• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

নতুন সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু

admin
প্রকাশিত আগস্ট ১২, ২০২৪
নতুন সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু

একুশে নিউজ ডেস্ক : দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। রবিবার (১১ আগস্ট) সরকারের উপদেষ্টারা তাদের দপ্তরে এসে কাজ শুরু করেন।

ছাত্র-জনতার দাবি অনুযায়ী রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সব ক্ষেত্রে সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ উপদেষ্টা শপথ গ্রহণের পর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটিতে ছিলেন। এর মাঝেও শনিবার উচ্চপদস্থ ও জরুরি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বৈঠকে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলন দমনে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত বিচার করার পরিকল্পনাসহ ৫ দফা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে গতকালই দাপ্তরিক কাজ শুরু করেছেন। একইভাবে গতকাল সব উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দপ্তরে প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করেন। দাপ্তরিক কাজের ফাঁকে কয়েকজন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাও বলেছেন।

এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন দাপ্তরিক কাজের প্রথম দিনই আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। এ বিষয়ে দুপুরে সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দ্রুততম সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। সব পুলিশ সদস্যকে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে যোগদান করতে বলা হয়েছে। নইলে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন নিজ দপ্তরে কাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অডিটোরিয়ামে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমিরাতে দণ্ডপ্রাপ্ত প্রবাসীদের মুক্তির বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট শাট ডাউনের কারণ খুঁজে বের করা হবে। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘বাংলাদেশে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন ও শেখ হাসিনা জাতীয় যুব ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তনসহ তিনটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।’

সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে অধিকতর জনবান্ধব করা হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা হবে।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘দেশবাসী ইলিশ পাবে না আর বিদেশে রপ্তানি হবে, এটা হতে পারে না। আগে দেশকে গুরুত্ব দিতে হবে, এরপর রপ্তানি হবে। দেশের মানুষ যাতে কম দামে ইলিশ মাছ পায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

কোটা সংস্কারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট সোমবার প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। গতকাল রবিবার পর্যন্ত একজন বাদে সবাই শপথ নিয়েছেন এবং সবাইকে দপ্তর বণ্টন করা হয়েছে। গতকাল শপথ নেওয়া দু-জন আজ সোমবার থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করতে পারেন বলে জানা গেছে।

তবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়নি। সব পক্ষই বলছে, যৌক্তিক সময় পর্যন্ত এই সরকার দায়িত্ব পালন করবে। একাধিক উপদেষ্টা বলেছেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার সংস্কারের দাবি ঠিক করতে যত দিন লাগবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তত দিনই থাকবে।

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আওয়ামী লীগ দেশে সরকার গঠন করে। টানা চতুর্থবারসহ পঞ্চম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ১১ জানুয়ারি সরকারের ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীসহ ৩৬ জনের মন্ত্রিপরিষদ গঠন হয়। এতে আ ক ম মোজাম্মেল হক, ওবায়দুল কাদের, নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ডা. দীপু মনি, মো. তাজুল ইসলাম, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আনিসুল হক, ড. হাছান মাহমুদ, আব্দুস শহীদ, সাধন চন্দ্র মজুমদার, উবাইদুল মোকতাদির চৌধুরী, আব্দুর রহমান, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, আব্দুস সালাম, মহিবুল হাসান চৌধুরী, ফরহাদ হোসেন, ফরিদুল হক খান, মো. জিল্লুল হাকিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, নাজমুল হাসান, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, সামন্ত লাল সেন মন্ত্রী হন। এ ছাড়া, সিমিন হোসেন রিমি, নসরুল হামিদ, জুনাইদ আহমেদ পলক, মো. এ আরাফাত, মহিবুর রহমান, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাহিদ ফারুক, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বেগম রুমানা আলী, শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আহসানুল ইসলাম (টিটু) প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় সংসদের ৩৫০টি আসনের মধ্যে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে জয়লাভ করে। ৬২টি আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের নেতা। জাতীয় পার্টি জয় পায় ১১টি আসনে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, জাসদ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয়ী হয়। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে গত ৬ আগস্ট জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।