
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সচিব মোঃ তারিকুল ইসলামের পদের আদেশ বাতিলের দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। বুধবার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবরে এই স্মারকলিপি প্রদান করেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের গ্রহণ করেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার খান মোঃ রেজা-উন-নবী ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন, আমিনুল ইসলাম ডিনেস, ইব্রাহীম, রাফি, সঞ্জয়, ইউসুফ, সজিদুর রহমান, আবুল কাশেম, নয়ন আহমদ অন্যান্য শিক্ষার্থীগণ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষাক্ষেত্রে ফ্যাসিস্ট মুক্ত ও জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণের লক্ষ্যে আমরা একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। গত ০২ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত আদেশ নং ৩৭.০০.০০০০.০৯০.০২.০০৫.২০২৫-২২০ অনুযায়ী মোঃ তারিকুল ইসলাম (আইডি: ৪২৪৩), অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সিলেটের সচিব পদে প্রেষণে পদায়নের আদেশ জারি করা হয়েছে। যিনি নিজেকে সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের তথাকথিত মেয়ের জামাই হিসেবে পরিচয় দিতেন। এই পদায়ন এমন এক সময় ঘটেছে যখন দেশব্যাপী “জুলাই বিপ্লব” উদযাপিত হচ্ছে-যে বিপ্লব গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় একজন প্রাক্তন বিতর্কিত শিক্ষা প্রশাসক, যিনি দীর্ঘদিন যাবত ফ্যাসিবাদী শাসনের ঘনিষ্ঠ দোসর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাকে শিক্ষা বোর্ডের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়াকে আমরা ‘জুলাই বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে তামাসা’ হিসেবে দেখছি।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, তৎকালীন ফ্যাসিস্ট শিক্ষামন্ত্রী জনাব নূরুল ইসলাম নাহিদ যখন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেন, তখন মোঃ তারিকুল ইসলাম গণমাধ্যমে তাকে “বাংলাদেশ তথা বিশ্বের গর্ব” বলে অভিহিত করেন। এই সংক্রান্ত বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহুল প্রচলিত হয়েছে। এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে তিনি সেই ফ্যাসিস্ট নীতির সক্রিয় সমর্থক ও ঘনিষ্ঠ অনুগত। মোঃ তারিকুল ইসলাম অতীতে সহযোগী অধ্যাপক থাকা অবস্থায় সাবেক ফ্যসিস্ট শিক্ষামন্ত্রীর আনুকূল্যে উপাধ্যক্ষ পদে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেছেন এবং কৌশলে অধ্যক্ষের দায়িত্বও দীর্ঘ সময় গ্রহণ করেছেন। তার এই নিয়োগের পেছনে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের সরাসরি হাত ছিল যা তিনি নিজেই গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি তিনি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েই আরও লাভজনক পদবী পেতে সক্রিয় হয়েছেন। তার একটি পূর্ববর্তী সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই বলেছিলেন যে, তৎকালীন ফ্যাসিস্ট শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ তাকে উপাধ্যক্ষ বানিয়েছেন এবং তিনি বিয়ানীবাজার কলেজ থেকেই অবসরে যেতে চান-এটাই তার অন্তিম চাওয়া।এই পদায়নকে ঘিরে সিলেট অঞ্চলজুড়ে শিক্ষক, ছাত্র ও সচেতন নাগরিক সমাজের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে।
স্মারকলিপির দাবিসমূহ:
১. আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা পূর্বে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তির স্বীকার হতাম। কিন্তু বর্তমান সচিব চৌধুরী মামুন আকবর আসার পর থেকে আমাদের সেবা কার্যক্রম সিন্ডিকেট ও দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে সহজভাবে করতে পারছি। সুতরাং, শিক্ষার্থী বান্ধব বর্তমান সচিবকে স্বপদে বহাল করতে হবে।
২. মোঃ তারিকুল ইসলাম-এর সচিব, সিলেট শিক্ষা বোর্ড পদে পদায়নের আদেশ বাতিল করতে হবে।
৩. সিলেট শিক্ষা বোর্ডে বিগত ফ্যাসিস্ট আমলের দীর্ঘদিনের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের অপসারণ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে ফ্যাসিবাদপন্থী কর্মকর্তা বা প্রভাবশালীদের পুনর্বাসন বন্ধ করতে হবে।
৪. শিক্ষাবোর্ডে দীর্ঘদিন যাবৎ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদ খালি রয়েছে দ্রুত উক্ত পদে যোগ্য, নিরপেক্ষ, জুলাই বিপ্লবের ধারক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে।
৫. দীর্ঘদিন যাবৎ উক্ত বোর্ডে একাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাগণ বিদ্যমান, উক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও সংশ্লিষ্ট পদে যোগ্য, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে।