এদেশের শ্রমিক-মেহনতি মানুষ বরাবরই অবহেলিত। যাঁরা উৎপাদন করেন তাঁরাই দেশের প্রান্তিক-দরিদ্র জনগোষ্ঠী। আর তাদের মধ্যে আরও অবহেলিত চা-শ্রমিকরা। চা-শিল্পের ১৮৫ বছর হলেও চা-শ্রমিকদের জীবনমানের কাংখিত উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয় নি। মাত্র ১৮৫ দৈনিক মজুরিতে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন চা-শ্রমিকরা। আমরা আজও জরাজীর্ণ বাড়িতে বসবাস করছি, রয়েছে সুপেয় পানির অপর্যাপ্ততা। আমরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। আমাদের সন্তানদের শিক্ষার অধিকার রাষ্ট্র থেকে নিশ্চিত করা হয় নি। অতি অল্প আয়ে বর্তমানের উর্ধ্বগতির বাজারে সংসারে চালানো খুবই কষ্টকর। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চা-শ্রমিকরা তীব্র আন্দোলন করলে মাত্র ৫০ টাকা মজুরি বৃদ্ধি করা হয়। বকেয়া মজুরি প্রায় ৩২ হাজার টাকা হলেও মাত্র ১১ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। এসব মেনে নিয়েই চা-শ্রমিকরা বাগানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
দ্বীপাক্ষীক চুক্তির মাধ্যমে মজুরি বৃদ্ধির নিয়ম থাকলেও ২০২৩-২৪ সালে নতুন মজুরি বৃদ্ধি পায় নি। ২০২৪-২৫ মেয়াদের ৬ মাস অতিক্রান্ত হতে চললেও নতুন মজুরি বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয় নি এখনো। বিগত সরকারের আমলে ২০২৩ সালের ১ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে চা-শ্রমিকের মজুরি ৫ শতাংশ (৮.৫০ টাকা) বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয়, যা বর্তমান সরকারের আমলে ২০২৪ সালে সেপ্টেম্বরে বাস্তবায়ন করে চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ। মাত্র সাড়ে আট টাকা মজুরি বৃদ্ধি চা-শ্রমিকদের সাথে স্রেফ তামাশা। যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে সেখানে প্রতি বছর সাড়ে আট টাকা মজুরি বৃদ্ধি চা-শ্রমিকদের জীবনে কোন কাজেই আসবে না। একটা পানের দাম দশ টাকা, একটা ডিমের দাম বারো টাকা, এই পরিস্থিতিতে ১৭৮.৫০ টাকায় সংসার খরচ বহন করা চা-শ্রমিকদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পরেছে। ১৮৫ বছর ধরে চলা বঞ্চনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করছে চা-শ্রমিকদের সাথে। চা-শ্রমিকদের ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এদেশে চা-চাষের জন্য নিয়ে আসা হয়। যাত্রা পথেই বহু শ্রমিক রোগে আক্রান্ত হয়ে, না খেয়ে, অত্যাচারের মুখে টিকতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেন। দুর্বিষহ সেই যাত্রায় যারা বেঁচে ছিলেন তারা এই ভূখণ্ডে এসে বন-জঙ্গল সাফ করে বসত বাড়ি তৈরি করেন এবং চা-চাষের উপযোগী ভূমি প্রস্তুত করেন। প্রথমে বিনা পারিশ্রমিকেই তাদের এসব কষ্টসাধ্য কাজ করতে হয়েছে। এদেশের ভূমিতে বসবাসের ১৮৫ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে কিন্তু আজও চা-শ্রমিকরা ভূমির অধিকার থেকে। ভূমির আইনি অধিকার না থাকায় চা-জনগোষ্ঠীকে বংশ পরম্পরায় এই পেশায় আটকে রাখা হয়েছে। বংশ পরম্পরায় একটি নির্দিষ্ট পেশায় আটকে রাখা আধুনিক দাসত্বের বৈশিষ্ট্য। স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় চা-জনগোষ্ঠী অন্যান্য নাগরিকদের তুলনায় রাষ্ট্রীয় বৈষম্যর শিকার হচ্ছেন। চা-জনগোষ্ঠীর আজ প্রাণের দাবি ভূমির মালিকানা। তাদের এই দাবির প্রতি আজ দেশের সকল মানুষ সংহতি জানাচ্ছেন।
