
অনলাইন ডেস্ক : সিলেটে ছাত্রজনতার কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৮ আগষ্ট জুলাই পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের গুলিতে জুবেদ আহমদ হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ১২ আগষ্ট ২০২৪ তারিখে সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কোতোয়ালী থানার ঝেরঝেরীপাড়া আব্দুল সালামের পুত্র কামরুল হোসাইন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। গত ১২/০৮/২০২৪ তারিখে সিলেট শহরের বন্দরবাজারস্থ কোর্ট পয়েন্টে এঘটনা ঘটে।
আদালতের বিচারক মামলাটি এফআইআরভুক্ত করতে থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ৫১ জনের নাম উল্লেখ করে বিভিন্ন পেশার প্রায় ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ধারা: ১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩০২/১৪৯ দঃ বিঃ।
মামলার আসীমরা হলেন-(১) শামীম আহমদ (৪৫), পিতাঃ মনির মিয়া, সাং-টিলাগড়, সাধারণ সম্পাদক, জেলা যুবলীগ, (২) রাহেল সিরাজ (৩০), পিতা রফিক মিয়া, সাং-ভাদেশ্বর, থানা-গোলাপগঞ্জ, জেলা-সিলেট। সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্রলীগ, (৩) সোহেল আহমদ, (২৮), পিতা কামাল মিয়া, সাং-জল্লারপার, ছাত্রলীগ নেতা, (৪) আলম খান মুক্তি (৫০), পিতাঃ মৃত-আব্দুল মোক্তাদির, সাং-কাজলশাহ, সভাপতি মহানগর যুবলীগ, (৫) মুশফিক জায়গীরদার (৪৭), পিতা মৃতঃ মজির উদ্দিন জায়গীরদার, সাং-শিবগঞ্জ, সাধারণ সম্পাদক মহানগর যুবলীগ, (৬) রিমাদ আহমদ রুবেল (৪৫), পিতা অজ্ঞাত, সাংগঠনিক সম্পাদক মহানগর যুবলীগ, (৭) বদরুল ইসলাম (৫২), পিতাঃ আব্দুল খালিক, সাং-শাহজালাল উপশহর, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা, (৮) এজাজুল হক আহমদ (৫০), পিতা মৃতঃ ময়না মিয়া, সাং-মিরাবাজার, সভাপতি জেলা শ্রমিকলীগ (৯) কামাল আহমদ (৩৮), পিতা অজ্ঞাত, যুবলীগ নেতা (১০) মাছুম আহমদ মাছুম (৩৫), পিতা জমসেদ আলী, সাং-তেররতন, যুবলীগ নেতা (১১) নাহিদ আলম মাহিম (২১), পিতা-আব্দুল আজিজ, সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিশ্বনাথ উপজেলা শাখা সাং-টেংরা, পোঃ লালাবাজার, থানা-বিশ্বনাথ, জেলা-সিলেট। (১২) আকিক চৌধুরী (৫২), পিতা মৃত তমজিদ আলী, সাং-চারাদীঘির পার, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা (১৩) রেজওয়ান আহমদ (৩২), পিতাঃ অজ্ঞাত, আওয়ামীলীগ নেতা (১৪) মহসীন চৌধুরী (৪৫), পিতাঃ অজ্ঞাত, সাধারণ সম্পাদক ১৭নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ, (১৫) ইলিয়াছুর রহমান জুয়েল (৪০), পিতাঃ অজ্ঞাত, সদস্য মহানগর যুবলীগ, (১৬) ইমদাদ হোসেন ইমু (৩৩), পিতাঃ অজ্ঞাত, যুবলীগ নেতা (১৭) সাকারিয়া হোসেন সাকির (৩৫), পিতা অজ্ঞাত, যুবলীগ নেতা, (১৮) রুপম আহমদ (৩৭), পিতা অজ্ঞাত, যুবরীগ নেতা, (১৯) সামসুল ইসলাম (৪৯) পিতাঃ অজ্ঞাত, সাবেক দপ্তর সম্পাদক জেলা আওয়ামীলীগ, (২০) কবির হোসেন জুবেল (৪৫), পিতা অজ্ঞাত, ২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা, সাং-ইলেকট্রিক