• ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৪ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

যে কারণে সিলেট জেলা বিএনপির কাউন্সিল স্থগিত

admin
প্রকাশিত মার্চ ২০, ২০২২
যে কারণে সিলেট জেলা বিএনপির কাউন্সিল স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:: 

সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল আগামীকাল সোমবার (২১ মার্চ) হওয়ার কথা ছিলো। সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে সোমবার সকালে সম্মেলন ও দুপুর থেকে কাউন্সিলরদের ভোট প্রদানের সময় নির্ধারণ করেছিলেন নেতৃবৃন্দ।

কিন্তু হঠাৎ করে আগের দিন (আজ রোববার) দুপুর ১টার দিকে কেন্দ্রের নির্দেশে এই সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, ভোটার তালিকা সময়মতো প্রকাশ করতে না পারায় স্থগিত করা হয়েছে সম্মেলন ও কাউন্সিল।

তবে আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে জেলার সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে, আগামীকালের সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত করা হলেও পরবর্তী তারিখ এখনও কেন্দ্র থেকে জানানো হয়নি।

সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা মোতাবেক সম্মেলন সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। কেননা, বিশাল এই সম্মেলনে ভোটার তালিকা আগের রাতে করা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রশ্ন তুলেছেন। সবকিছু সুন্দরভাবে সম্পন্ন হলেও ভোটার তালিকা কিছুটা সময় নিয়ে করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন, তাতে স্বচ্ছতার বিষয়টি আরো সুন্দর হতো। যে কারণে নির্বাচনের আগের রাতে কাউন্সিলরদের ভোটার তালিকা প্রস্তুতের বিষয়টি তিনি মেনে নিতে পারেননি। ফলে আরেকটু সময় নিয়ে সম্মেলন করা উচিত মনে করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তার পরামর্শক মোতাবেক সম্মেলন পেছানো হয়েছে। হয়তো আজকেই চিঠির মাধ্যমে পরবর্তী দিন তারিখ জানিয়ে দেওয়া হতে পারে।

তবে মামলা সংক্রান্ত কারণে সম্মেলন পেছানো হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ওসমানীনগর বিএনপির কমিটি গঠন আদালতে গড়ালেও বিচারক দরখাস্তটি মামলা আকারে না নিয়ে ৭এপ্রিল শোনানীর জন্য রেখেছেন। মামলা নেওয়া যাবে কিনা, ওইদিন ধার্য্য করা হবে।

তিনি বলেন, অন্তত এক সপ্তাহ আগে ভোটার তালিকা চুড়ান্ত করে কেন্দ্রে পৌছাতে হয়। সেটা আমরা একদিন আগে আজ রোববার ফাইনাল করেছি। নির্বাচনের আগের দিন হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও এটা মেনে নিতে পারেননি।

সম্মেলনের অনুমতি পাওয়া প্রসঙ্গে ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, সম্মেলন বিশাল পরিসরে হবে। যেখানে ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভাসহ ১৮টি ইউনিটে কাউন্সিলর সংখ্যাই ১ হাজার ৮১৮ জন। তাদের জন্য সিলেট আলীয়া মাদরাসা মাঠ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মানুসারে জানিয়েছি। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সভা-সমাবেশ করার এখতিয়ার আছে। এখানে শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা যাতে বিঘ্ন না ঘটে এ জন্য প্রশাসনকে জানানো। আমরা তাই করেছি।

কেন্দ্রীয় নেতাদের সম্মেলনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে কেন্দ্র ও জেলার আহ্বায়ক কামরুল হাসান জায়গীরদারের পাল্টাপাল্টি চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, একজন মানুষের কাধে অনেক দায়িত্ব। তিনি অভারলোডেড। না বুঝার কারণে এটা হয়েছে। এরপর লিখিতভাবে থেকে বিষয়টি খোলাসা করা হয়েছে। গঠনতদন্তের ৫৪ পৃষ্ঠার ১৫ নং ধারা বিশেষ বিধান এক নেতা এক পদ। কোনো ব্যক্তি একই সঙ্গে একাধিক ইউনিটের সভাপতি, সম্পাদক নির্বাচিত হতে পারবেন না। আর প্রার্থী হতে গেলে তাকে আগের পদ ছাড়তে হবে। এছাড়া কেন্দ্রের কোনো কর্মকর্তা অন্য কোনো কমিটির নির্বাচন করতে পারবেন না, নির্বাচিতও হতে পারবেন না। তবে অনির্বার্য কারণ বশত; দলের চেয়ারম্যান চাইলে সাময়িকভাবে তাকে পদে নিতে পারেন।

সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, সম্মেলনকে ঘিরে আমরা ৭টি সাব কমিটিও করেছিলাম। পূণরায় তারিখ হওয়ার পর এই কমিটিগুলো কাজ করবে।

প্রসঙ্গত, সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন সোমবার (২১ মার্চ) সিলেট নগরের আলীয়া মাদরাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সম্মেলনের অনুমতি চেয়ে দল থেকে প্রশাসনে চিঠি দেওয়া হলেও পুলিশ প্রশাসন থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি। ফলে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে অনেকটা বেকায়দায় পড়তে হয় বিএনপিকে। শনিবার সম্মেলনস্থল প্রস্তুতে পুলিশ বাধা দেয়। পরে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর হস্তক্ষেপে পুলিশ ফিরে আসে।

এ অবস্থায় মধ্যরাতে নগরের শিবগঞ্জে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হাসান তালুকদারের বাসায় নেতাকর্মীরা জড়ো হন। মধ্যরাতে আবাসিক এলাকায় এতো লোকের জমায়েত হওয়াতে আপত্তি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। জনতার অভিযোগে পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌছালে সেখানেও পুলিশকে বুঝিয়ে বিদায় করেন মেয়র। এরপর মধ্যরাতে অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামানের নেতৃত্বে সামাজিক সংগঠন সলিডারিটি মুভমেন্ট ও স্টুডেন্ট ইউনিটির সদস্যরা গিয়ে আপত্তি জানান। খবর পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর শওকত আমিন তৌহিদও ঘটনাস্থলে পৌছেন এবং মধ্যরাতে আবাসিক এলাকায় বিএনপির জমায়েত না করতে পদক্ষেপ নিতে বলেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত করা হয়েছে।