চা-শ্রমিকরা যে মানবেতর জীবনযাপন করেন তা তাদের বাড়িঘরের দিকে তাকালেই সহজে চোখে পরবে। অধিকাংশ বাড়িঘরই জরাজীর্ণ। প্রতিবছর কোম্পানি থেকে মেরামতের জন্য বরাদ্দের নিয়ম থাকলেও ম্যানেজমেন্ট সেই নিয়ম মানার তোয়াক্কা করেন না। খড়ের-টিনের চালার ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানিতে চা-শ্রমিকদের ঘর ভেসে যায় কিন্তু বরাদ্দের নিয়ম থেকে যায় শুধু কাগজে কলমে। গত বছর শিলা বৃষ্টিতে চা-শ্রমিকদের ঘরবাড়ি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেগুলো মেরামতের জন্য ম্যানেজমেন্ট কোন উদ্যোগ নেয় নি। দুই রুমের ছোট ঘরে পরিবারের সবাই গাদাগাদি করে থাকেন। এখনো অনেক বাগানে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই, কুয়োর পানি ভরসা শ্রমিকদের। কিছু বাগানে নির্দিষ্ট সময়ে পানি সরবারাহ করা হয়, তখন বিশাল লাইনে দাড়িয়ে সে পানি সংগ্রহ করে রাখতে হয়। টিলায় বসবাসকারী শ্রমিক পরিবারগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ।
চা-শ্রমিকের বাড়িগুলো এমনভাবে তৈরি যেখানে সিলিং ফ্যান লাগানোর মত অবস্থা নেই। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৬০ জনের বাসায়ই ফ্যান নেই। যাদের বাসায় আছে তারা ছোট জালি ফ্যান ব্যবহার করেন। যে ফ্যানের বাতাস খাট পর্যন্ত পৌছায় না।৯০ জনের বাসায়ই টিভি নেই। বর্তমানে বিনোদন যেখানে স্বীকৃত মৌলিক চাহিদা। চা-বাগানগুলো এতটাই দুর্গম এলাকায় অবস্থিত যে শহরে বিভিন্ন প্রয়োজনে আসতে হলে গাড়ি রিজার্ভ করতে হয়, যা অনেক ব্যয়বহুল। খরচের কারণে তাই অনেকেই মাইলের পর মাইল পায়ে হাটতে বাধ্য হন। চা-বাগান মালিকের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও আদৌ সিংহভাগ চা-বাগানে তার ছিটেফোঁটাও নেই। নামমাত্র ওষুধ আর ড্রেসার দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।টাকাপয়সার অভাবে জটিল-দুরারোগ্য অসুখের চিকিৎসা করান না চা-বাগানের শ্রমিকরা। অসুখে ভুগে মৃত্যুকেই নিজেদের নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছেন চা-বাগানের মানুষরা।
রাষ্ট্র কর্তৃক শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়নে যতটুকু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেসব থেকেও বঞ্চিত চা-বাগানের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা ক্ষেত্রে চরম রাষ্ট্রীয় বঞ্চনার শিকার চা-শ্রমিকের সন্তানরা। চা-শ্রমিকের সন্তানদের শিক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব চা-বাগান মালিকদের। কিন্তু মালিকরা সে দায়িত্ব কখনোই পালন করেন নি। এক বা দুই রুমের শ্রেনী কক্ষে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেনীর ক্লাস হয়। শিক্ষকও মাত্র এক বা দুইজন। তাও সেই শিক্ষকরা নিয়োগ পান শ্রমিক হিসেবে। তাদের বেতন ও শ্রমিকদের মত দৈনিক ১৭৮ টাকা। বাগান মালিকদের দায়িত্বহীনতার কারণে মানসম্মত শিক্ষার অধিকার থেকে আজও চা-শ্রমিকের সন্তানরা বঞ্চিত। অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীরা মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস পেলেও নারী চা-শ্রমিকরা পান মাত্র ৩/৪ মাস। অপুষ্টি সহ সেকশনে খাওয়ার পানির অপর্যাপ্ততা, টয়লেট সুবিধা না থাকায় নারী শ্রমিকরা নানাবিধ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। এসব বৈষম্য-বঞ্চনার বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ে চা-শ্রমিকরা ১৯২১ সালে বিদ্রোহ করেছিলেন। যা ইতিহাসে "মুল্লুক চলো আন্দোলন" নামে পরিচিত। চরম নিষ্ঠুরভাবে চা-শ্রমিকদের সেই বিদ্রোহ দমন করেছিল ব্রিটিশ সরকার। বহু মানুষ আহত ও নিহত হয়েছিলেন। চা-শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে মুল্লুক চলো আন্দোলন আজো অনুপ্রেরণার উৎস। ২০ মে মুল্লুক চলো আন্দোলন স্মরণে দিবসটিকে জাতীয় চা-শ্রমিক দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা এবং সবেতন ছুটির দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু কোন সরকারই এবিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে নি।
