
প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার জ্বালায় জোরপুর্বক ধর্ষণ করতে গিয়েছিলেন চিহ্নিত নারীলোভী মোহাম্মদ তোয়াহিদ সারওয়ার ওরফে তাজ উদ্দিন। যিনি নিজেকে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র প্রচার সেলের নেতা বলে দাবী করেন। কিন্তু যত বড় নেতাই হন না কেন, ওই যুবতীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে ধর্ষণ করতে না পারলেও করেছেন যুবতীর শ্লীলতাহানী। বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে করেছেন বেপরোয়া নির্যাতন। তাতে মেয়েটি হয়েছে মারাত্মক আহত। আর এতেই নেতা ফেঁসে গেছেন ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন মামলায়।
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী সিংচাপইড় ইউনিয়নের গহরপুর গ্রামে গত ১১ জুলাই এ ঘটনাটি ঘটেছে। এ ব্যাপারে নির্যাতনের শিকার যুবতীর ছোট ভাই ইমন মিয়া গত ১৪ জুলাই সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা সুত্রে জানা গেছে, সিংচাপইড় ইউনিয়নের গহরপুর গ্রামের এক দরিদ্র কৃষকের কন্যা ও জাউয়াবাজার ডিগ্রি কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীকে দেশে আসলে কলেজে যাওয়া-আসার পথে সব সময় উত্যক্ত করতেন যুক্তরাজ্য বিএনপি’র প্রচার সেলের স্বঘোষিত নেতা, স্থানীয়ভাবে অর্থ-বিত্তে প্রভাবশালী, গহরপুর গ্রামের মৃত রইছ উল্লার ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মোহাম্মদ তোয়াহিদ সারওয়ার ওরফে তাজ উদ্দিন। নারী কেলেংকারির ঘটনায় গোটা এলাকায় তাজ উদ্দিনের বেশ নামডাক রয়েছে। এলাকায় এ নিয়ে মুখরোচক আলোচনাও হয় হর-হামেশা। সেই মোহাম্মদ তোয়াহিদ সারওয়ার ওরফে তাজ উদ্দিন কৃষকের তরুণী মেয়েকে প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে টোপ গেলাতে পারেননি। পরে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হন। এরপরে দিনের পর দিন কলেজে যাওয়া-আসার পথে শুরু হয় নানা প্রকারের অশ্লীল অঙ্গ-ভঙ্গী। কিন্তু কিছুতেই কৃষক কন্যা রাজি না হওয়ায় শুরু হয় প্রত্যাখ্যাতের প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ। গত ১১ জুলাই বাড়ির নিত্যপণ্য আনার জন্য ভিকটিমের ছোট ভাই ইমন মিয়া স্থানীয় হাটে যায়। আর কৃষক পিতা ও তাঁর স্ত্রী তরুণী মেয়েকে বাড়িতে রেখে জরুরী প্রয়োজনে পাশের বাড়ি যান। তখন আগে থেকেই উৎ পেতে থাকা তাজউদ্দিন সন্ধ্যে সাড়ে ৭টায় খালি বাড়িতে বসতঘরে ঢুকে তার যুবতী মেয়েকে একা পেয়ে অতর্কিতে ঝাঁপটে ধরে। মুখ চেপে রেখে ধর্ষক তাজ উদ্দিন যুবতীর পরণের কাপড়-চোপড় জোরপূর্বক খুলে নিয়ে ধর্ষণ করতে উদ্যত হয়। সুযোগে সে মুখের চাপ খুলতে পেরে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে। আকস্মিক ওই মেয়ের চিৎকার শুনে পাশের বাড়ি থেকে ভিকটিমের বাবা-মা এবং পথচারী জনৈক আব্দুল আউয়ালসহ আশেপাশের লোকজন দ্রুত দৌঁড়ে চলে আসেন। লোকজন আসতে দেখে ধর্ষক তাজউদ্দিন বাড়ির সামনে দিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। বিদ্যুতের আলোয় উপস্থিত সবাই তাকে দেখে চিনতে পারেন। খবর পেয়ে ভিকটিমের ছোট ভাই ইমন মিয়া দ্রুত বাজার থেকে ছুটে আসেন এবং চিকিৎসার উদ্দেশ্যে জখমী বোনকে নিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করেন। ভিকটিম সেখানে দু’দিন অবস্থান করে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
১২ জুলাই সন্ধ্যায় ভিকটিমের ছোট ভাই ইমন মিয়া ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ছাতক থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে বাদীকে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইমন মিয়া নিজে বাদী হয়ে ধর্ষক তাজউদ্দিন ওরফে সারওয়ার আহমদকে একমাত্র আসামী করে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন (নারী ও শিশু দমন মামলা {পিটিশন} নং-১৭৬/২৫)। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছেন।
উল্লেখ্য, স্থানীয় গহরপুর নিবাসী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান হত্যা মামলার (সিআর মামলা নং- ৪৮৮/২৪) প্রধান আসামীও উপরোক্ত মোহাম্মদ তোয়াহিদ সারওয়ার ওরফে তাজ উদ্দিন। আরেক ঘটনায় ১৯৯৪ সালে লন্ডনে এক নাবালক মেয়েকে অপহরণ, ধর্ষণ ও গুমের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে মোহাম্মদ তোয়াহিদ সারওয়ার ওরফে তাজ উদ্দিন ৪ বছর কারাভোগ করেন।এছাড়াও মোহাম্মদ তোয়াহিদ সারওয়ার ওরফে তাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে অনেক কুকীর্তি ও মামলার ঘটনা রয়েছে।