সাপ্লাই, (২১) সানী হোসাইন (২৫), পিতা অজ্ঞাত, ছাত্রলীগ নেতা, (২২) তায়েফ আহমেদ ইফতি (২৩), সহ-সভাপিত জেলা ছাত্রলীগ, পিতাঃ আশিক আহমদ, সাং-শাহী ঈদগাহ, থানা-কোতোয়ালী, জেলা-সিলেট। (২৩) রাকিব আহমদ (২৫), পিতাঃ অজ্ঞাত, ছাত্রলীগ নেতা, সাং-বড়বাজার, (২৪) রাজন আহমদ (২৭), পিতাঃ অজ্ঞাত, সহ সভাপতি জালালাবাদ থানা ছাত্রলীগ, (২৫) আলতাফ আহমদ (৩০), পিতাঃ অজ্ঞাত, ছাত্রলীগ নেতা, সাং-খাসদবির, (২৬) সেবুল আহমদ (৩২), পিতাঃ অজ্ঞাত, ১৬নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা (২৭) গোলাম বাছিত রিমন (৪০), পিতাঃ অজ্ঞাত, আওয়ামীলীগ নেতা, (২৮) খলিলুর রহমান (৫০), পিতাঃ অজ্ঞাত, উলামালীগ নেতা, (২৯) ছুরত আলী (৪৫), পিতা অজ্ঞাত, সদস্য মহানগর আওয়ামীলীগ নেতা, (৩০) কালাম মিয়া (৪২), পিতা অজ্ঞাত, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, (৩১) ইমরান আহমদ (৩৯), পিতাঃ অজ্ঞাত, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগ, সাং-কালিবাড়ী, (৩২) সাব্বির আহমদ (৩০), পিতাঃ অজ্ঞাত, ছাত্রলীগ নেতা, সাং-নয়াবাজার, জালালাবাদ, (৩৩) মিফতাউল কবির (৫০), পিতাঃ অজ্ঞাত, আওয়ামীলীগ নেতা, (৩৪) আব্দুল হেকিম (৪১) পিতাঃ অজ্ঞাত, আওয়ামীলীগ, (৩৫) বদরুল হাসান রানা (৩৩) পিতাঃ অজ্ঞাত, যুবলীগ সদস্য, সাং-কুলাউড়া, (৩৬) রফিক উদ্দিন (৪০) পিতা -অজ্ঞাত, সদস্য জেলা যুবলীগ, (৩৭) মোঃ ইসমাইল হোসেন, (৫১), পিতাঃ অজ্ঞাত, সভাপতি গোয়াইনঘাট ইউনি আওয়ামীলীগ, (৩৮) বাবুল আহমদ (৪২), পিতাঃ অজ্ঞাত, সদস্য কানাইঘাট যুবলীগ, সাং-বানিগ্রাম, থানা-কানাইঘাট, জেলা-সিলেট (৩৯) বিপ্র দাস বিশু (৪৫), পিতা অজ্ঞাত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুনামগঞ্জ শ্রমিকরীগ, (৪০) আলী আহমদ ইদন (৩৯), পিতা অজ্ঞাত, ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা, (৪১) দীপ্ত (২৫), পিতাঃ অজ্ঞাত, সিলেট জেলা ছাত্রলীগ নেতা, (৪২) আব্দুর রকিব বাবুল (৪৫), পিতাঃ অজ্ঞাত, সাধারণ সম্পাদক, জেলা কৃষকরীগ, (৪৩) আফছর আহমদ (৪৮), পিতাঃ অজ্ঞাত, সাবেক চেয়ারম্যান, খাদিমপাড়া ইউপি, (৪৪) আব্দুস সামাদ (৩৫), পিতা অজ্ঞাত, যুবলীগ নেতা, সাং-শাহপরাণ, (৪৫) হান্নান আহমদ (৫১), পিতাঃ অজ্ঞাত, আওয়ামীলীগ নেতা, (৪৬) মিসবাহুল ইসলাম সুহেল (৫২), পিতাঃ অজ্ঞাত, আওয়ামীলীগ নেতা (৪৭) আপ্তাব উদ্দিন, পিতা মৃত-আবুল হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি, কাউন্সিলর, ৭নং ওয়ার্ড, সিলেট সিটি কর্পোরেশন, সিলেট, (৪৮) পীযুশ কান্তি দে (৪৫), পিতা ননী গোপাল দে, সহ-সভাপতি সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ, সাং-নবীন-০৩ ভাঙ্গাটিকর, (৪৯) সাজলু লস্কর (৪০), পিতা-আব্দুস ছালাম লস্কর, পিএস, মেয়র সিলেট সিটি কর্পোরেশন, সাং-শাহজালাল উপশহর, সিলেট, (৫০) রুহেল আহমদ (৩৫), পিতা- ফিরোজ মিয়া, সভাপতি সরকারী কলেজ ছাত্রলীগ, কউন্সিলর, ৩২ নং- ওয়ার্ড, সিলেট সিটি কর্পোরেশন, সাং-পূর্ব ভাটপাড়া মেজরটিলা, (৫১) সজল দাস অনিক, পিতা অজ্ঞাত, সাং- দাড়িয়াপাড়া, সাংগঠনিক সম্পাদক সিলেট জেলা ছাত্রলীগ, (৫২) সেলিম মিয়া।
বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন-শেখ হাসিনা সরকারের মদদপুষ্ট আওয়ামী লীগ দুর্বৃত্তরা ও অবৈধ সরকারের অপেশাদার পুলিশ ও দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে জুবেদ আহমদকে হত্যা করা করে। তিনি পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গত ১২ আগস্ট নগরীর বন্দরবাজারে ছাত্রজনতার উপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করে জুবেদ আহমদকে হত্যা করা হয়।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, বন্দরবজারে ছাত্রজনতার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালনের আসামীগণ বেআইনী জনতায় মিলিত হইয়া দেশি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র বন্দুক, পিস্তল, রিভলবার, রাইফেল, শর্টগান, ককটেল, পেট্রোল বোমা, দা, রাম দা, কিরিছ, রড, লাঠি, জিআই পাইপ সহ ইত্যাদি অস্ত্র সস্ত্র নিয়া নিরীহ ও নিরস্ত্র ছাত্র জনতাকে চতুরদিক থেকে ঘিরে ফেলে শক্তির ধাপট দেখাইয়া দলবদ্ধ ভাবে শক্তির মহড়া, ধাপট প্রদর্শন করিয়া ও ভয়ভীতি দেখাইয়া অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করিয়া নিরীহ ছাত্র জনতাকে হত্যার জন্য নির্বিচারে ককটেল ও পেট্রোল বোমা এবং অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়া গুলি বর্ষন করে। তখন আসামীগণ তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা প্রকাশ্যে ছাত্র জনতাকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোতাড়ী গুলি করে। আসামীগণের গুলি বর্ষনের ফলে মোঃ জুবের আহমদ এর মাথার পিছনে, পেটে ও বুকে গুলি বিদ্ধ হইয়া মাটিতে লুটিয়া পড়ে। মোঃ জুবের আহমদ এর মৃত্যু নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ১১,১২নং আসামী রাম দা দিয়া কুপাইতে থাকে। মোঃ জুবের আহমদকে রক্ষার জন্য আশিক মিয়া ও জাকির হোসেন আগাইয়া আসিলে তাহাদেরকে লক্ষ করিয়া ১৩ হইতে ২০ নং আসামীগণ ককটেল ও পেট্রোল বোমা ছুড়িয়া মারে। ইহাতে আশিক মিয়ার মাথায় ককটেল বিস্ফোরিত হইয়া মারাক্ত রক্তাক্ত জখম হয় এবং জাকির হোসেনের বাম পায়ের মাসুলিতে পেট্রোল বোমা বিস্ফোরিত হইয়া পায়ের মাসুলি জলসিয়া যায়। ২১ হইতে ২৮ নং আসামীগণ রড, লাঠি, জিআই পাইপ দিয়া আশিক মিয়া ও জাকির হোসেনকে এলোপাতাড়ী পিটাইতে থাকেন। ২৯ হইতে ৫২ নং আসামীগণ নির্বিচারে নিরীহ ছাত্র জনতা ককটেল, পেট্রোল বোমার আঘাতে ও গুলিতে আহত হইয়া সিলেটের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। জুবেদ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণকালে কর্তব্য চিকিসক মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
এঘটনায় কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, সিলেটে ছাত্রজনতার কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের গুলিতে জুবেদ আহমদ হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামীদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।