
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দক্ষিণ প্রান্তের ঐতিহ্যবাহী জাউয়াবাজার ইউনিয়নের পাইলগাঁও নিকট অতীতে ছিল শান্তিপ্রিয়-নিরীহ সাধারণ মানুষের বাসস্থান। ঘুটি কয়েক মানুষের কারণে এই শান্তির জনপদে অশান্তি বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ এই গ্রামের মৃত চমক আলী আর গুলনাহার দম্পতির জ্যেষ্ঠ সন্তান, যুক্তরাজ্য প্রবাসী কিকবক্সার আব্দুল আলী ওরফে আলী জ্যাকো-ই এই এলাকার শান্তি বিনষ্টের কারণ হয়ে উঠেছেন। তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে যতো রকমের অপরাধ আছে সব করে যাচ্ছে ঘুটি কয়েক মানুষ। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, পুলিশ এ্যাসল্ট মামলাসহ জমি জবরদখলের অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়েরানি করছেন আলী জ্যাকোর সহযোগীরা।
জানা যায়, যুক্তরাজ্যে ব্যবসায় দেউলিয়া হয়ে নিজের মালিকানাধীন ১০ লাখ টাকা দামের গাড়ি বিক্রি করে দেশে এসে গ্রামের বাড়িতে অন্যের জমি জবরদখল করে গড়ে তুলেছেন তথাকথিত ফুটবল কোচিং একাডেমি। আর এই একাডেমির ডোনার মেম্বার, ম্যানেজার, ফুটবল কোচসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বিভিন্ন মামলার দাগী আসামী, চিহ্নিত সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ এবং অপরাধীদের। এদের মধ্যে বিগত সরকার পতন আন্দোলনের অনুঘটক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে অস্ত্রহাতে সক্রিয় সন্ত্রাসীরাও রয়েছেন। কারো কারো বিরুদ্ধে তো হত্যা, পুলিশ এ্যাসল্ট, ভূমি জবরদখল, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সরকারি সিলগালা ভেঙ্গে দোকানকোটা দখল, চাঁদাবাজি ইত্যাদি রকমারী মামলা রয়েছে। অথচ ছাতক থানা বা জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা গ্রেফতার করতে নাকি এদের খোঁজে পাচ্ছে না। এ নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণেরও ক্ষোভের অন্ত নেই। এলাকায় অবাধে চিহ্নিত সন্ত্রাসী-অপরাধীদের আনাগোনায় বিশেষ করে পাইলগাঁও গ্রামের অধিবাসীরা শংকিত।
এক তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, আলী জ্যাকো একজন কিকবক্সার হলেও এখন ফুটবলের প্রেমে গদগদ। কিছুদিন আগে ঘোষণা দিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ হাজার খেলার মাঠ তথা ফুটবল একাডেমি তৈরি করে দেবেন। নিজের জেলা হিসেবে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে এ কার্যক্রম শুরু করতে চান । এ লক্ষ্যেই নিজের বাড়ির পাশে জবরদখলীয় ভূমিতে গড়ে তুলেছেন একটি ফুটবল কোচিং একাডেমি।
একাডেমির প্রথম পর্যায়ের ডোনার মেম্বার করা হয়েছে উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নের গহরপুর নিবাসী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত প্রধান আসামী একই গ্রামের মৃত রইছ আলীর পুত্র যুক্তরাজ্য প্রবাসী তাজউদ্দিন ওরফে সারওয়ার আহমদ, দক্ষিণ ছাতক এলাকায় নানা অপকর্মের হোতা, চিহ্নিত সন্ত্রাসী পাইলগাঁও নিবাসী মৃত হাজী জাফর আলী ওরফে ঠাকুর মিয়ার পুত্র যুক্তরাজ্য প্রবাসী কবির আহমদকে। প্রধান তত্বাবধায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জনৈক লোকমান হোসেনকে। প্রধান কোচ নির্বাচন করা হয়েছে পুলিশ এ্যাসল্টসহ বিভিন্ন মামলার দাগী আসামী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা হিরক মিয়া তালুকদারকে। যিনি ফুটবল খেলার ‘ক-খ’ও জানেন না।
ডোনার মেম্বার কবির আহমদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি কৈতক হাসপাতাল প্রাঙ্গনের মাঠ দখলের অভিযোগ উঠে। গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে দেশে এসে তিনি বোলডোজার ইত্যাদি নিয়ে জবরদস্তিমুলক সরকারি হাসপাতালের মাঠ দখল করতে গেলে স্থানীয় জনগণের প্রতিরোধের মুখে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এলাকাবাসী গত ৯ মার্চ রাতে প্রতিবাদ সভা আহবান করে কবির আহমদের এমন গণবিরোধী কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানান এবং ভবিষ্যতে পুনরায় সরকারি হাসপাতালের মাঠ দখলের চেষ্টা চালালে তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন বলে হুশিয়ারি দেন।
এভাবে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে আলী জ্যাকোর ফুটবল একাডেমি। আর এই একাডেমির সুবাদে চিহ্নিত আসামীদের খবর জেনেও তাদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ। এ নিয়ে দক্ষিণ ছাতক এলাকার জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যে কোন সময় এ ক্ষোভ বিক্ষোভে পরিণত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
মামলার এজাহারভূক্ত আসামীরা একটি চিহ্নিত এলাকায় নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে, কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না মর্মে জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি ইন্সপেক্টর আব্দুল কবিরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
সচেতন মহল মনে করেন, আলী জ্যাকোর ফুটবল একাডেমি গঠন এবং চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়োগ প্রদান দুরভিসন্ধিমুলক। তার অতীত কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে এরমধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে এখনই বলিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে পরিণতি হয়তো শুভ নাও হতে পারে।