স্টাফ রিপোর্টার : গত ৫ আগস্ট সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে সারাদেশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে হামলা লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ হামলা থেকে রেহাই পায়নি সিলেটর বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানবাজার ইউনিয়নের গহরপুর এলাকার নশিওরপুর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী যুবলীগ নেতা জাহেদ আহমেদের বাড়ি। জাহেদ আহমদের পিতা হাবিবুর রহমান বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা।
লন্ডন প্রবাসী জাহেদ আহমেদ সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজনৈতির জের ধরে মূলত জাহেদ আহমদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, জামাত শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। হামলাকারীরা তার বাড়িতে এক দিনে পর পর দুই বার হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। সর্বশেষ ৬ আগস্ট সকাল ১০ টার সময় তার বাড়িতে তৃতীয় বারের মত হামলা করে ছাত্র সমন্বয়ক, জামাত, শিবির ও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। তাদের হামলায় জাহেদ আহমদের পিতা গুরুত্ব আহত হন। বর্তমানে তিনি সিলেটের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
সূত্র থেকে জানা যায়, গত সোমবার (৫ আগস্ট) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার সময় ছাত্র সমন্বয়ক, জামাত শিবির, বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা লন্ডন প্রবাসী যুবলীগ নেতা জাহেদ আহমদের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। হামলাকারীরা এ সময় অত্যান্ত ৩টি রুম ভাংচুর করে তছনছ করে দেয়। ঘরের প্রতিটা রুমে তল্লাশি চালিয়ে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।
পরে রাত ৯ টার দিকে জাহেদ আহমদের বাড়িতে দ্বিতীয় বারের মত হামলা করে ছাত্র জনতা, জামাত শিবির ও বিএনপি’র নেতারা। হামলাকারীরা তার ঘরে পবেশ করে মূল্যবান জিনিসপত্র সোনা গয়না, নগদ টাকা, আসবাবপত্র থেকে শুরে করে সব কিছু লুট করে নিয়ে যায়।
একই দিনে ২ বার হামলা করার পরও তারা ক্লান্ত হয়নি। পর দিন অর্থাৎ গতকাল মঙ্গলবার) ৬ আগস্ট) সকাল ১০ টার দিকে জাহেদ আহমদের বাড়িতে তৃতীয় বারের মত দেশীয় অস্ত্র দা, রামদা, লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা করে ছাত্র সমন্বয়ক, জামাত শিবির ও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। এলাকার মানুষ তাদেরকে সাহায্যে করতে এগিয়ে আসলেও, হামলাকারীদের ভয়ে এলাকার কোনো লোকজন তাদেরকে সাহায্য করতে পারেনি। আগের রাত ভাংচুরকৃত ঘরের ভিতর হামলাকারীরা প্রবেশ করে জাহেদ আহমদের বয়স্ক পিতা ও বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমানকে ঘরে পেয়ে তার উপর হামলা করে ছাত্র সমন্বয়ক, জামাত শিবির, ও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। তাদের হামলায় হাবিবুর রহমান মারাত্মক ভাবে আহত হন। হামলায় হাবিবুর রহমানের ডান হাত ভেঙে যায়। পরে তাকে বেধড়ক পেটার পর তাকে অসচেতন করে, বিভিন্ন হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে হামলাকারীরা চলে গেলে আশপাশের লোকজন এসে গুরুতর আহত হাবিবুর রহমানকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সিলেটের একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হামলায় গুরুতর আহত জাহেদ আহমদের পিতা হাবিবুর রহমান জানান, আমি ও আমার লন্ডন প্রবাসী ছেলে জাহেদ আহমদ আওয়ামী লীগ করার কারণে আমার উপর প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা করে। ছাত্র সমন্বয়ক, জামাত শিবির ও বিএনপি’র নেতাকর্মীদের হামলায় আমার ডান হাত ভেঙে দিয়েছে। বর্তমানে আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। হামলাকারীরা আমার বাড়ীতে গত ৫ আগস্ট রাতে ২ বার ও ৬ আগস্ট সকালে ১ বার হামলা করে। তারা আমার প্রতিটি রুমে তল্লাশি চালায়। এ সময় বাড়ির প্রতিটি রুম থেকে লুটপাট করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যায়। হামলাকারীরা প্রতি বার যাওয়ার সময় আমাকে বলে যায় আমার লন্ডন প্রবাসী পুত্র জাহেদ আহমদ দেশে আসলে তাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। তাদের হামলার ভয়ে বর্তমানে আমার বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। রাজনীতি করা কি আমাদের অপরাধ, যার জন্য আমার এই পরিণতি। আমি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।