো দাঁড়িয়ে আছে তার পাদদেশ থেকে চূড়া পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে একের পর এক ঘরবাড়ি। আরো অনেক টিলায় রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিঘর। এসব বাড়িঘর ঘিরেই এখন প্রশাসনের শঙ্কা। প্রবল বৃষ্টিতে টিলা ধসে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড়ধরনের দুর্ঘটনা। সাহেবের বাজারসংলগ্ন রামপুর গ্রামে ২০২২ সালে ভারি বৃষ্টিপাতে টিলা ধসে বেশ কয়েকটি পাকা ও মাটির তৈরি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ঝুঁকিপূর্ণ স্থলভাগে এখনো পরিবারগুলো ওই এলাকায় আগের মতোই বসবাস করিতেছে। ৯নং ওয়ার্ডের বুড়জান চা বাগান, খাদিম চা বাগান, ছড়াগাং চা বাগানের শ্রমিকরা বেশি টিলা ধসের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

সরোজমিনে রামপুর, কোনাটিলা, ফতেগড়, কালাগুল, ফরিংউরা এলাকাতে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে অসংখ্য টিলার মাটি ধসে পড়ছে। শঙ্কা এখন বড় ধসের। ফলে টিলার ওপর ও ঢালে বসবাস করা সব পরিবারই এখন ঝুঁকিতে। প্রাণের শঙ্কা নিয়েই বছরের পর বছর ধরে এখানে তারা বসবাস করে আসিতেছেন। ধসের আগে সবাই ভাবে আমার কিছু হবে না, কিন্তু এভাবে অতীতের বিভিন্ন দুর্ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিবছরই টিলা ধসে প্রাণহানি মতো ঘটনা সিলেটে ঘটেই যাচ্ছে।

টুকেরবাজার ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ভাটা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভাটার টিলার পাদদেশে বসবাসরত ৩টি পরিবারকে অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো.মাহবুবুল ইসলাম। এ সময় তিনি অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার অনুরোধ করেন। একই সাথে আশপাশের বাসিন্দাদেরও সতর্ক করেন। এসময় স্থানীয় ওয়ার্ডের মেম্বার, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টুকেরবাজার ইউনিয়নে আরো বেশ কয়েকটি টিলায় ঝুঁকি নিয়ে অসংখ্য পরিবার বসবাস করিতেছে। এদিকে ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নেও অসংখ্য ঘরবাড়ি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে এ ইউনিয়নে ঝুঁকিপূর্ণ অসংখ্য ঘরবাড়ির পরিবার গুলোকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে টিলার মাটি কাটা, বৃক্ষ উজাড় ও টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসের কারণে বৃষ্টি হলেই টিলা ধসে পড়ে। এ ছাড়া এই ইউনিয়নে টিলা ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে শত শত পরিবার। খাদিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. দিলোয়ার হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নে ছোট-বড় বেশকিছু টিলা রয়েছে। সেগুলোর পাদদেশে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। বরাবরই তাদের সতর্ক করা হয়। তবে কে শোনে কার কথা।মূলত টিলা কেটে ফেলায় প্রায়ই ভূমিধসের ঘটনা ঘটছে। এবারো বর্ষণ শুরুর পর থেকে স্থানীয় ইউপি সদস্যদের দিয়ে তাদের সতর্ক করেছি। নিয়মিত খোঁজখবরও রাখছি। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

সিলেট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. মাহবুবুল ইসলাম জানান, টিলার পাদদেশে যারা আছেন, তাদের নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য আমরা বার বার অনুরোধ করিতেছি। অনেক পরিবার নিরাপদ স্থানে গেলেও অনেক পরিবার যায়নি। নিরাপদ স্থানে গিয়ে আবার অনেক পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে ফিরে আসেন। আমরা প্রতিদিন এ বিষয় নিয়ে কাজ করছি। আমরা উপজেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ টিলা সনাক্ত করে লাল কাপড় দিয়ে চিহ্নিত করে ঝুঁকিপূর্ণ সীমানার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কাউকে বসবাস না করার নির্দেশ দিয়েছি। এই কাজ আমাদের চলমান থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করা অনেক পরিবার নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও তারা যেতে চায় না। টিলার নিচে কম টাকায় ভূমি কিনে অনেকে ঘর বানায়। ফলে তারা অন্যত্র স্থানে যেতে চায় না। তারা টাকা বাঁচানোর জন্য তাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন। প্রত্যেকেই ভাবে তাদের কিছু হবে না। তবে আমরা এ বিষয় নিয়ে কঠোর অবস্থানে আছি।

এ বিষয়ে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরীন আক্তার জানান, সিলেট জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী প্রতিদিন কাজ চলমান রেখেছি। স্যার প্রতিদিন কাজের খোঁজ খবর রাখছেন। আমার উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে টিলার পাদদেশে অনেক লোক বসবাস করেন। আমরা বর্ষা শুরুর আগেই তাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের দিয়ে প্রচারণা চালাই। তবু তারা সরেন না। এর আগে এ উপজেলায় বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। তাই ঝুঁকিপূর্ণদের কোনো তালিকা তৈরি করা হয়নি। বর্তমানে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী পরিবারের তালিকা তৈরি করেছি। ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে, তবে ঝুকিপূর্ণ বসবাসকারীকে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।