এরকম প্রেক্ষাপটে চা-শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াইকে বেগবান করতে চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি আয়োজন করতে যাচ্ছে সংগঠনের প্রথম সম্মেলন। আগামী ২৯ জুন ২০২৫, রবিবার সকাল ১০ টায় শ্রীমঙ্গল জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সম্মেলনের উদ্েেবাধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে চা-শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০ টায়। সিলেট, মৌলভ, হবিগঞ্জ ও চট্রগ্রামের চা-বাগানের শত শত চা-শ্রমিক সমাবেশে আংশ নিয়ে নিজেদের দাবি তুলে ধরবেন। সম্মেলনের চা-শ্রমিক সমাবেশকে সফল করতে ইতিমধ্যেই শখানেক বাগানের চা-শ্রমিক, ছাত্র, যুবদের কাছে লিফলেট, পোস্টারের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বাগানে বাগানে শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জাতীয় কনভেনশন এর মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি। চা-জনগোষ্ঠীর জীবনের সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে ১০ দফা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে লড়াই-সংগ্রাম পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে চা-শ্রমিকদের সকল আন্দোলনে দৃঢ় ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে সংগঠনটি। কুলাউড়ার বোরহাননগরের চা-শ্রমিকদের মজুরি ছিল ৮৮ টাকা, ফেঞ্চুগঞ্জ এর ডালুছড়া চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ছিলো ৯৯ টাকা। যখন অন্যান্য বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা তখনো দুইটি বাগানের মালিকরা চা-শ্রমিকদের ঠকিয়ে যাচ্ছিলেন। আমাদের সংগঠন দুইটি বাগানের শ্রমিকদের সংগঠিত করে তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে মজুরি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়।
২০২২সালে আগস্ট মাসে ৩০০ টাকার মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা চা-শ্রমিক, ছাত-যুবদের সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। আন্দোলনের তীব্রতায় মজুরি ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১৭০ টাকায় উন্নীত হয়। তাতে চা-শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি প্রায় ৩২ হাজার টাকা হলেও মালিকরা মাত্র ১১ হাজার টাকা তিন কিস্তিতে পরিশোধ করে। সম্পূর্ণ বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি কয়েকশ চা-শ্রমিকদের নিয়ে ঢাকায় শ্রম অধিদপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। একইদিন বিকেলে ঢাকার শাহবাগে চা-শ্রমিকদের দাবির প্রতি নাগরিক সংহতি কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। চা-শ্রমিকের স্বার্থবিরোধী গেজেট বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন চা-বাগানে আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। তার আংশ হিসেবে আমাদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে শ্রম উপদেষ্টার সাথে দেখা করে গেজেট বাতিলের দাবি জানান এবং একই সাথে ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবি তুলে ধরেন। আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি বন্যায় ত্রাণ তৎপরতা, চিকিৎসা সহায়তা, শীতবস্ত্র বিতরণ সহ নানা সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ইতিমধ্যেই চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি চা-শ্রমিকদের আস্থা এবং নির্ভরতার জায়গায় নিজেদের অধিষ্ঠিত করেছে।
