নিজস্ব প্রতিবেদক::
দিন দিন চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। শনিবার ৮৮ জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে, মারা যান আরো ২ জন। এছাড়াও বাড়ছে সর্দি-জ্বরের প্রকোপ। কিন্তু তবুও কেউ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।
এদিকে- নগরীর প্রতিটি এলাকায় রয়েছে মানুষের ভীড়। যানবাহনেও অনেকে মাস্ক পড়ছেন না।
বিশেষ করে নগরীর বন্দরবাজার, সুবিদবাজার, আম্বরখানা, সুবহানীঘাট ও কালীঘাটের অবস্থা ছিল শোচনীয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকারি বিধি নিষেধ দিলেও এই দুই বাজারে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। কাঁচাবাজার ও কালীঘাট এলাকায় সারাদিন মানুষের গিজগিজ থাকছেই। স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে ওই বাজারে করোনা সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
একই অবস্থা সিলেটের কালীঘাটের পাইকারি আড়তের। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষে গিজগিজ থাকে ওই এলাকা। নিত্যপণ্য সামগ্রীর বাজার হলেও স্বাস্থ্যবিধি পালনে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে তারা মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মাস্ক ব্যবহারে শ্রমিকদের এবং পাইকারি পণ্য নিতে আসা ব্যবসায়ীদের অনীহা দেখা যাচ্ছে।
কাজিরবাজার মাছের আড়তেও একই অবস্থা বিদ্যমান। দক্ষিণ সুরমার ফল মার্কেটের অবস্থাও আরও ভয়াবহ। এসব আড়তে বাইরে থেকে প্রতিদিন ভোর থেকে শত শত পণ্যবাহী গাড়ি ঢুকে। বিশেষ করে রাজশাহী, খুলনা, কুষ্টিয়া সহ ওইসব এলাকা থেকে পণ্য নিয়ে সিলেটে আসা হয়। উত্তরাঞ্চলের ওইসব জেলা ইতিমধ্যে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কবলে পড়েছে। এসব এলাকা থেকে পণ্য নিয়ে আসা হলেও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনার ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। পাইকারি বাজারে এই যখন পরিস্থিতি সিলেটের স্থানীয় কাঁচাবাজারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই।
নগরীর মদিনা মার্কেটে রাস্তার উপরে রীতিমতো বাজার বসছে। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পালনের কোনো লক্ষণই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। নগরীর ব্যস্ততম আম্বরখানা পয়েন্টে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। পয়েন্টের পাশেই কাঁচাবাজার। মাস্ক ছিল না অনেকেরই মুখে। শাহী ঈদগাহ, শিবগঞ্জ, নগরীর লালবাজার, লালদীঘিরপাড়ে একই অবস্থা ছিল নিত্যপণ্যের বাজার করতে আসা মানুষের কারণে ভিড় লেগে গিয়েছিল ওই এলাকায়।
বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হিমাংশু লাল রায় শনিবার (১৫ জানুয়ারি) বেলা দেড়টায় জানিয়েছেন, শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ২ জন মারা গেছেন। তারা দুইজনেই সিলেট জেলার বাসিন্দা। এছাড়া সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলাতে গত ২৪ ঘন্টায় সরকারি হিসেবে সর্বমোট ৮২১ জনের করোনা পরীক্ষা হয়। যাদের মধ্যে ৮৮ জনের কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়েছে। শনাক্তের হার শতকরা ১০.৭২ ভাগ।
ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন, করোনাকালের সূচনালগ্ন অর্থাৎ ২০২০ সালের ১০ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত বিভাগের ৪ জেলায় সর্বমোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫৫৪৪ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫০১০৮ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন ১১৮৬ জন।
এদিকে সিলেট বিভাগে সরকারি হিসেবে অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে সিলেটে ২৩ জনের কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে। অন্যজেলাতে অ্যান্টিজেন টেস্টে কারোর করোনা ধরা পড়েনি। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলে বর্তমানে ১০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে সন্দেহজনক ৬ জন, পজিটিভ ৪ জন। এছাড়া বিভাগের ৪ জেলাতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত সর্বমোট ২৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এদের মধ্যে সিলেট জেলাতে ১৯ জন, সুনামগঞ্জে ৩ জন, হবিগঞ্জে ১ ও মৌলভীবাজারে ২ জন। করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।