• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের রপ্তানি বন্ধ, সিলেটে বাড়ছে পেঁয়াজ দাম

admin
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৯, ২০২৩
ভারতের রপ্তানি বন্ধ, সিলেটে বাড়ছে পেঁয়াজ দাম

একুশে নিউজ ডেস্ক : ভারত রপ্তানি মূল্য বেঁধে দেওয়ায় দীর্ঘদিন বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দর চড়া। ঘোরাফেরা করেছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। কিন্তু বন্ধুরাষ্ট্রটি গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত তারা কোনো পেঁয়াজ রপ্তানি করবে না। এরই প্রভাবে মসলা পণ্যটির দাম হুহু করে বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার মাত্র পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ২০০ টাকা ছুঁয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।

বৃহস্পতিবার ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি করবে না। এর আগে গত ২৯ অক্টোবর ভারত প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৮০০ ডলার নির্ধারণ করে দেয়, যা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলা হয়েছিল। তার আগেই দেশটি পেঁয়াজ একেবারে রপ্তানি বন্ধ করে দিল। যদিও কোনো দেশের সরকার অনুরোধ করলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রপ্তানির সুযোগ দিতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টনের বেশি। গত অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ টনের মতো। তবে ক্ষেত থেকে তুলে সংরক্ষণ করা পর্যন্ত প্রায় ৪০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। ফলে প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ লাখ টন আমদানি করতে হয়, যার ৯০ শতাংশের বেশি আসে ভারত থেকে। এ জন্য ভারত পেঁয়াজের ওপর কোনো ধরনের খড়্গ দিলে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশে প্রভাব পড়ে। যেমনটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে এ দেশে রেকর্ড ৩০০ টাকা ছুঁয়েছিল কেজি।

সরেজমিন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ১০৬ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। ঘণ্টাখানেক পরে বাজারে খবর ছড়িয়ে পড়ে, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার খবর। আমদানিকারকদের কাছে ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত হতেই ব্যবসায়ীদের চোখেমুখে মেলে বিজয়ের হাসি। দুপুর ১২টার দিকে এক লাফে ১০ টাকা বেড়ে হয় ১২০। এর পর এক রকম অশ্ববেগে ছুটেছে দাম। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বেড়েছে পণ্যটির দাম। এক পর্যায়ে সন্ধ্যা ৫টায় প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১৬০ টাকায়।

একই চিত্র দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও। সকালে ১৩৬-১৪০ টাকা থাকলেও সন্ধ্যায় বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি। সেই হিসাবে ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টায় কেজিতে বেড়েছে ৬০ টাকা। দাম যত বাড়ছে, খুচরা-পাইকারি প্রতিটি দোকানে ভিড় বাড়ছে ক্রেতার। এমনও দেখা গেছে, যিনি দুই কেজি কিনেছেন, ঘণ্টাখানেক পর ৫ কেজি কিনতে এসেছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ আগের দরে কেনা পেঁয়াজ বেচেছেন ১৮০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের মতোই ছিল রাজধানীর শ্যামবাজার ও হিলি স্থলবন্দরের দৃশ্য। শ্যামবাজারের কয়েক ব্যবসায়ী জানান, ভারত রপ্তানি বন্ধ করলে দেশে এর বড় প্রভাব পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ মোট আমদানির অন্তত ৯০ শতাংশ পেঁয়াজ আসে ভারত থেকেই।

বিকেল ৪টার দিকে ১৭০ টাকা কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেন কারওয়ান বাজারের ৪২ নম্বর আড়তের ব্যবসায়ী ইদ্রিস মিয়া। ঠিক এক ঘণ্টা পর তিনিই হাঁকলেন ২০০ টাকা। দামের এমন লাফের বিষয়ে তিনি সমকালকে বলেন, ‘কেনা দরই ১৮০ টাকার বেশি। মোকামেও পেঁয়াজ সংকট। খবর নিয়েছি, কারা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। আমার কাছে যা ছিল সব প্রায় শেষ। ভারত থেকে না এলে দাম তো কালকে আরও বাড়বে।’

গতকাল বিকেলে শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি পাইকারি পর্যায়ে ১৪০ টাকার আশপাশে বিক্রি হয়। দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।

পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মাজেদ বলেন, কয়েক দিন ধরেই পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে আরেকটু বেড়েছে। তবে বাজারে দেশি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।

হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ সমকালকে বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছি আমরা। আগের এলসি করা পেঁয়াজ তারা সরবরাহ করবে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।