সিলেট নগরীর হাওয়াপাড়া জামে মসজিদের আয়-ব্যায়ের হিসেব এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটি নিয়ে উচ্চ আদালতে (রীট আবেদন নং ১৫৮৭৪/২৩ইং) দাখিল করা হয় ২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বর। বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসকের সহকারী প্রোগ্রামার মো. শাহ আলম স্বাক্ষরিত ও প্রেরিত হাওয়াপাড়া জামে মসজিদের কমিটি অনুমোদন প্রসঙ্গে রীট আবেদন করেন হাওয়াপাড়ার বাসিন্দা দিল্লীল গোলজার।
হাইকোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হক রীট আবেদন গ্রহণ করে ২০২৩ সনের ১৪ ডিসেম্বর। হাওয়াপাড়া মসজিদের ঘোষিত সভাপতি লুৎফর বক্স সাধন ও সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন বাবুর ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি এবং কার্যক্রম স্থগিত করেন। এছাড়াও ২৯ নভেম্বর২৩ইং এর ঘোষিত মসজিদ কমিটি, পরিচালক ওয়াকফ এস্টেট, সহকারী প্রোগ্রামার ওয়াকফ এস্টেট, সিলেটের জেলা প্রশাসক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপর রোল জারি করেন। ২০২৪ সালের ৯ মে রীটের স্থগিতাদেশের মেয়াদ ১ বছর বৃদ্ধি করে শুনানীর জন্য রাখেন। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ থাকা স্বত্বেও গত ১৩ মে ২০২৫ ইং রাত অনুমানিক দশটায় স্থগিতকৃত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাউথ ইস্ট ব্যাংকের হেতিমগঞ্জ সিলেটের ব্যবস্হাপক শামসুদ্দিন বাবু সঙ্গীয় কয়েক জনকে নিয়ে দানবাক্স এবং রুমালের টাকা তোলে নেন। এসময় মসজিদে আগত এক মুসল্লী ছবি উঠিয়ে রাখেন।
রাতের আধাঁরে মসজিদের টাকা নেওয়ার ব্যপারে হাওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাহেদ সাহেব জানান, হাইকোর্টের আদেশ থাকা স্বত্বেও রাতে মসজিদ থেকে টাকা নেওয়া সম্পূর্ণ অন্যায়। এ নিয়ে হাওয়াপাড়া এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। তিনি আরও জানান-মসজিদের মালিকানা সংক্রান্ত দালিলিক প্রমাণ জেলা প্রশাসকের তদন্তের রয়েছে। গত সপ্তাহে মসজিদের টাকা নিয়ে যে ঘটনার সূত্রপাত তা পুলিশের তদন্তের জন্য থানার সহযোগিতার প্রয়োজন আছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, গত তিনবছর থেকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মসজিদের হিসাব এবং মসজিদের দলিল এলাকাবাসীর সামনে উপস্থাপন করার জন্য মসজিদ কমিটির সদস্যদের বারবার অনুরোধ করার পরেও মসজিদ কমিটির কোনও সদস্য আজ অব্দি কোনও ধরনের প্রমাণ এলাকাবাসীর সামনে প্রমাণ করতে পারে নাই। বিধায় এলাকাবাসী শান্তি ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে আদালতের সহযোগিতা নিয়েছেন। পাশাপাশি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে হাওয়াপাড়া জামে মসজিদ সিলেট সদর ডিপি -১,খতিয়ান ১৬৪০১ (মালিক সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক সিলেট) মসজিদ কমিটি কর্তৃক রক্ষিত এই কমিটির অনিয়ম প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বরাবরে ২০২৩ সনের৭ সেপ্টেম্বর অভিযোগ প্রদান করা হয়।
তিনি আরো বলেন-কমপক্ষে গত ১৫ বছরের শুধু মসজিদের রুমাল ও দান বাক্সের টাকার গড় হিসেবে করলে ৮০ লক্ষ টাকা হয়। এছাড়া প্রবাসীদের প্রেরিত অনুদান, মসজিদ মার্কেট ও বোডিং এর ভাড়া, বিভিন্ন জিনিস নিলামসহ হিসেব করলে কয়েক কোটি টাকা হবে। এসবের কোন সঠিক হিসেব জানেন না এলাকাবাসী। এলাকাবাসী বারবার হিসেবে চাইলেও কোন হিসেব দেওয়া হচ্ছে না। ফলে তা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এই হিসাব না দেওয়ার পিছনে সবচেয়ে দায়ী যিনি মসজিদ কমিটির সাবেক সাধারন সম্পাদক আবু বকর হিরণ। তিনি দীর্ঘ ২০ /২২ বছর ধরে মসজিদ কমিটিকে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ১৬ নং ওয়ার্ডের উপদেষ্টা ও অর্থ দাতা। বর্তমান স্হগিত কমিটিও তার নেতৃত্বে অনিয়ম ও অরাজকতা চালিয়ে যাচ্ছে। এই স্হগিত কমিটির মধ্যে কয়েকজন ফ্যাসিস্ট লীগের সদস্যরা কাজ করছে, যাদের প্রভাব এখনো আছে। তাদের ভয়ে এলাকাবাসী এখনে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আছে।
এ ব্যাপারে রীটকারী দিল্লীল গোলজার জানান, তারা সম্পূর্ণ মানবিক এবং মসজিদ উন্নয়ন চান। কিন্তু একটি পক্ষ হিসেব না দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করে এলাকাবাসীকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে তিনি ন্যায় বিচারের স্বার্থে উচ্চ আদালতে রীট দাখিল করেছেন। যার ফলে বর্তমানে হাওয়াপাড়া মসজিদ কমিটি স্থগিত রয়েছে। কিন্তু সাউথ ইস্ট ব্যাংক পিএলসি হেতিমগঞ্জ শাখার ব্যবস্হাপক ও স্থগিতকৃত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন বাবু তার সঙ্গীদের নিয়ে রাতের আধাঁরে মসজিদের দানবাক্স ও রুমালের টাকা নেওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। তিনি আদালত অবমাননার বিষয়টি আদালতকে অবহিত করবেন বলেও জানান।
দিল্লীল গোলজার আরও জানান, ১৯৫৬ ইং সনের রেকর্ড অনুযায়ী হাওয়াপাড়া জামে মসজিদের মূল পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সিলেট জেলা প্রশাসক । কিন্তু একটি পক্ষ হাওয়াপাড়াবাসীকে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখে তাদের পারিবারিক সম্পত্তি দাবি করে আসছে এ বিষয়টিও আদালতের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. শের মাহবুব মুরাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন উঠাননি।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার উজ জামান জানান, মসজিদ সংক্রান্ত যে কোন বিষয় বলতে পারবেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মহোদয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হোসাইন মো. আল জুনাইদ জানান, তিনি বিষয়টি তদন্ত করবেন।
সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনুর রুবাইয়াৎ জানান, হাওয়াপাড়া জামে মসজিদের বিষয়ে তিনি অবগত নন। আর কোন নাগরিক যদি রীট করেন তখন জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী কর্মকর্তাকে পক্ষ করেন। তবে রীটের কাগজপত্র পেলে বিষয়টি নিয়ে বলতে পারবেন বলেও জানান তিনি ।
Editor: Shahin Ahmed & Sadrul Islam Lukman
Office: Hoque Super Market, 3rd Floor, Zindabazar, sylhet.
Email: ekusheynet.syl@gmail.com
Contact: 01739447302