একুশে নিউজ ডেস্ক : নীতিমালা চুড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ এবং তার আলোকে আধুনিকায়ন করে ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের নিবন্ধন, চালকদের লাইসেন্স প্রদানের দাবিতে রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ এবং সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় আম্বরখানাস্থ সংগঠনের কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে স্মারকলিপি পেশ কালে উপস্থিত ছিলেন সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা আবু জাফর, সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি প্রণব জ্যোতি, সহ-সভাপতি হারুন আহমদ, ইয়াছিন আহমদ, মনজুর আহমদ, সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন, জুয়েল আহমদ, ইউসুফ আলী, খোকন আহমদ,বিলাল মিয়া, এরশাদ মিয়া, প্রমূখ।
স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জজ মিত্র চাকমা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সামনে রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি প্রণব জ্যোতি পাল এর সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট এর আহ্বায়ক আবু জাফর, সংগ্রাম পরিষদের বেলাল হোসেন, মনজুরু আহমদ প্রমূখ।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, থ্রী-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা-২০২৪ চুড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ এবং নীতিমালার আলোকে আধুনিকায়ন করে ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের নিবন্ধন, চালকদের লাইসেন্স ও রুট পারমিট প্রদান এবং সড়ক মহাসড়কে স্বল্প গতির ও লোকাল যানবাহনের জন্য সার্ভিস রোড/বাইলেন নির্মাণ করার আহ্বান জানান।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, রিকশা চালানো কত অমানবিক পরিশ্রমের কাজ। আমদানিকৃত ইজিবাইক দিয়ে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের শুরু হলেও চালকদের পরিশ্রম লাঘব করা, যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য আর খরচ কমানোর কথা বিবেচনা করে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে রিক্সায় ব্যাটারি স্থাপন করা শুরু হয়। প্রথমদিকে নির্মাণজনিত কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও ইতিমধ্যে তার অনেকাংশই দূর করে আধুনিকায়ন করা সম্ভব হয়েছে। ফলে দ্রুত এই বাহন যেমন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে তেমনি ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এই সব বাহন ব্যবহার সহজ, সস্তা এবং শহরের ছোট রাস্তায় চলতে পারে বলে স্বল্প আয়ের মানুষের দৈনন্দিন কাজে এক অপরিহার্য বাহন হয়ে দাড়িয়েছে। নেতৃবৃন্দ আরোও বলেন, সারা দেশে প্রায় ৫০ লাখ চালক পরিবার এইসব ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলার ও সমজাতীয় যানবাহনের উপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। এইসব যানবাহন তৈরি, মেরামত, খুচরা যন্ত্রাংশ নির্মাণ, বিক্রি, চার্জিং সহ নানা ধরনের কাজে অসংখ্য মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্ভরশীল। দেশের সকল জেলা ও বিভাগে নগর পরিবহণ নেই ফলে কোটি কোটি মানুষ ব্যাটারি চালিত যানবাহন ব্যবহার করে থাকে। এই খাত যেমন বিপুল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার অবদান রাখছে। যা মোট জিডিপির প্রায় ১২ ভাগ। এর সাথে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের নিবন্ধন ও চালকদের লাইসেন্স প্রদান করলে সরকারে রাজস্বেও বাড়তি টাকা যুক্ত হবে।এই বাহন পরিবেশ বান্ধব এবং বায়ু ও শব্দ দূষণ করে না।বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে এদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চুরি এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারের অভিযোগ করা হয়। অথচ এইসব বাহন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, চালকেরা বিদ্যুৎ চুরি করে না বরং বর্ধিত দামে (প্রায় ২৫ টাকা ইউনিট) বিদ্যুৎ কিনে থাকে। তাই কর্মসংস্থান, জীবিকা, যাতায়াত এবং দেশের অর্থনীতির বিকাশের কথা বিবেচনা করলে এই খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নেতৃবৃন্দ আরোও বলেন, সংগ্রাম পরিষদ দীর্ঘ ১২ বছর নীতিমালা তৈরি করে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের নিবন্ধন, চালকদের লাইসেন্স, প্রতিটি সড়ক মহাসড়কে ইজিবাইক, রিকশাসহ স্বল্পগতির ও লোকাল যানবাহনের জন্য বাই লেন বা সার্ভিস রোড নির্মাণ ও সড়কে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলনের চাপে খসড়া “থ্রী-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযান সুষ্ঠু ব্যবস্থনা নিয়ন্ত্রন নীতিমালা-২০২৪” হলেও এখনও তা চুড়ান্ত হয়নি। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের ৪ এপ্রিল ও ২৫ এপ্রিলের রায়ে মহাসড়ক ব্যাতীত সর্বত্র চলাচলে বাধা নেই বলে আদেশ প্রদান করেছেন। কিন্তু নানা অজুহাতে ব্যাটারিচালিত যানবাহনে চলাচলে নানা বিধি নিষেধ ও অবৈধ চাঁদাবাজি, রেকারিং চলছে।