বর্তমানে চা-শ্রমিকরা দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছে। অনেক বাগানে নিয়মিত মজুরি দেয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগানের শ্রমিকরা ভয়াবহ সংকটে নিমজ্জিত। বকেয়া মজুরির আন্দোলন করতে করতে চা-শ্রমিকরা নতুন মজুরির আন্দোলনে যুক্ত হতে পারছেন না, যা প্রকৃতপক্ষে মালিকদের মজুরি বৃদ্ধি না করার কৌশল। অনেক চা-বাগান মালিক অন্যান্য সুযোগ সুবিধার জন্য চা-বাগান লিজ নিয়ে রেখেছেন। লিজের অধিকাংশ শর্তই তারা মানেন না। তাই দাবি উঠছে ব্যর্থ যখন বাগান মালিক, বাগান চালাবে চা-শ্রমিক। এসব ব্যর্থ বাগান মালিকদের লিজ বাতিল করে চা-শ্রমিকদের সমন্বয়ে চা-বাগান পরিচালনা করতে হবে। সরকারি মালিকানাধীন এন টি সি'র চা-বাগানের শ্রমিকরা ভয়াবহ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। এসব বাগানের চা-শ্রমিকরা নিয়মিত হাজিরা পাচ্ছেন না। বর্তমানের দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে মাত্র ১৭৮ টাকায় সংসার চালানো শ্রমিকদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পরেছে।
এরকম প্রেক্ষাপটে চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি আগামী ২৯ জুন ২০২৫, রবিবার আয়োজন করতে যাচ্ছে সংগঠনের প্রথম জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলন উপলক্ষে চা-শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দৈনিক মজুরি ৬০০ টাকা, ভূমির অধিকার সহ সকল নাগরিক অধিকার তথা ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে চা-শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দল যেন তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে চা-শ্রমিকের ভূমির অধিকার সহ ১০ দফা বাস্তবায়নের ঘোষনা দেয় সেই দাবি উত্থাপিত হবে সমাবেশে। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্রগ্রাম থেকে শতাধিক চা-বাগানের হাজার হাজার চা-শ্রমিক, ছাত্র-যুবরা এই সমাবেশে অংশ নিবেন। সমাবেশ সফল করতে চা-বাগানগুলোতে চলছে প্রচারণা, অনুষ্ঠিত হচ্ছে বৈঠক। ২৯ জুন, রবিবার সকাল ১১ টায় উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রথম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে সংগঠনের নতুন নাম গ্রহণ করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। আগামিতে চা-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন (প্রস্তাবিত) নামে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কাউন্সিল অধিবেশনে সংগঠনের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও শোক প্রস্তাব, সাংগঠনিক রিপোর্ট, নতুন কর্মসূচি গ্রহণ, অর্থ রিপোর্ট উত্থাপিত হবে কাউন্সিলে। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রথম জাতীয় সম্মেলনের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে। অংগীকার পুনর্ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে আগামীর লড়াই সংগ্রামকে বিজয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃপ্ত শপথের মধ্য দিয়ে নতুন কমিটি তার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অবহেলিত, শোষিত, বঞ্চিত চা-শ্রমিকদের লড়াইটা কঠিন। চা-শ্রমিকদের লড়াইয়ের পাশে এদেশের মানবিক, সচেতন নাগরিকদের দাঁডাতে হবে। শোষণের রাজনীতির বিপরীতে শক্তিশালী করতে হবে শোষণমুক্তির রাজনীতি। দীর্ঘ ১৮৫ বছর ধরে চা-বাগানে শ্রমিকদের আটকে রাখবার শৃঙ্খল ছিন্ন করার লড়াইকে বেগবান করতে হবে। চা-শ্রমিকদের প্রতি যে উদাসীনতা আর অবহেলা রাষ্ট্র প্রতিনিয়ত দেখিয়ে যাচ্ছে, তা চ্যালেঞ্জ ও মোকাবেলার শক্তি অর্জন করতে হবে। অন্যায়-জুলুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ন্যায়সংগত। ১০৪ বছর পূর্বে অধিকার আদায়ের দাবিতে চা-শ্রমিকদের পূর্বপুরুষদের মুল্লুক চলো আন্দোলনই চলমান শৃঙ্খল মুক্তির লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা। ইতিহাস স্বাক্ষী, যূথবদ্ধ লড়াইয়ে বিজয় সুনিশ্চিত।
Editor: Shahin Ahmed & Sadrul Islam Lukman
Office: Hoque Super Market, 3rd Floor, Zindabazar, sylhet.
Email: ekusheynet.syl@gmail.com
Contact: 01739447302