
দিরাই প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ৪নং চরনারচর ইউনিয়নে ৪নং ওয়ার্ডে সরকারী পাকা সড়ক ভাঙ্গতে বাঁধা দেওয়ায় জামায়াতের ওয়ার্ড সেক্রেটারী মোক্তার হোসেনের নামে এক ব্যবসায়ীর উপর হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলাকারী খোকন কিবরিয়া (মেম্বার) মাদকসেবী মাদক ব্যবসায়ী স্থানীয় ওযার্ড, যুবলীগের সেক্রেটারী বলে জানা যায়। এই বিষয়ে বুধবার (৯ জুলাই) দিরাই থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের ১ মাস ২৩ দিনের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও মামলাটি রেকর্ড করেনি পুলিশ ও আসামীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। সন্ত্রাসীরা এখনো মোক্তার হোসেনকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে বলে জানা যায়। মোক্তার হোসেন দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের জামাতের ওয়ার্ড সেক্রেটারী ও লৌলারচর গ্রামের বাসিন্দা।
মোক্তার হোসেনের দিরাই থানায় দাখিলকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিগত ৩০ জুন সোমবার সকাল ১০টায় লৌলারচর গ্রাম থেকে শ্যামারচর বাজারের রোডে যাওয়ার সরকারী পাকা রাস্তাটি ভেঙ্গে ফেলার পরিকল্পনা নেয় খোকন কিবরিয়া (মেম্বার)। তাজুল হত্যার সাজাপ্রাপ্ত আসামী রহুল আমীন ও মুসলিম তালুকদার চক্ররা। এক পর্যায়ে তাদের বাড়ীতে একাধিক গোপনে মিটিং করে খোকনের নেতৃত্বে ১৮ জনের সন্ত্রাসীচক্র হাতে দা, রাম দা, কোঁদাল লোহার শাবল ও লাঠি সোঠা নিয়ে রাস্তায় আসে। পরে এই সন্ত্রীরা শাবল দিয়ে উক্ত পাকা রাস্তাটি ভেঙ্গে ফেলে কিছু অংশ ও কোদাল দিয়ে মাটি কাটতে শুরু করে। সরকারী রাস্তা ভাঙ্গতে দেখে মোক্তার হোসেন নিষেধ করায় মুসলিম তালুকদার, রুহুল আমীন, খোকন মেম্বার মোক্তারের উপর হামলা চালায়। সন্ত্রীদের হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে মোক্তার হোসেনের বুকে প্রচন্ড আঘাত করে। রাস্তায় ফেলে এলাপাতারি মারপিট করে। তার সাথে থাকা ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। মোক্তার হোসেনের বাম গালের উপরের সাড়ির একটি দাত ভেঙ্গে ফেলে। এই সন্ত্রাসী হামলার স্বীকার হয়ে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার গ্রহণ করেন তিনি। চিকিৎসা শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে বিষয়টি অবহিত করা হয়। পরে দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জের উপস্থিতিতে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপারকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়। পুলিশ সুপার অফিসার ইনচার্জকে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত মামলাটি রেকর্ড করেনি দিরাই থানার ওসি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মুসলিম তালুকদারের সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ কনেনি।
দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল রাজ্জাক জানান অভিযোগের তদন্ত চলেছে। তদন্তকার্মে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘাটনায় বিষয়ে নূরুল ইসলাম খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমার পূর্ব পুরুষেরা ও আমার দাদা হাজী আফসর খাঁ আজ থেকে ৪০ বছর পূর্বে আমাদের জমির উপর দিয়ে গ্রামের মানুষের চলাচলের সুবিধার স্বার্থে এই রাস্তাটি দিয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসী মাটি কেটে উচু করে একটি সড়ক দেয় পরবর্তীতে সরকারী অর্থে সিসি আরসিসি ঢালাই করা হয়। এই সড়কটি দিয়ে ১০/১৫টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। হঠাৎ আমি শুনি মুসলিমের বাড়ীতে একটি গোপন মিটিং করে এলাকায় সন্ত্রাসীদেরকে নিয়ে খোকন মেম্বার রাস্তাটি ৩০শে জুন সকাল ১০:০০ ঘটিকায় লোহার শাবল দিয়ে রাস্তাটি ভেঙ্গে ফেলে ও কোদাল দিয়ে মাটি কেটে রাস্তার ভিতরে বড় গর্ত করে। আমি নিষেধ করে বাজারে চলে যাই। মোক্তার এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় বাজার থেকে এসে দেখি
