• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় বৃদ্ধা মা

admin
প্রকাশিত নভেম্বর ১৯, ২০২০
সিলেটে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় বৃদ্ধা মা

একুশে নিউজ প্রতিবেদক :: শারী বেগম আগের মত আর হাঁটতে চলতে পারেন না। অনেকটা শয্যাশায়ী তিনি। স্বামী পরপারে চলে গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। শিশুপুত্র হত্যার বিচার দেখে যাওয়ার স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্ন হয়েই থেকে যাচ্ছিলো শারী বেগমের। এবার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে-এমন প্রত্যাশা তার ।

কারণ,হত্যাকান্ডের দীর্ঘ ২৩ বছর পর আগামী ২২ নভেম্বর ঘোষণা হবে আলোচিত শিশু আলাল হত্যা মামলার রায়। আর এর মাধ্যমেই যেন অপেক্ষার পালা শেষ হতে যাচ্ছে পুত্র হত্যার বিচার দেখে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর এক মায়ের।

১৯৯৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের ঘোপাল গ্রামে ঘটেছিলো আলোচিত এই হত্যাকান্ডটি। দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছর পর রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে আলোচিত এই শিশু হত্যা মামলার। আগামী ২২ নভেম্বর মামলার রায়ের তারিখ ধার্য্য করেছেন সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালত। রায়ের তারিখ ঘোষণার মধ্য দিয়েই শেষ হচ্ছে মায়ের দীর্ঘ অপেক্ষার পালা।

মামলার এজাহার, চার্জশীট ও অনুসন্ধানে জানা যায়, আলাল মিয়া (৯) সিলেট শহরতলীর কান্দিগাঁও ইউনিয়নের ঘোপাল গ্রামের মো. আব্দুল বারীর পুত্র। সে স্থানীয় ঘোপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলো। ৩ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে আলাল ছিলো ২য়। ১৯৯৭ সনের ১৯ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেল হতে ঘোপাল জামে মসজিদের পূর্ব পার্শ্বের মাঠে ওয়াজ মাহফিল চলছিল। আলাল মিয়া সন্ধ্যা অনুমান ৭টার দিকে ওয়াজ মাহফিলে যায়। রাত ৯ টা পেরিয়ে গেলেও সে বাড়ীতে ফিরে না আসায় তার বাবা ও চাচারা তার খুঁজে বের হন। রাতভর খোঁজাখুঁজি করে কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। পরদিন সকাল বেলা ঘোপাল জামে মসজিদের উত্তরের মাঠে শিশু আলাল মিয়ার ক্ষত-বিক্ষত লাশ পাওয়া যায়।

আলাল হত্যাকান্ডের পর তার বাবা আব্দুল বারী বাদী হয়ে তৎকালীন কতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং- জি আর ১৩৮১/৯৭)। মামলায় আসামী করা হয়, ঘোপাল গ্রামের আলী আশরাফ ওরফে আলিশ, হেকিম আলী, আব্দুল মানিক, মকবুল, সাচ্চা, ছাবির, আলী আহমদ, আব্দুল জলিল, সোহেল, আব্দুর রহমান ফকির, সোনা উল্যাহ, সিরাজ, আনোয়ার, জমসিদ আলী ও তার কয়েকজন সহযোগীকে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামীদের সাথে জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চলছিলো আলালের পরিবারের। এই আক্রোশে আসামীরা পরিকল্পিত ও নির্মমভাবে আলালকে হত্যা করে। মামলার আসামীদের মধ্যে বর্তমানে ২ জন পলাতক এবং ২ জন মারা গেছেন। অন্য আসামীরা রয়েছেন জামিনে। মামলাটি সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে (দায়রা ১৪২৪/২০১৩) বিচারাধীন রয়েছে। আলোচিত এ মামলাটি তৎকালীন সময়ে কতোয়ালী থানার একজন এসআই তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। মামলাটি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কতোয়ালী থানা হতে পরবর্তীতে ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি সিআইডিতে প্রেরণ করা হয়।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৩ সালের ৫ মার্চ সি.আই.ডি সিলেট জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ছিদ্দিকুর রহমান আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৩৬৪/৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণও শেষ হয়েছে। দফায় দফায় তদন্ত ও তদন্ত সংশ্লিষ্টদের স্বাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রদান দেরীর কারণে দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে মামলাটি। আসামীপক্ষের বারবার সময়ের আবেদন ও সাক্ষী রিকল করার কারণে বিলম্ব হতে থাকে মামলার কার্যক্রম।

সর্বশেষ গত ১৪ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য তারিখ ধার্য্য করেছেন আদালত।

নিহত আলাল মিয়ার চাচা মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, মামলার বাদী আলালের পিতা ২০১৩ সালে মারা গেছেন। এরপর থেকে তিনি মামলাটির বাদী। আদালত কর্তৃক বার বার সমন, ওয়ারেন্ট প্রেরণের পরও মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তারা সাক্ষ্য দিতে না আসায়, আসামীদের বার বার সময়ের আবেদন ও সাক্ষী রিকলের কারণে মামলাটির কার্যক্রম যেন এগুচ্ছিলো না। তবে, এবার মাননীয় আদালত রায়ের জন্য তারিখ ধার্য করেছেন। এবার আমরা আশা করছি সুবিচার পাবো।

নিহত আলাল মিয়ার মা শারী বেগম বলেন, আলালের খুনীরা যখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়-তখন কষ্ট পাই। যত সময় যাচ্ছিলো মনে হয়েছে হয়তো ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবো না। তবে, এবার আশাকরি, আল্লাহ আমার কথা শুনেছেন, আদালত রায়ের তারিখ ধার্য করেছেন। তিনি বলেন, ছেলের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখে যেতে পারলেই আমি খুশি।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ওই মামলা প্রায় ২৩ বছরের পুরনো একটি মামলা। ৯ বছরের একটি শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। আগামী ২২ নভেম্বর মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন আদালত। বাদী সুষ্ঠু বিচার পাবে এবং তাদের আশার প্রতিফলন ঘটবে বলে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট নওশাদ আহমদ চৌধুরী জানান, মামলাটি নিষ্পত্তির ব্যাপারে আদালত অত্যন্ত আন্তরিক। আগামী ২২ নভেম্বর রায়ের জন্য তারিখ ধার্য্য করেছেন। আশা করা যাচ্ছে ওইদিনই দীর্ঘ দিনের পুরনো মামলাটির রায় ঘোষণা হবে।