স্পোর্টস ডেস্ক::
৫২৫ মিনিট। ৩৫৫ বল। অপরাজিত ১৭৫ রান। মুশফিকুর রহিম লিখলেন এক মহাকাব্য। লিটন সৌন্দর্যের স্তূতিতে আড়ালে পড়ে থাকল তার সংগ্রাম। তাতে মুশফিকের কীই-বা আসে-যায়!
দ্বিতীয় দিনের একটা ঘটনাই বলা যাক। লাঞ্চের সময় তখন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ৯ উইকেট নেই, আম্পায়াররা একটু অপেক্ষা করলেন অলআউট হওয়ার। মুশফিক একটু পরই মাটিতে শুয়ে পড়লেন। আগের দিন ৩৬১ মিনিট মাঠে ছিলেন।
ক্লান্তি পেয়ে বসেছিল তাকে, বোঝাই যাচ্ছিল। কিন্তু মুশফিক উঠে দাঁড়ালেন। সংগ্রামীদের দাঁড়াতে হয় বলেই? পরের ওভারেই দুই রানের জন্য প্রাণপনে দৌড়ে প্রমাণ দিলেন তার।
তাকে নিয়ে এমনিতেই সমালোচনায় ঘিরে ছিল চারপাশ। ভুল সময়ে শট খেলেন বলে অনেক আলোচনা। অভিমানে বলেই বসেছিলেন, ‘বাংলাদেশে অভিজ্ঞতার দাম নেই। ’ তা থাকুক- আর না থাকুক। মুশফিক নিজের কাজটা ঠিকঠাক করেছেন।
২৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দল ধুঁকছিল। লিটনকে নিয়ে হাল ধরলেন। দলকে উদ্ধার করে করলেন সেঞ্চুরিও। লিটন শিল্পী, তার শটে রঙ-তুলির আঁচড় থাকে। প্রশংসা, মুগ্ধতা, বিস্ময়ের সবটা ঘিরেও থাকলেন তিনি। মুশফিক পড়ে থাকলেন আড়ালে।
লিটনের সেঞ্চুরির পর দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলেন মুশফিক, সতীর্থের প্রতি তার নিজের মুগ্ধতাও লুকাননি। কিন্তু মুশফিকের মহাকাব্যের বন্দনাটা হলো না ঠিকঠাক। ধৈর্য, লড়াই, সংগ্রাম কিংবা প্রিয় শট বিসর্জন দেওয়া; কী ছিল না এই ইনিংসে?
সময়ের হিসেবে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় দীর্ঘতম ইনিংস খেলেছেন। ব্যাক ফুট পাঞ্চ, কাভার ড্রাইভ, সুইপ; খেললেন চোখ ধাধানো সব শট। রিভার্স সুইপ? সেটাও খেলেছেন সেঞ্চুরি পেরিয়ে। প্রথম দিনে লিটনকে নিয়ে শুরু হওয়া লড়াইটা চালিয়েছেন এবাদত-খালেদ-তাইজুলদের নিয়ে। পুরো ইনিংসে কখনোই জীবন পাননি।
সব মিলিয়েই দর্শকরা সাক্ষী হয়েছেন দুর্দান্ত এক ইনিংসের। টেস্টে দেশের অন্যতম সেরা? বলা যেতে পারে সহজেই। বিপর্যয়ের পর সেরা ইনিংস? তর্ক হতে পারে এ নিয়ে। ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারলে ইনিংস পরিপূর্ণতা পেত। কিন্তু সঙ্গীর অভাবে আটকে থাকলেন ২৫ রান দূরে; তাতে মুশফিকের ইনিংসের মাহাত্ম্য কি এতটুকু কমে?
ঢাকা টেস্টে লিটন যদি শিল্পী হন; মুশফিক তাহলে ক্যানভাসের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রকৃতি। শিল্পীর ক্যানভাস রাঙাতে যার প্রয়োজনটা বড্ড বেশি। একটু নড়াচড়া করলেই যে বিপত্তি, শিল্পীর কাজটা হয়ে যায় কঠিন!