সন্ত্রীরা মোক্তারের উপর হামলা করেছে। আমি এই হামলার বিচার চাই। স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন ৯৫নং পিআইসির সভাপতি মতিন তাং ও তার পুত্র ৪টি ভুয়া প্রকল্পের সভাপতি খোকন কিবরিয়া (মেম্বার), ছেলে এবং পুত্র মিলে সরকারী অর্থ লুটপাট করে। ভ‚য়া একাধিক প্রকল্প সাজিয়ে পাকা রাস্তার উপর মাটি ভরাট করে খোকন কিবরিয়া।
তার বাবা উদ্ঘল বেড়িবাধ ও লছিমপুরের খাল ভরাট নামে জেলা প্রশাকের কার্যালয় থেকে ১৪ লক্ষ টাকার একটি পিআইসি এনে কাজ না করিয়ে সরকারী অর্থ লুটপাট করে ও পাকা রাস্তা কেটে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করে। বিবেকের তারনায় মোক্তার হোসেন পিতা পুত্রের এই অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করার ফলে পিতা পুত্রের দুর্নীতির বিষয়ে জানাজানি হলে সন্ত্রাসীরা মোক্তারের উপরে হামলা চালায়। আমরা এই হামলার বিচার চাই। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ০৪টি ভ‚য়া প্রকল্পের সভাপতি খোকন মেম্বার দিরাইয়ে উদ্ঘল বেড়িবাধ লাছিমপুরের খাল ভরাট নামে ৯৫নং পিআইসির সভাপতি আব্দুল মতিন তাং, পিতা পুত্রের দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে একটি প্রভাবশালী মহল জোড় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একটি গোপন সূত্রে জানা যায় মোক্তারের উপর হামলার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে স্থানীয় এলাকার সাংবাদিক নামধারী দুর্বৃত্তরা ও দিরাইয়ের সাংবাদিক নামাধারী আওয়ামীলীগের দালাল এবং একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে নিরপরাধ প্রতিবাদী যুবক মোক্তারের বিরুদ্ধে নানান মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এই বিষয়ে রুপ মিয়া ও এরশাদ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে রুপ মিয়া বলেন সকালে রুহুল আমীন ও রুহুল আমীনের ছেলেসহ বেশি কিছু সংখ্যক লোক সরকারী রাস্তা কাটে। আমি দেখে বাজারে চলে যাই। বাজার থেকে এসে শুনি মোক্তার রাস্তা কাটার প্রতিবাদ করায় তার উপর হামলা হইছে। আমরা এই সরকারী রাস্তার কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে জোড় দাবী জানাই। মোক্তারের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
রাস্তার পাশের বসবাসকারী কুরবান মিয়া বলেন আজ থেকে ৫০ বছর যাবত যেদিকে পানি নিষ্কাশন হয়েছে এখনও সেদিকেই পানি নিষ্কাশন হবে। আমরা রাস্তা কাটতে দিব না। এই রাস্তা কাটা হলে আমার বসত ভিটা থাকবে না। আমরা এলাকাবাসী যেকোনো মূল্যেই হোক সরকারী এই রাস্তা ভাঙ্গতে দিব না। এই রাস্তা কাটার প্রতিবাদ করায় মোক্তারের উপর যে হামলা হয়েছে আমরা এই হামলার বিচার চাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন আব্দুল মতিন তাং তার ছেলে খোকন মেম্বার ও মামুন, লোবন যখনি যে দল ক্ষমতায় আসে তখনি তারা সেই দলের পক্ষে কাজ করে। বিএনপির শাসনামলে তারা বিএনপি বলে পরিচয় দেয়। বিএনপি পতনের পর তারা আবার আওয়ামীলীগের পরিচয় বহন করে আওয়ামীলীগের নেতা প্রদীপ বাবুর মাধ্যমে নানান ভ‚য়া একাধিক প্রকল্প তৈয়ার করে সরকারী কোটি কোটি টাকা আত্মসাধ করে খোকন কিবরিয়া (মেম্বার) তার ভাই মামুন আলামীন চৌধুরীর