কোটা সংস্কারের আন্দোলন থেকে তীব্র গণঅভ্যুত্থানে রূপ পাওয়া যে জুলাই বদলে দিয়েছে এই ভূখণ্ডের ইতিহাস, তার বর্ষপূর্তিতে রক্তাক্ত জুলাইকে একটি লেখার মাধ্যমে স্মরন করেছেন জুলাই যোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা আহবায়ক আব্দুল রহিম। তিনি বলেন, "২০২৪ সালের ১৮ জুলাই ছিলো বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমি তখন একজন সংগঠক ও আন্দোলনকারী হিসেবে নিয়মিত সক্রিয় ছিলাম। সেই দিনের সকালে আমি প্রথম ফেসবুকে আন্দোলনের ছবি দিয়ে একটি পোস্ট করি, যাতে সবাই সচেতন হন এবং মাঠে নামে। সেদিন আমরা কয়েকজন মিলে বন্দরবাজার থেকে সিএনজি যোগে শাবিপ্রবির গেইটের দিকে রওনা দেই। পথিমধ্যে সুবিদবাজার ও আখালিয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্টে সতর্কতার সাথে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে আবার সিএনজিতে উঠি— কেবল আন্দোলনে পৌঁছানোর জন্য। আন্দোলনের বহরের সাথে যুক্ত হয়ে আমরা আম্বরখানা মুখী হয়ে আসতে থাকলে, আখালিয়ায় মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে আমরা পুলিশের বাধার মুখে পড়ি এবং বাধ্য হয়ে হাসপাতালের ভেতরে আশ্রয় নেই। সেখানেই একটি বাচ্চা ছেলেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মারা গেছে জানতে পারি। পরে জানা যায়, সে বেঁচে গেছে। এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আমাদের আরও বিচলিত করে তোলে। আমরা উপলব্ধি করি, শাবিপ্রবির গেইটে আন্দোলন সীমিত থাকলে তা সিলেটের স্বরূপ উপস্থাপন করতে পারবে না। তাই সিদ্ধান্ত নেই শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌহাট্টা–বন্দর বাজার অঞ্চলকে আন্দোলনের কেন্দ্র করতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ৩ আগস্ট থেকে চৌহাট্টা পয়েন্টে আন্দোলন গণজোয়ারে পরিণত হয়। শিবির-ছাত্রদলের কিছু বলয় সাহস দেয়। তারা আশেপাশে বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। ছাত্রফন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র কাউন্সিল সহ বাম সংগঠনগুলোও আমাদের সাথে যুক্ত ছিলো শুরু থেকেই। বিকাল প্রায় ৫টা বাজে আন্দোলন আওয়ামী পুলিশ বাহিনী ছত্রবঙ্গ করে।
৪ আগস্ট বন্দর বাজারে আন্দোলন তীব্রতর হয়। বিএনপির জেলা নেতৃবৃন্দ আন্দোলনে বহর নিয়ে যুক্ত হন। ঠিক তখনই সরকারি বাহিনী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সমন্বয়ে এক বর্বর হামলা শুরু হয়। আমরা পানি সরবরাহসহ ও রেসকিউ টিম গঠন করি । আমি নিজেও গ্যাসে অর্ধচেতন হয়ে পড়ি ও পরে লাঠির মারধরে শিকার হই। জ্ঞান ফিরে পাই সোবহানিঘাট ইবনে সিনা হাসপাতালের আউটডোরে।
৫ আগস্ট সকাল থেকে আবার জড়ো হই চৌহাট্টা পয়েন্ট ও আরএন টাওয়ারের সামনে। পুলিশ আমাদের ছত্রভঙ্গ করে, তবু অচেনা কয়েক ভাইয়ের সাথে মিলে হাওয়াপাড়া মোড়ে রাস্তা ব্লক করি। এসময় সেনাবাহিনীর একটি দল আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোনে খবর পাই ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়েছে, কিন্তু আমরা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থামাতে রাজি হইনি। কারণ আমরা চেয়েছিলাম গণআন্দোলনের সুফল যেন অন্য কেউ ছিনিয়ে না নেয়। প্রতিটা পূর্বের রাত অতিবাহিত হত অস্তিরতা ও বিভিন্ন জনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ, পরামর্শ ও আন্দোলনে যোগদানের আহ্বান করে। আমাদের কাছে '৭১ যেমন ছিলো শোষণের বিরুদ্ধে, তেমনি '২৪ ছিলো বৈষম্যের বিরুদ্ধে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এই লড়াই আমরা চালিয়ে যাবো। সংগঠনের পক্ষ থেকে আজও বলি বিজয় যদি হয়, সেটি হবে জনতার; হার যদি আসে, সেটিও হবে সম্মানজনক।
Editor: Shahin Ahmed & Sadrul Islam Lukman
Office: Hoque Super Market, 3rd Floor, Zindabazar, sylhet.
Email: ekusheynet.syl@gmail.com
Contact: 01739447302