একুশে নিউজ ডেস্ক : সিলেটের কানাইঘাটের ৫ বছরের ছোট্ট শিশু মুনতাহা নিখোঁজ, এমন খবরে একদিন আগেও সরব ছিল নেট দুনিয়া। মুনতাহার সন্ধান চাই এমন শিরোনামে দেশের হাজারো মানুষ নিজের ফেসবুক প্রোফাইল বা পেজে পোস্ট দেন। সবার একটাই আকুতি ছিল জীবিত হয়ে মা-বাবার কোলে ফিরবেন মুনতাহা। কিন্তু শিশু মুনতাহা নিখোঁজের সাতদিন পর ঠিকই ফিরেছেন তবে জীবিত নয় মৃত্যু অবস্থায়।
রোববার (১০ নভেম্বর) ভোরে মুনতাহার পুঁতে ফেলা মরদেহ তুলে পুকুরের পানিতে ফেলার সময় স্থানীয়রা গৃহশিক্ষিকার মা আলিফজান বিবিকে হাতেনাতে আটক করেন।
মুহূর্তেই এই সংবাদ স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। মুনতাহার এমন মৃত্যুর খবর অনেকে ঘুম থেকে উঠেই ফেসবুকে দেখেছেন। যা দেখে ভীষণ মন খারাপের কথা জানিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন। মুনতাহার এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না নেটিজেনরা।
শিশু মুনতাহার মৃত্যুর খবরে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী জুলকারনাইন সায়ের নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এই নিষ্পাপ শিশুটাকে একজন মহিলা যিনি পরিবারটির প্রতিবেশী, বাসার কাছের একটি ডোবায় ফেলে হত্যা করেছে বলে জানা গেছে। সন্দেহভাজন মহিলাকে আটক করা হয়েছে। বাচ্চার মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। আল্লাহ তুমি এই পশুদের কেন পৃথিবীতে পাঠাও? কেন এদের হাত থেকে এই নিষ্পাপদের রক্ষা করোনা?
আরিফুর রহমান নামের এক ব্যক্তি নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আশা ছিল শিশু মুনতাহা সুস্থ অবস্থায় মা-বাবার কোলে ফিরবে। নিখোঁজের পর থেকে মায়াবী ও ফুটফুটে ছবিটি দেখে নিজের মেয়ের চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। তাই শিশুটির সন্ধান চেয়ে আমিও পোস্ট করেছিলাম। কিন্তু আজ ঘুম থেকে উঠে দেখি বাড়ির পাশ থেকে ডোবায় শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সংবাদটি দেখার সঙ্গে সঙ্গেই আমি হতবাক হয়ে যাই। এমন মৃত্যু কীভাবে সহ্য করবে তার বাবা-মা। আল্লাহ তুমি এই শিশু হত্যাকারীদের উত্তম বিচার কর।
এরকম হাজারো নেটিজেন তাদের ফেসবুক পোস্টে শিশু মুনতাহার মৃত্যুর খবরে ব্যতীত হয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। একইসঙ্গে এই ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের জাবি জানাচ্ছেন।
জানা গেছে, সিলেটের কানাইঘাটে নিখোঁজ হওয়া শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনকে (৬) হত্যার পর পুঁতে রাখা হয় কাদামাটিতে। পুঁতে রাখা মরদেহটি খাল থেকে সরিয়ে নিয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলার চেষ্টার সময় মা-মেয়েসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
রোববার (১০ নভেম্বর) ভোর ৪টার দিকে মরদেহটি সরানোর চেষ্টাকালে জনতার সহায়তায় শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ আটককৃতরা হলেন, মর্জিয়া আক্তার, তার মা আলীফজান ও আলীফজানের মা কুতুবজান। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা মর্জিয়ার বসতঘর গুড়িয়ে দেন। নিহত মুনতাহা সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা সদর ইউনিয়নের বীরদল ভাড়ারীফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, ঘটনার দিন রোববার (৩ নভেম্বর) আমার বাড়িতে খেলা করছিল মুনতাহা। ওইদিন শিশুটিকে ধরে নিয়ে হত্যার পর মরদেহ ঘরের পাশে খালে পুঁতে রাখা হবে তা কল্পনা করতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, আমাদের বিশ্বাস ছিল শিশুটিকে জীবিত পাবো। কিন্তু ঘরের পাশে তার মরদেহ মিলবে, তাকে হত্যা করা হবে কল্পনা করিনি। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আউয়াল জানান, মুনতাহার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিবেশী মর্জিয়া আক্তার ও তার মা আলীফজান মিলে তাকে হত্যা করেছেন। তিনি আরও বলেন, মুনতাহাকে অপহরণের পর ওইদিনই তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ ঘরের পাশের একটি খালে কাদামাটিতে পুঁতে রাখা হয়। এরপর আলীফজান বেগম রোববার (১০ নভেম্বর) ভোরে মরদেহ সরানোর চেষ্টাকালে স্থানীয়রা দেখে ফেলেন। এ সময় স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় মর্জিয়া, তার মা ও নানিকে আটক করা হয়। এর মধ্যে আলীফজান ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। তবে কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।
ওসি বলেন, শনিবার (৯ নভেম্বর) রাত ১২টার দিকে মর্জিয়াকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কোনো তথ্য উদঘাটন করা যায়নি। এরপর রোববার ভোরে মরদেহ উদ্ধারের পর তাকে আটক করানো হয়। তিনি আরও বলেন, মরদেহ খাল থেকে সরিয়ে নিয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলার চেষ্টা করা হয়।