
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, আহতদের পুনর্বাসন ও মানবাধিকারের দাবিতে সোচ্চার তরুণ সংগঠক আব্দুর রহিম সিলেটের সামাজিক ও মানবিক অঙ্গনে একটি সুপরিচিত নাম। দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, আহত শিক্ষার্থী এবং জুলাই যোদ্ধাদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে আসছেন। তাঁর কর্মকাণ্ড আজ সামাজিক ন্যায়বিচারের সংগ্রামে এক নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
আহতদের পাশে মানবিক ভূমিকা: ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের জন্য তথ্য সংগ্রহ, রেসকিউ টিম গঠন ও তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদানে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন আব্দুর রহিম। গোলাপগঞ্জে আহতদের পরিবারে গিয়ে শাবিপ্রবি সমন্বয়ক টিমের সঙ্গে উপহার প্রদান, তথ্য সংগ্রহ ও সহযোগিতায় অংশ নেন তিনি। তাকে একাধিকবার মাঠ পর্যায়ে আহতদের পাশে দাঁড়িয়ে পানি সরবরাহ, চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে দেখা গেছে। ৪ আগস্ট ২০২৪-এ তিনি সিলেট ওমেনস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করেন এবং তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সহায়তা প্রদান করেন। এছাড়া, জুলাই যোদ্ধা ইসলাম উদ্দিনের উপর পুলিশি হামলার পর ন্যায়বিচারের দাবিতে তিনি সরব থাকেন এবং আহত যোদ্ধার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিক সহমর্মিতার নজির রাখেন।
নিজের আহত হওয়ার অভিজ্ঞতা: একই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে সিলেট শহরের বন্দরবাজার এলাকায় অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন আব্দুর রহিম। সেদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিচার্জ ও হামলায় তিনি গুরুতরভাবে আহত হন। নাক ও মুখমণ্ডলে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অচেতন হয়ে পড়েন এবং সহযোদ্ধারা তাকে দ্রুত ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করেন। যা আজও তার স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে।
নিজের এই অভিজ্ঞতা তাঁকে আহতদের প্রতি আরও সংবেদনশীল করেছে এবং পুনর্বাসন আন্দোলনে দৃঢ় ভূমিকা রাখতে অনুপ্রাণিত করেছে।
জুলাই যোদ্ধা হিসেবে নেতৃত্ব:জুলাই অভ্যুত্থানের পর আব্দুর রহিম একজন গেজেটেড জুলাই যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পান। বর্তমানে তিনি জুলাই যোদ্ধা সংসদ, সিলেট জেলার আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্বে সিলেটসহ ঢাকা ও সিলেটে “জুলাই ঘোষণাপত্র” দাবিতে একাধিক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়, সিলেটের কর্মসূচিতে তিনি সভাপতিত্ব করেন। আহত ও শহীদ পরিবার পুনর্বাসন, অনুদান, ভাতা এবং যোদ্ধাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সহযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করা, সরকারি প্রক্রিয়ায় সহায়তা প্রদান ও সামাজিক স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা প্রশংসিত হচ্ছে।
মানবাধিকার অঙ্গনে নতুন অর্জন: সম্প্রতি আব্দুর রহিম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন, সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। মানবাধিকারকর্মীদের মতে, এটি সিলেট অঞ্চলের মানবাধিকার আন্দোলন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তাঁদের বিশ্বাস, আব্দুর রহিমের নিষ্ঠা, সততা ও দৃঢ় নেতৃত্ব সিলেটে মানবাধিকার, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং বঞ্চিত-অসহায় মানুষের অধিকার রক্ষায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
সামাজিকভাবে সচেতন, মানবিক সহমর্মী এবং দৃঢ়চেতা সংগঠক হিসেবে আব্দুর রহিম আজ সিলেটের ছাত্র-আন্দোলন, আহতদের পুনর্বাসন ও মানবাধিকার আন্দোলনের অন্যতম ভরসার নাম। সহযোদ্ধারা মনে করেন, তাঁর নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী সংগ্রাম, আহতদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকারের আন্দোলন আগামী দিনে আরও সুদৃঢ় ও কার্যকর হবে।