• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কমিটি বাণিজ্য: ছাত্রদলের সিলেট বিভাগীয় টিমের বিরুদ্ধে তদন্ত

admin
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০
কমিটি বাণিজ্য: ছাত্রদলের সিলেট বিভাগীয় টিমের বিরুদ্ধে তদন্ত

একুশে নিউজ :: জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে আরও শক্তিশালী করতে তৃণমূল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয় বিএনপি। সে অনুসারে সারা দেশের থানা, পৌরসভা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শাখাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠনে ১০ সাংগঠনিক বিভাগের জন্য ১০টি টিম গঠন করে সংগঠনটি।

এরই মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শাখা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে পদ দেয়ার বিনিময়ে ‘অনৈতিক লেনদেন ও পক্ষপাতিত্ব’ এবং ‘স্থানীয় নেতাদের তালিকা পাল্টে দেয়ার’ অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি টিমের বিরুদ্ধে।

যে কারণে ত্যাগী, পরীক্ষিত ও মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীরা অনেক জায়গায় পদ পাননি। এ নিয়ে তৃণমূলে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট ও কুমিল্লা বিভাগীয় টিমের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় টিমকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

সূত্র মতে, সাংগঠনিক কার্যক্রমের গতি বাড়াতে ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে জানুয়ারি মাসে এসব বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়।

টিমের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট জেলাগুলো সফর করে স্থানীয় নেতাদের সহায়তায় বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন শুরু করে। সংগঠনটির এ পদক্ষেপ শুরুতে প্রশংসিতও হয়।

সূত্র জানায়, কুমিল্লা ও ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগের টিমপ্রধান ছাত্রদলের সহসভাপতি মোক্তাদির হোসেন তরু। তার বিরুদ্ধে অবৈধ লেনদেন ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে।

এর একটি অডিও তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হলে কুমিল্লা বিভাগের পুনর্গঠন স্থগিত করে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

একই অভিযোগে সিলেট বিভাগীয় টিমের বিরুদ্ধে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিনকে।

তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল কথা বলতে রাজি হননি। আর আমিনুর রহমান বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না।

তবে তদন্তের কথা অস্বীকার করে ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, কোনো বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়নি।

বিভাগীয় টিমের কারও কারও বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু তা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করেছি। তিনি বলেন, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় কমিটি সবচেয়ে ভালো কাজ করছে।

আশা করছি, আগামী মাসের শেষ নাগাদ সারা দেশের সব থানা, পৌর ও কলেজ শাখার কমিটি গঠনের কাজ শেষ হবে।

ছাত্রদলের কয়েকজন সহসভাপতি বলেন, যাদের কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারাই যদি অনৈতিকতার আশ্রয় নেয় তাহলে সংগঠনকে কীভাবে গতিশীল করা যাবে।

কমিটি গঠন করতে জেলা সফরে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তরা সবচেয়ে ভালো হোটেলে থাকতে চান, যার ভাড়া ও খাওয়া-দাওয়ার ভার বহন করতে হয় স্থানীয় নেতাদের।

সে কারণেও তারা কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন। অথচ থাকা-খাওয়ার ব্যয়ভার বহন করছে বিএনপি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এ-ও নির্দেশনা রয়েছে, জেলা সফরে গেলে কারও বাসায় বা অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্তরা যেতে পারবেন না।

তারা আরও জানান, সেসব অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে বেশিরভাগ টাকার বিনিময়ে পদ দেয়ার। আবার কারও বিরুদ্ধে আইফোনসহ বিভিন্ন গিফট নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ ও তদন্তের বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষার নির্দেশনা রয়েছে। তবে ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগীয় টিমের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত গুরুতর কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

সংগঠনটির দফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনার মধ্যেও গত দু’মাসে সারা দেশে ২৪৯টি (থানা, পৌর ও কলেজ) কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও পূর্ব ছাত্রদলের অধীনস্থ ৬২টি (ওয়ার্ড) কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নানা অভিযোগ : সিলেট মহানগরের ১৫টি ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণার একদিন পর সেখানকার মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অভিযোগের ভিত্তিতে তা স্থগিত করা হয়। এখানে টিমপ্রধান ছাত্রদলের সহসভাপতি ওমর ফারুক কাওসার।

এ ঘটনার তদন্ত চলছে। এই টিমের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে কমিটি গঠনেও স্থানীয় বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন। সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির মেয়াদ থাকা অবস্থায় তা ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

এরপর আবার ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ককে সরিয়েও দেয়া হয়েছে। হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন ইউনিটের ১৯টি কমিটি দেয়ার পর বিভাগীয় টিমের বিরুদ্ধে সেখানে ঝাড়ু মিছিলও হয়েছে।

চট্টগ্রামে মহানগর পুনর্গঠনের কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। এ বিভাগের টিমপ্রধান ছাত্রদল সহসভাপতি মুসাব্বির সাফি। চট্টগ্রাম উত্তরের জেলা কমিটির এক বৈঠকে সেখানকার শীর্ষ এক নেতাকে বিপক্ষের একটি গ্রুপ মারধর করে।

সেখানে সাফি উপস্থিত থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন। এরপর মহানগর কমিটি গঠনে সমন্বয়ক হিসেবে সিনিয়র সহসভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়।

শ্রাবণ তৎপরতা শুরু করলে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ আসতে শুরু করে। যার কারণে মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি এখন পর্যন্ত গঠন করা যায়নি।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের কমিটি গঠনে ঢাকা বিভাগের (খ) টিমপ্রধান সহসভাপতি পার্থ দেব মণ্ডলের বিরুদ্ধে অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ করা হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের কাছে।

এ ছাড়া অযোগ্যদের দিয়ে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কমিটি গঠন হচ্ছে বলে ছাত্রদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদল।

তারা দাবি করেছে, ছাত্রদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিমের একজন সদস্য (কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক) রাঙ্গুনিয়া উপজেলা, পৌরসভা ও কলেজ ছাত্রদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় ত্যাগী ও যোগ্যতার বিবেচনা না করেই অযোগ্যদের সামনে রেখে ব্যক্তিগত ইচ্ছে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

একই অভিযোগ দিয়েছেন মীরসরাই উপজেলা ও পৌর বিএনপি নেতারা। তারেক রহমানকে অভিযোগ দিয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা।

লন্ডনে থাকা এক নেতা তার সঙ্গে দেখা করে ওই চিঠি পৌঁছে দেন। এতে তারা বলেন, হাটহাজারী উপজেলা, পৌরসভা ও কলেজ ছাত্রদল কমিটিতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলালের সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম জনির যোগসাজশে কমিটির চূড়ান্ত তালিকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।

বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে যারা নেতৃত্ব দিয়ে মামলা-হামলার শিকার হয়ে বারবার জেলে বন্দি হয়েছিলেন তাদের অবমূল্যায়ন করে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

মীর হেলালের পছন্দের লোক কমিটিতে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চরম হতাশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল যুগান্তরকে বলেন, হাটহাজারীর কমিটিগুলোয় যাদের নাম রয়েছে প্রত্যেকটি ছেলে বহু মামলা-হামলার শিকার।

তারা ত্যাগী, পরিশ্রমী ও মেধাবী। আমি ২৪ ঘণ্টা দলের জন্য কাজ করি। আমার বিরুদ্ধে বিদেশে থেকে একজন নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। চিঠিতে যাদের স্বাক্ষর রয়েছে তারা হাটহাজারীর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা নন।-যুগান্তর