নিজস্ব প্রতিবেদক::
সিলেটের মোট জনসংখ্যার অন্তত ৪৫ শতাংশ অসংক্রামক ব্যাধিতে ভুগছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। একই তথ্য জানিয়েছেন সিলেটের ডায়াবেটিক সমিতির নেতারাও।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, সিলেটে ধীরে ধীরে ডায়াবেটিসের রোগী বাড়ছে। রোগী বাড়ার পেছনে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের ভাত খাওয়া এবং কায়িক পরিশ্রম না করাই প্রধান কারণ। এর বাইরে কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ, দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি পেতে দুশ্চিন্তাসহ নানা ধরনের চাপের কারণেও অনেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের পরিচালক হিমাদ্রী লাল রায় বলেন, সিলেটে ডায়াবেটিস রোগী কী পরিমাণ আছে, এর সঠিক পরিসংখ্যান কোথাও নেই। তবে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ ভাগ ডায়াবেটিসে ভুগছে। জীবনযাপনে পরিবর্তন, খাদ্য গ্রহণে সংযমী হওয়া, ফাস্ট ফুড বর্জন এবং দৈহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে এর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এসব ক্ষেত্রে অনীহাই অসংক্রামক ব্যাধিতে ভোগার মূল কারণ।
সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, বিভাগের সব কটি উপজেলায় ‘হাইপারটেনশন কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’ নামে সরকারের একটি বিশেষ কার্যক্রম চালু আছে। এতে রোগনির্ণয় ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি ওষুধ দিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার সুযোগ-সুবিধা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। এতে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে আসছে। সেই সঙ্গে প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়াবেটিসের চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছে। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও, পাঁচ থেকে ছয় বছর আগেও ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা এখনকার চেয়ে অন্তত ৫০ শতাংশ কম ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ১২ থেকে ১৩ শতাংশই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর বাইরে আরও ১৪ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিসের লক্ষণ আছে, তারা মূলত প্রাক্-ডায়াবেটিসে ভুগছে।
অন্যদিকে সিলেটে ডায়াবেটিক সমিতি পরিচালিত সিলেট ডায়াবেটিক হাসপাতালে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ জন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিচ্ছে। অবশ্য কোভিড-১৯ শুরুর আগে এই সংখ্যা ছিল ৫০০ থেকে ৬০০। এসব রোগীর বাইরে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন হাসপাতালেও ডায়াবেটিস আক্রান্তরা চিকিৎসা নিচ্ছে।
১৯৮৪ সালে গঠিত সিলেট ডায়াবেটিক সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক লোকমান আহমদ বলেন, সিলেট ডায়াবেটিক হাসপাতালের বহির্বিভাগে এখন প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ জন চিকিৎসা নিচ্ছে। এর বাইরে ৩০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আগে গড়ে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৬৫ জন রোগী চিকিৎসা নিত। এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে ডায়াবেটিসের রোগী নির্ধারণ করতে হাসপাতালের উদ্যোগে প্রায়ই নগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিনা মূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। কারণ, কারা আক্রান্ত, এটা জানা না থাকলে তো প্রতিরোধ সম্ভব নয়।
নগরের সোনারপাড়ার বাসিন্দা আয়েশা আক্তার নামের এক গৃহিণী ১২ বছর ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তিনি বলেন, যখন তার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তখন থেকেই তিনি এক চিকিৎসকের কাছ থেকে নিয়মিত পরামর্শ নিচ্ছেন এবং নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করছেন। তাই তার ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে আছে। সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায়েই সিলেটে ডায়াবেটিসের চিকিৎসাব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বাংলাদেশে অন্যান্য জেলার চেয়ে সিলেটে ডায়াবেটিসের হার অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন এবং কায়িক পরিশ্রমের অভাবে সিলেট অঞ্চলে ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। তবে প্রাক্-ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। এর চিকিৎসা করলে ডায়াবেটিস হয় না। তাই ডায়াবেটিসের লক্ষণ আছে কি না, এর পরীক্ষা করা দরকার। মূলত সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।