গাড়ীর ড্রাইভার হয়ে এক পর্যায়ে আলামীন চৌধুরীর সহযোগিতায় সেও হয়ে যায় আওয়ামীলীগের বড় নেতা। আলামীন চৌধুরীর নাম ব্যবহার করে সরকারী জল মহাল নামমাত্র ইজারা মূল্য পরিশোধ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাধ করেছে মামুন। এক পর্যায়ে মামুন স্থানীয় এলাকায় সন্ত্রাসীদের গডফাদার হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। সে বিভিন্ন গ্রাম থেকে জোয়ারিদেরকে নিয়ে এক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ীতে মিলন বাজারের পাশে সন্ধ্যা ৬ টাকা থেকে সকাল ৮ টাকা পর্যন্ত চলত জুয়া ও মদ-গাঁজার আশর। এই আশর থেকে মামুন প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে। এক পর্যায়ে মামুন হয়ে যায় বাঁধাহীন স¤্রাট। আওয়ামীলীগের শাসনামলে দিরাই থানার তৎকালীন এসআই অরূপ-এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ মামুনকে তার জুয়া ও মদ-গাঁজার আশর থেকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ নেতা আলামীন চৌধুরীর ফোনে ছাড়া পেয়ে যায় মামুন। অপর একটি সূত্রে জানা যায় খোকন স্থানীয় মিলন বাজারে মদের ডিলার হিসাবে পরিচিত। লৌালারচর গ্রামে একাধিক ব্যক্তি দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতায় মদ বিক্রি করে আসছে খোকন মেম্বার ও তার লোকজন। খোকন মেম্বারের মদের ব্যবসার বিরুদ্ধে বারবার দিরাই থানা অভিযোগ করা হলেও রহস্য জনক কারণে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা দিরাই থানার পুলিশ। খোকনের চাচা রব্বানী তালুকদার প্রকাশ্যে গাঁজা বিক্রি করে আসছে দীর্ঘ দিন যাবত। কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। এই নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে এলাকাবাসীর মধ্যে। শুধু লৌলার চর গ্রামেই নয়, লৌলারচর, মুচিবাড়ী, লৌলারচর মিলন বাজারে, শাল্লার নৌকাঘাটে ও ভাটি অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে মদ বিক্রি করে আসছে খোকন মেম্বার ও তার লোকজন। যার ফলে স্থানীয় এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই বিষয়ে কেই প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদকারীদেরকে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে দিয়ে অথবা থানায় পেন্ডিং, চুরি, ডাকাতির
ছিনতাইয়ের মতো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে খোকন মেম্বার ও তার লোকজন। এ নিয়ে এলাকার মামুষ ভয়ে এদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। নিরবে সব সহ্য করে নিচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করলে তাদের অপকর্ম বেরিয়ে আসবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছক স্থানীয় এলাকাবাসী জানান। এই বিষয়ে অভিযোগকারী মোক্তার হোসেন বলেন জনস্বার্থে অভিযোগ করে আমি আজ বিপাকে পড়েছি। সন্ত্রীরা আমার উপর হামলা চালায় স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আব্দুল মতিন ও তার ছেলে খোকন কিবরিয়াসহ এই সন্ত্রাসীদের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে আমি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করি। কিন্তু ০৪ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগীতা বা প্রতিকার পাচ্ছি না। আমি এই সন্ত্রাসীদের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় এই সন্ত্রাসীদের হামলার স্বীকার হয়ে দিরাই থানায় আমি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছি। ১ মাস ২৩ দিনের বেশি অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত মামলাটি রেকর্ড করেনি দিরাই থানার ওসি।