নিজস্ব প্রতিবেদক::
মিনহাজ আহমদ। সিলেটের গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বরের বাসিন্দা। বন্যায় তার আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তাই বন্যার্ত মানুষের জন্য নৌকা দিয়ে কিছু ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যান ৩০জুন বৃহস্পতিবার।ত্রাণ সামগ্রী বিতরণকালে এক পর্যায়ে পানির তৃষ্ণা পায়।চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে।কিন্তু চাইলেও তা পান করতে পারছেন না।কারণ তা সুপেয় পানি না।পরে অন্য একটি বাড়ি থেকে পানি সংগ্রহ করে পান করেন।শুধু মিনহাজ নয় সিলেটের হাজার হাজার মানুষ এভাবে বিশুদ্ধ পানির অভাবে তা পাণ করতে পারছেন না।
উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারি বর্ষণে সিলেট বিভাগের সবকটি জেলায় বন্যায় কবলিত হলেও দফায় দফায় কবলিত হয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলের মানুষ। ফলে জনদুর্ভোগ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।বিশেষ করে সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে।গত১৫ জুন থেকে ভারি বর্ষণ বন্যায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলোতে পানি উঠায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে সিলেট নগরাীর মানুষও পানি সংকটে পড়েন। আর বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোর টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট হয়ে ওঠে।বন্যার শুরুতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী সংগটন ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
জানা যায়, বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না বন্যা দুর্গতরা। সুপেয় পানি না পাওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই বানের পানি পান করছেন মানুষ। ফলে পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
ভাদেশ্বর ইউনিয়নের হাওয়রতলা গ্রামের আনোয়ার মিয়া বলেন, প্রায় ১৩ দিন ধরে একটি ট্যাক্টরে মাচা তৈরি করে পরিবারে নিয়ে থাকছেন।চারদিকে পানি আর পানি। ঘরের ভেতরওে পানি। এর মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানির পাশাপাশি ব্যবহার্য পানির ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
বিশ্বনাথের সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা করিম মিয়া বলেন, বন্যায় গ্রামে সবার বাড়িতে পারি উঠে। হাটু সমান পানি থাকায় ঘরের মটরপানির নিচে চলে যায়।তাই খাবার পানির সংকট দেখা দেয়।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, বিভাগে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেওয়া ৪৯ হাজার ১১০টি নলকূপ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।এরমধ্যে সিলেট জেলায় ২০ হাজার ২৩৪টি, সুনামগঞ্জে ২৭ হাজার, হবিগঞ্জে ১ হাজার ৫৯১ টি এবং মৌলভীবাজারে ২৮৫টি। এর বাইরে ব্যক্তি কেন্দ্রিক ৫গুন নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপের অন্তত ৫০ হাজার বন্যায় প্লাবিত হতে পারে।
বিভাগের বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ২৬ লাখ ৬ হাজার ৪০০ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।
এরমধ্যে সিলেট জেলায় ১১ লাখ ৭৮ হাজার, সুনামগঞ্জে ১৩ লাখ, হবিগঞ্জে ১ লাখ ১ হাজার এবং মৌলভীবাজারে ৮৫ হাজার। এরবাইরেও ১৩টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সরবরাহ করা হয়। সিলেট ও সুনামগঞ্জে ৫টি করে। ১টি নগরীতে ২টি রিজার্ভে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি মজুত রাখতে ১২ হাজার ১৫১টি জারিকেন বিতরণ করা হয়। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ৭ হাজার ৭১টি, সুনামগঞ্জে ৫ হাজার, হবিগঞ্জে ১১২ ও মৌলভীবাজারে ৮০টি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ৯৯ টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ৩৫ হাজার নলকূপের মধ্যে ২৭ হাজার বন্যার পানিতে তলিয়েছে। আর বেসরকারি প্রায় ২ হাজার নলকূপ প্লাবিত হয়েছে।এছাড়া ৭টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দেওয়া হয়েছে। ১টি প্লান্ট থেকে অন্তত ৫ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা যায়।বিশেষ করে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জে এবং নগর এলাকায় একটি করে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দেওয়া হয়েছে। আর ২টি রিজার্ভে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যেসব এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেছে আমরা সেসব এলাকার মানুষকে সচেতন করছি।যাতে পানি হ্রাসের সাথে সাথে প্রাণ না করে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রাণ করার জন্য বলা হয়েছে।